Balochistan Crisis

একসঙ্গে হামলা ১৭ জায়গায়! ‘বালোচ বিদ্রোহের নতুন ভোরে’ ঘুম উড়েছে পাকিস্তানের, কী এই ‘অপারেশন বাম’?

মঙ্গলবার রাতে বালোচিস্তানের পাঞ্জগুর, সুরাব, কেচ এবং খারান এলাকার কমপক্ষে ১৭টি জায়গায় ওই হামলা চালানো হয়েছিল। হামলার কারণে একাধিক সরকারি ভবন এবং সেনা চেকপোস্ট ধ্বংস হয়েছে বলে খবর। যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাকি বিঘ্নিত হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫৮
Share:
০১ ২২

বিদ্রোহের আগুনে পুড়ছে বালোচিস্তান। মুহুর্মুহু আক্রমণ শানিয়ে পাকিস্তানের সরকার এবং সেনাকে নাকানিচোবানি খাওয়াচ্ছে বালোচ বিদ্রোহীরা। মঙ্গলবার রাতেও হামলা চলেছে বালোচিস্তানে। একাধিক জেলায় সরকারি ভবন এবং সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালানো হয়। তছনছ হয়ে যায় সেগুলি।

০২ ২২

হামলাটিকে গত কয়েক বছরের মধ্যে বালোচিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের উপর হওয়া সবচেয়ে ব্যাপক এবং সংঘটিত আক্রমণের মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হচ্ছে। ওই হামলার দায় ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে ‘বালোচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট’ বা বিএলএফ নামের বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

Advertisement
০৩ ২২

বিএলএফ হল আফগানিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র স্বাধীনতাপন্থী বালোচ গোষ্ঠী। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অভিযোগ, দিনের পর দিন বালোচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে পাকিস্তান। জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আর সেই দাবিতেই বালোচিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

০৪ ২২

এর মধ্যেই মঙ্গলবার রাত থেকে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে নতুন করে লড়াই শুরু করেছে বিএলএফ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের দশকব্যাপী লড়াইয়ে নতুন অধ্যায় শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, নতুন সেই অভিযানের নাম ‘অপারেশন বাম’ (স্থানীয় ভাষায় এর অর্থ ভোর)।

০৫ ২২

মঙ্গলবার রাতে বালোচিস্তানের পাঞ্জগুর, সুরাব, কেচ এবং খারান এলাকার কমপক্ষে ১৭টি জায়গায় ওই হামলা চালানো হয়। হামলার কারণে একাধিক সরকারি ভবন এবং সেনা চেকপোস্ট ধ্বংস হয়েছে বলে খবর। যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাকি বিঘ্নিত হয়েছে।

০৬ ২২

পাক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাতে একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে হাজ়রা, মাহলাব, ফাতিমা, নাজ গুল এবং মহম্মদ ইব্রাহিম এলাকার বাসিন্দারা। আহতদের চিকিৎসার জন্য তুরবত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

০৭ ২২

এ ছাড়াও আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হামলা চালায় বিএলএফ বিদ্রোহীরা। পাকিস্তানি সরকার এখনও ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ হিসাব দিতে না পারলেও স্থানীয় সূত্রে খবর, ক্ষতির পরিমাণ বেশ বড়।

০৮ ২২

এক বিবৃতিতে বিএলএফ মুখপাত্র মেজর গহরাম বালোচ অভিযানটিকে ‘বালোচ জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের একটি নতুন ভোর’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। জোর দিয়ে জানিয়েছেন, মাকরান উপকূল থেকে কোহ-ই-সুলেমান পর্বতমালা পর্যন্ত একাধিক পাক ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়।

০৯ ২২

গহরামের কথায়, ‘‘প্রতিরোধ একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। অপারেশন বাম-এর উদ্দেশ্য হল এটি প্রমাণ করা যে বালোচ যোদ্ধারা বিশাল ভূখণ্ড জুড়ে বৃহৎ পরিসরে অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম।’’

১০ ২২

বিএলএফ মুখপাত্র এ-ও দাবি করেছেন, পাক সেনাকে নাস্তানাবুদ করতে খুব সাবধানে অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যদিও বিশদে আর কিছু জানাননি তিনি। বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়েছে, অভিযান এখনও চলছে এবং তা শেষ হওয়ার পরেই ফলাফল সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ করা হবে।

১১ ২২

অন্য দিকে, হামলার পরেই সক্রিয় হয়েছে পাক সেনা। বালোচ বিদ্রোহীদের ঘাঁটি রয়েছে এমন জায়গাগুলিতে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। কেচ এবং পাঞ্জগুরের কিছু অংশে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

১২ ২২

‘অপারেশন বাম’ আবারও বালোচিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছে। ধীরে ধীরে কি গোটা এলাকার উপর থেকে রাশ আলগা হচ্ছে ইসলামাবাদের? এই সমস্ত প্রশ্নে ইতিমধ্যেই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।

১৩ ২২

গত কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানি কর্তৃত্বকে প্রশ্ন করে বালোচিস্তানে ধারাবাহিক ভাবে হামলা চালাচ্ছে বালোচ বিদ্রোহীরা। চলতি বছরের ৩০ মে বালোচিস্তানের সুরাব শহর কব্জা করার কথা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গোটা দুনিয়াকে জানিয়ে দেয় স্বাধীনতাপন্থী বিদ্রোহী বালোচদের অন্য এক সক্রিয় সংগঠন বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি বা বিএলএ। এর পরই সমাজমাধ্যমে সেখানকার একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে।

১৪ ২২

তাতে সুরাবের বেশ কয়েকটি সরকারি ভবন এবং থানা থেকে ঘন কালো ধোঁয়া বার হতে দেখা গিয়েছিল। এ ছাড়া বিএলএ যোদ্ধাদের হাতিয়ার হাতে শহরের মধ্যে টহল দেওয়ার ছবিও প্রকাশ্যে এসেছিল। যদিও ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।

১৫ ২২

বিএলএ-র জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিদ্রোহীরা সুরাব শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছিল। ব্যাঙ্ক, থানা এবং সরকারি ভবন কব্জা করেছিল তারা। এলাকা পুনর্দখলে পাক ফৌজ যাতে সেখানে ঢুকতে না পারে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিকেও আটকেছিল বিদ্রোহীরা।

১৬ ২২

বালোচিস্তানের ওই এলাকার কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে বিএলএ-র দাবি সত্যি হলে ইসলামাবাদের রক্তচাপ যে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।

১৭ ২২

গত মাসে বালোচ বিদ্রোহীদের নিয়ে তৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। মুক্তিযোদ্ধাদের পিষে মারতে বাহিনীর খুব বেশি সময় লাগবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন। এতে ফল হয় হিতে বিপরীত।

১৮ ২২

গত ১৪ মে স্বাধীন ‘রিপাবলিক অফ বালোচিস্তান’ গঠনের কথা ঘোষণা করেন সেখানকার বিদ্রোহীরা। ইসলামাবাদের থেকে স্বাধীনতা পেতে ভারতের কাছে সরাসরি সাহায্য চাইতেও দ্বিধা করেনি ওই সশস্ত্র গোষ্ঠী।

১৯ ২২

এ বছরের ৯ মে বালোচিস্তানের কালাত জেলার মাঙ্গোচর এলাকা দখলের কথা জানিয়েছিল বিএলএ। ঠিক তার পরের দিন এই নিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেন বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির মুখপাত্র জিয়ান্দ বালোচ।

২০ ২২

জিয়ান্দ বলেছিলেন, ‘‘কালাতের ৩৯টি জায়গায় পাক ফৌজের উপর হামলা চালিয়েছে বিএলএ-র ফতেহ্ স্কোয়াড। স্থানীয় থানা, ডাকঘর, সরকারি ভবন এবং সেনা কনভয়কে নিশানা করা হয়েছে।’’ মাঙ্গোচরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি তাঁদের কব্জায় রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন জিয়ান্দ।

২১ ২২

চলতি বছরের মার্চ মাসে বিএলএফ, বালোচ রিপাবলিকান গার্ডস (বিআরজি) এবং সিন্ধুপ্রদেশে সক্রিয় বিদ্রোহী সংগঠন ‘সিন্ধুদেশ রেভলিউশনারি আর্মি’ (এসআরএ)-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন যৌথমঞ্চ গড়েছে বিএলএ। বস্তুত পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম বার ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে বালোচদের তিনটি প্রধান জনগোষ্ঠী মারি, মেঙ্গল এবং বুগতি প্রভাবিত সংগঠনগুলি। বেড়েছে আক্রমণের ধারও।

২২ ২২

এর মধ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন বাম’ চালু করেছে বিএলএফ। বিদ্রোহী গোষ্ঠীর স্পষ্ট বার্তা, ইসলামাবাদকে নাকানিচোবানি খাইয়ে বালোচিস্তানকে পাকিস্তানের দখল থেকে বার করে আনতে বদ্ধপরিকর তারা।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement