Ahmed Sharif Chaudhry

লাদেনের ঘনিষ্ঠ, ‘জ্বিনে’ বিশ্বাসী, কালো তালিকাভুক্ত পাকিস্তানের সেই পরমাণু বিজ্ঞানীর পুত্র এখন পাক সেনার মুখপাত্র

বিতর্কিত পাক বিজ্ঞানী মাহমুদ পাকিস্তানের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে পাকিস্তানের পারমাণবিক পরিকাঠামোর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৫ ০৭:৫৭
Share:
০১ ২০

যদি বলা হয় আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন, পরমাণু অস্ত্র এবং ‘জ্বিন’— এই তিন বিষয়কে এক সূত্রে গাঁথতে, তা হলে অবাক হবেন না। এই তিনের যোগসূত্র রয়েছে। বহন করছেন পাকিস্তানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমদ শরিফ চৌধরি।

০২ ২০

আহমদ পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর (ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস বা আইএসপিআর)-এর ডিরেক্টর জেনারেল। তিনি পাক সেনার মুখপাত্র। ২০২২ সালে তাঁকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির।

Advertisement
০৩ ২০

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে একাধিক বার সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছেন আহমদ।

০৪ ২০

তবে অন্য এক পরিচয়ও রয়েছে আহমদের। সরকারি সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, তিনি পাক পরমাণু বিজ্ঞানী সুলতান বসিরুদ্দিন মাহমুদের পুত্র। সেই মাহমুদ, এক সময় দিনরাত যাঁর গুণগান গাইত পাকিস্তানের সরকার। সেই মাহমুদ, যাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী কালে আল কায়দা-সহ একাধিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ উঠেছিল।

০৫ ২০

বিতর্কিত পাক বিজ্ঞানী মাহমুদের জন্ম অবিভক্ত ভারতের অমৃতসরে। পড়াশোনা ব্রিটেনে। পাকিস্তানের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনে কর্মরত ছিলেন তিনি। দীর্ঘ কর্মজীবনে পাকিস্তানের পারমাণবিক পরিকাঠামোর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মাহমুদ।

০৬ ২০

পাকিস্তানে পরমাণুকেন্দ্র নির্মাণ এবং ইউরেনিয়াম থেকে প্লুটোনিয়ামভিত্তিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় চুল্লির নকশা তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল মাহমুদের।

০৭ ২০

কিন্তু অবসর-পরবর্তী সময়ে মাহমুদের কর্মকাণ্ড পশ্চিমি গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

০৮ ২০

২০০০ সালের গোড়ার দিকে, ‘উম্মা তামির-ই-নৌ’ (ইউটিএন) নামে এক সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন মাহমুদ। মাহমুদের দাবি ছিল, তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে একটি অসরকারি সংস্থা হিসাবে কাজ করবে ইউটিএন। কন্দহরে স্কুল এবং পরিকাঠামো নির্মাণ করবে বলে জানিয়েছিল তারা।

০৯ ২০

কিন্তু আমেরিকার গোয়েন্দারা পরে আবিষ্কার করেন যে, সংগঠনটিকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে মাত্র। মৌলবাদী সেই সংগঠনের আড়ালে চলছে জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ। মাহমুদের বিরুদ্ধে ‘উম্মা তামির-ই-নৌ’-এর জন্য তহবিল তৈরিরও অভিযোগ উঠেছিল।

১০ ২০

রাষ্ট্রপুঞ্জের নথি অনুযায়ী, আমেরিকায় ৯/১১ হামলার ঠিক আগে ২০০১ সালের অগস্টে ওসামা বিন লাদেন এবং আয়মান আল-জাওয়াহিরির সঙ্গে দেখা করেছিলেন মাহমুদ এবং তাঁর সহকর্মী চৌধরি আব্দুল মাজিদ। যদিও তাঁদের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র প্রযুক্তি হস্তান্তরের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

