Mapogo Lion

দল তাড়িয়ে দিলে তৈরি হয় ‘মাফিয়া গ্যাং’, ছয় ‘ভাই’ মিলে খুন করে প্রায় ১০০ শত্রু! ভয় ধরাবে মাপোগো সিংহদের কাহিনি

মনে করা হয়, সাভানা অঞ্চলে মাপোগো সিংহদের একমেবাদ্বিতীয়ম হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ ছিল তাদের পারস্পরিক বন্ধন। ভাইদের মতো একে অপরের পাশে থাকত ছয় সিংহ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৫ ১০:০৭
Share:
০১ ১৮

সিংহ পৃথিবীর অন্যতম হিংস্র প্রাণী। পশুরাজও বলা হয় এই ভয়ঙ্কর চতুষ্পদকে। সিংহকে ভয় পান না, পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক সিংহ হিসাবে পরিচিত মাপোগো সিংহদের বিষয়ে অনেকেই জানেন না। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার জাতীয় উদ্যানের স্যাবি স্যান্ডস অঞ্চলকে নিরঙ্কুশ আধিপত্যের সঙ্গে শাসন করেছিল ছ’টি পুরুষ সিংহের সেই ‘গ্যাং’।

০২ ১৮

আফ্রিকার বনাঞ্চলে বসবাসকারী মাপোগো সিংহদের শক্তি এবং শিকারের কৌশলের কথা শুনে গল্প মনে হলেও প্রায় এক দশক ধরে, মাপোগো সিংহদের ভয়ে তাদের আশপাশে অন্য কোনও প্রাণী ঘেঁষত না। এমনকি, স্যাবি স্যান্ডস অঞ্চলের অন্য সিংহদের কাছেও তারা ছিল ত্রাস।

Advertisement
০৩ ১৮

ওই বনাঞ্চলের সকল প্রাণীই জানত, মাপোগো সিংহদের কবলে পড়লে পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর, মৃত্যুও অনিবার্য। কিন্তু কী ভাবে জোট বাধে ছ’টি পুরুষ সিংহের সেই দল?

০৪ ১৮

বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাপোগো সিংহদের গল্পের সূত্রপাত ওই ছ’টি তরুণ পুরুষকে তাদের দল ‘স্পার্টা প্রাইড’ থেকে জোর করে তাড়িয়ে দেওয়া থেকে। ‘স্পার্টা প্রাইড’ পরিচিত ‘আইরফিল্ড প্রাইড’ নামেও (প্রাইড বলতে একটি নির্দিষ্ট সিংহদলকে বোঝায়, যেখানে বেশ কয়েকটি সিংহ-সিংহী এবং সিংহশাবক জোট বেঁধে থাকে)।

০৫ ১৮

বনের নিয়ম অনুযায়ী, তরুণ পুরুষ সিংহদের প্রায়শই তাদের ‘প্রাইড’ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হত। কিন্তু ওই ছ’টি পুরুষ সিংহ আলাদা আলাদা রাস্তায় যাওয়ার পরিবর্তে, একজোট হয়ে থাকতে শুরু করে। সেই বন্ধন শক্তিশালী সিংহজোটের ভিত্তি হয়ে ওঠে, যা সাভানা অঞ্চলে তার আগে কখনও দেখা যায়নি।

০৬ ১৮

শুরুতে ওই ছ’টি পুরুষ সিংহের জীবন সহজ ছিল না। দল ছেড়ে বেরিয়ে খাবারের জন্য অন্যান্য সিংহের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হত তাদের। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। আরও শক্তিশালী এবং নির্ভীক হয়ে ওঠে তারা। ২০০৬ সালের মধ্যে বহিরাগত থেকে ওই বনাঞ্চলের প্রকৃত রাজা হয়ে ওঠে তারা।

০৭ ১৮

‘এ টু জ়েড অ্যানিম্যালস ডট কম’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাপোগো সিংহেরা যখন সাবি স্যান্ডসের অন্যতম শক্তিশালী এবং সুপরিচিত সিংহগোষ্ঠী ‘ওটাওয়া প্রাইড’-এর মুখোমুখি হয়, তখনই তাদের আধিপত্যের কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে।

০৮ ১৮

‘ওটাওয়া প্রাইড’-এর সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষ সিংহকে মেরে ফেলে মাপোগো সিংহেরা। বাকিরা সেই ভয়াবহতা দেখে প্রাণ নিয়ে পালায়। তবে মাপোগো সিংহেরা ছেড়ে দেয়নি। পরবর্তী প্রজন্মের কেউ যাতে ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ করতে না পারে, তার জন্য ‘ওটাওয়া প্রাইড’-এর সব শাবককে হত্যা করে তারা।

০৯ ১৮

সেই থেকে মাপোগো সিংহদের আধিপত্য বিস্তার শুরু। কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এর পর স্যাবি স্যান্ডসের প্রায় এক লক্ষ ৭০ হাজার একর এলাকা দখল করে নেয় তারা। নিরঙ্কুশ ক্ষমতার আসে তাদের হাতে।

১০ ১৮

পরবর্তী কয়েক বছর ধরে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীদের নিশ্চিহ্ন করে আরও বহু এলাকা নিজেদের দখলে আনে ওই ছয় পুরুষ সিংহ। সাভানায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে তারা।

১১ ১৮

মনে করা হয়, সাভানা অঞ্চলে মাপোগো সিংহদের একমেবাদ্বিতীয়ম হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ ছিল তাদের পারস্পরিক বন্ধন। ভাইদের মতো একে অপরের পাশে থাকত ছয় সিংহ। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকলেও একজোট হলে তাদের হারানো ছিল অসাধ্য।

১২ ১৮

ওই ছয় সিংহের মধ্যে ‘মাখুলু’ ছিল সবচেয়ে বড় এবং বয়স্ক। স্বাভাবিক ভাবেই দলের নেতা ছিল সে। দলকে সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখত সে। কালো কেশরযুক্ত বিশাল আকৃতির শক্তিশালী মাখুলুকে দেখে সমীহ করত বাকিরা।

১৩ ১৮

‘প্রিটি বয়’ নামে অন্য এক পুরুষ সিংহ পরিচিত ছিল তার সুন্দর চেহারা এবং ঘন কেশরের জন্য। শক্তিশালী যোদ্ধা হিসাবেও নাম ছিল তার। মাপোগো সিংহদের মধ্যে ‘মিস্টার টি’ নামে অন্য এক সিংহকে ‘শয়তান’ বলা হত। কারণ সে ছিল সবচেয়ে আক্রমণাত্মক এবং ভয়ঙ্কর।

১৪ ১৮

‘স্কার’ বা ‘স্কিউ স্পাইন’ নামে অন্য এক সিংহের শরীরের এক পাশে একটি বড় দাগ ছিল। তাই তার ও রকম নাম দেওয়া হয়। ‘রাস্টা’ নামে একটি সিংহ আবার পরিচিত ছিল তার ভয়ঙ্কর কেশর এবং বিদ্রোহী স্বভাবের জন্য। মাপোগো সিংহদের শেষ এবং ছ’নম্বর সদস্য ছিল ‘কিঙ্কি টেল’। নির্ভীক সেই সিংহের লেজের কাছে একটি বিশেষ গিঁট ছিল। শক্তিশালী যোদ্ধা হিসাবেও পরিচিতি ছিল তার।

১৫ ১৮

মনে করা হয়, ওই ছ’জন পুরুষ সিংহ মিলে প্রায় ১০০ সিংহকে নিধন করেছিল। এ ছাড়াও জিরাফ, মহিষ, এমনকি জলহস্তীর মতো বৃহৎ প্রাণীও শিকার করা তাদের কাছে ছিল জলভাত। সাভানার বেশির ভাগ সিংহই তাদের আক্রমণ করার সাহস করত না।

১৬ ১৮

অন্য শক্তিশালী রাজাদের মতো, মাপোগো সিংহদের রাজত্বও চিরস্থায়ী হয়নি। সমস্যার শুরু হয় যখন দলের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য দুই ‘ভাই’ মাখুলু এবং দলের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সিংহ ‘মিস্টার টি’ লড়াই শুরু করে।

১৭ ১৮

এর পর ২০১২ সালে মাপোগো সিংহদের সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়। ‘মিস্টার টি’কে মেরে ফেলে প্রতিদ্বন্দ্বী সিংহগোষ্ঠী সেলাটিস। ‘কিঙ্কি টেল’ও মারা যায়। ‘স্কার’ এবং ‘রাস্টা’ রাতারাতি অদৃশ্য হয়ে যায়।

১৮ ১৮

২০১৩ সালে মাপোগো সিংহদের মধ্যে কেবল ‘মাখুলু’ এবং ‘প্রিটি বয়’ থেকে গিয়েছিল। বৃদ্ধ এবং ক্লান্ত ওই দুই সিংহও কালের নিয়মে হারিয়ে যায়। মাপোগোর যুগ শেষ হয়। যদিও তাদের গল্প থেকে গিয়েছে শক্তি এবং সাহসিকতার নিদর্শন হিসাবে।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement