যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে বাবার হয়ে ভোট চাওয়া বা ওই নির্বাচনেরই আবহে তিনি রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন এমন জল্পনা তৈরি হওয়া ছাড়া খবরে বিশেষ দেখা যায় না তাঁকে। রাজনীতির অলিন্দেও ঘোরাফেরা বিশেষ নেই। অন্য দিকে, বাবা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। দেশের অন্যতম চর্চিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও বটে।
কথা হচ্ছে বিহারের সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পুত্র নিশান্ত কুমারের। বিহার বিধানসভা ভোটে এনডিএ ঝড়ে উড়ে গিয়েছে বিরোধীরা। সোমবার সকালে নিয়ম অনুযায়ী রাজভবনে গিয়ে ইস্তফাপত্র দিয়ে এসেছেন নীতীশ। মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়ারও সুপারিশ করেছেন।
মনে করা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহেই নতুন সরকার শপথ নেবে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মগধভূমের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ফিরতে চলেছেন নীতীশই। যদিও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কে হচ্ছেন, তা এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়নি এনডিএ-র তরফে।
এই আবহে এ প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে, ৭৪ বছর বয়সি বর্ষীয়ান নেতা নীতীশের রাজনৈতিক উত্তরসূরি কে হতে চলেছেন? ভবিষ্যতে কাকে দলের ভার তুলে দেবেন তিনি? কারণ, বাবার পথে চলার মতো কোনও লক্ষণ তাঁর একমাত্র সন্তান নিশান্তের মধ্যে এখনও দেখতে পাননি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
তবে এই লক্ষণ খুঁজে না পাওয়ার কারণও রয়েছে অনেক। ১৯৭৫ সালের ২০ জুলাই বিহারে জন্ম নিশান্তের। বাবা নীতীশ কুমার, মা মঞ্জু সিন্হা। নীতীশ-মঞ্জুর একমাত্র সন্তান নিশান্ত। ২০০৭ সালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় মঞ্জুর।
নিশান্ত তাঁর ছোটবেলা কাটিয়েছেন বিহারেই। পটনার সেন্ট ক্যারেন্স স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। পরে মসূরীর মানব ভারতী ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হন।
স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে ঝাড়খণ্ডের মেসরার বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-তে (বিআইটি) ভর্তি হন নিশান্ত। সেখান থেকে সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন।
ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জনের পরে বহুজাতিক সংস্থায় চাকরিতে যোগ দেন নিশান্ত। তবে রাজনীতিতে প্রবেশ করার কোনও ইচ্ছা তিনি প্রকাশ করেননি।
২০১৭ সালে বাবার দলে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে নিশান্ত জানিয়েছিলেন, রাজনীতিতে প্রবেশের কোনও ইচ্ছা তাঁর নেই। বরং তিনি বেছে নিতে চান আধ্যাত্মিক পথকে। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাজনীতিতে আমার কোনও আগ্রহ নেই, এই ক্ষেত্র সম্পর্কে আমার তেমন জ্ঞানও নেই। আমার প্রথম প্রেম আধ্যাত্মিকতা এবং এখনও পর্যন্ত আমি আধ্যাত্মিকতার পথেই এগিয়ে যাচ্ছি।’’
৪৯ বছরের নিশান্ত অবিবাহিত। সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিশান্তের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩.৬১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১.৬৩ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং ১.৯৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এ সবই তিনি পেয়েছিলেন তাঁর মায়ের কাছ থেকে।
এই বছরের জানুয়ারিতে বখতিয়ারপুরে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন নিশান্ত। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে জনসাধারণের উদ্দেশে বাবা নীতীশ এবং জেডিইউকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
দলের বর্ষীয়ান নেতাদের সঙ্গে দোল অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন নিশান্ত। জুনে বখতিয়ারপুরে অন্য একটি অনুষ্ঠানেও বাবার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
এমনও শোনা যাচ্ছিল, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গেও জড়িয়েছেন নিশান্ত। এর পরই নিশান্তের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা আরও জোরালো হয়। মনে করা হচ্ছিল, বিধানসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ আসনে লড়তে পারেন তিনি।
কিন্তু এনডিএ বিহারের আসনগুলিতে প্রার্থী ঘোষণা করার পর দেখা যায়, সেখানে নাম নেই নিশান্তের। ফলে আবার জল্পনা তৈরি হয়। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তা হলে কি সত্যিই কোনও দিন রাজনীতির পথে পা রাখবেন না নিশান্ত?
একই সঙ্গে এ-ও প্রশ্ন ওঠে, নীতীশের রাজনৈতিক উত্তরসূরি কে হবেন তা নিয়েও। কারণ, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের একমাত্র সন্তান নিশান্ত। ফলে দলের দায়িত্ব ভবিষ্যতে নীতীশ কার হাতে তুলে দেবেন তা নিয়ে এখন থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে জেডিইউ-এর বিভিন্ন স্তরে।
বিজেপি শিবির মনে করছে, নতুন সরকারের অর্ধেক মেয়াদ পার হলে মুখ্যমন্ত্রী পদে বদল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিজেপির কোনও নেতা প্রথম বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। জেডিইউ-কে সঙ্গে রাখতে প্রয়োজনে নীতীশের পুত্র নিশান্ত কুমারকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে।
কিন্তু নিশান্ত এখনও সক্রিয় রাজনীতিতে না এলেও জেডিইউ-এর অধিকাংশ নেতা অবশ্য তাঁকেই নীতীশের উত্তরসূরি হিসাবে দেখতে চান। কিন্তু নিশান্ত কি আধ্যাত্মিকতার পথ ছেড়ে আসবেন রাজনীতিতে? সময়ই উত্তর দেবে সে প্রশ্নের।