১১ ২০

তবুও তাঁদের মধ্যে বৈঠকের অভিযোগ ওঠার পর উদ্বেগ প্রকাশ করে ওয়াশিংটন। পাকিস্তান সরকারই মাহমুদকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।

১২ ২০

রাষ্ট্রপুঞ্জের বিবৃতি অনুযায়ী, ‘‘ওসামা বিন লাদেন এবং তালিবানকে রাসায়নিক, জৈবিক এবং পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেছিল ইউটিএন। আফগানিস্তান সফরের সময় লাদেন এবং আল-কায়েদা নেতাদের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন মাহমুদ। সেই সময় পারমাণবিক, রাসায়নিক এবং জৈবিক অস্ত্র নিয়ে আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে।’’

১৩ ২০

ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল, ‘‘২০০১ সালে তালিবান নেতা মোল্লা ওমর ওরফে মহম্মদ ওমর গোলাম নবির সঙ্গেও দেখা করেছিলেন মাহমুদ। ওসামা বিন লাদেনের এক জন সহযোগী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, মাহমুদের কাছে পরমাণু অস্ত্র তৈরির উপাদান রয়েছে এবং অস্ত্র তৈরিতে কী ভাবে সেগুলি ব্যবহার করতে হয় তা জানাতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং পরমাণু অস্ত্রের প্রভাব সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেছিলেন মাহমুদ।’’

১৪ ২০

আল কায়দার তৎকালীন প্রধান লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিযোগে মাহমুদকে ২০০১ সালে গ্রেফতার করেছিল পাকিস্তান। দাবি, মাহমুদ অভিযোগ স্বীকারও করেছিলেন। কিন্তু পরে তাঁকে মুক্তি দেয় পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই।

১৫ ২০

আইএসআই এ-ও দাবি করে যে, স্বাধীন ভাবে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার জন্য প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব রয়েছে মাহমুদের। কিন্তু তার পর থেকেই মাহমুদকে কালো তালিকাভুক্ত করে আমেরিকার ট্রেজ়ারি দফতর।

১৬ ২০

প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফের সরকার মাহমুদকে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ প্রদান করে। কিন্তু পরবর্তী কালে মাহমুদই শরিফ সরকারের কট্টর সমালোচক হয়ে ওঠেন।

১৭ ২০

বিজ্ঞান এবং ধর্মের যোগসূত্র টেনে কয়েকটি বই লিখেছেন মাহমুদ। তার মধ্যে অন্যতম হল— ‘মেকানিক্স অফ দ্য ডুম্‌সডে’, ‘লাইফ অ্যান্ড ডেথ’। মাহমুদের বৈজ্ঞানিক লেখায় জ্বিন (ইসলামিক এবং প্রাক্‌-ইসলামিক বিশ্বাসে থাকা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী এক অতিপ্রাকৃত জীব)-এরও উল্লেখ রয়েছে। মাহমুদের মতে, পৃথিবীর জ্বালানি সঙ্কট সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে জ্বিন।

১৮ ২০

তদন্তকারী সাংবাদিক (ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট) ডগলাস ফ্রান্টজ এবং ক্যাথেরিন কলিন্সের লেখা ‘দ্য ম্যান ফ্রম পাকিস্তান’ বই অনুযায়ী, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগারকে সম্পদ হিসাবে নয়, বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্মিলিত সম্পত্তি হিসাবে দেখেছিলেন মাহমুদ।

১৯ ২০

মাহমুদ নাকি বিশ্বাস করতেন যে, পরমাণু অস্ত্র অন্য ইসলামি দেশগুলির সঙ্গেও ভাগ করে নেওয়া উচিত। মাহমুদের বয়স এখন ৮৫। তিনি ইসলামাবাদে থাকেন।

২০ ২০

পাকিস্তানের সেই বিতর্কিত বিজ্ঞানী মাহমুদেরই পুত্র তথা পাক সেনার মুখপাত্র হলেন আহমদ শরিফ চৌধরি। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর অফিসার হিসাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আহমদ পাক সেনার বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা গবেষণার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement