Pakistan Oil Reserve

ট্রাম্পকে ‘তৈলমর্দন’ করে তেলভান্ডারের স্বপ্ন বিক্রি! কিন্তু ‘তরল সোনা’ কি আদৌ আছে পাকিস্তানের মাটিতে? কী বলছে রিপোর্ট?

তেল থাকা নিয়ে পাকিস্তান দু’চোখে স্বপ্নের নগরী বুনলেও সেই তেল এখনও খুঁজে বার করতে পারেনি ইসলামাবাদ। তেলের ভান্ডার থাকা নিয়ে পাকিস্তানের জিগির তোলার সূত্রপাত ২০১৮ সাল থেকে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৫ ১২:৫৪
Share:
০১ ২৪

পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলার কথা ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, পাকিস্তানে থাকা ‘বিশাল তৈলভান্ডার’-এর উন্নতির জন্য হাত মিলিয়ে কাজ করবে আমেরিকা। একই সঙ্গে নয়াদিল্লিকে খোঁচা দিয়ে ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন, একদিন ভারতকেও তেল বিক্রি করতে পারে পাকিস্তান।

০২ ২৪

কিন্তু সত্যিই কি পাকিস্তানে লুকিয়ে আছে খনিজ তেলের বিশাল ভান্ডার? এই নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। আবার বিশেষজ্ঞদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, যদি সত্যিই পাকিস্তানে খনিজ তেলের ভান্ডার থেকে থাকে, তা হলে কেন নিজেদের নুইয়ে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এত দিন তা ব্যবহার করেনি ইসলামাবাদ?

Advertisement
০৩ ২৪

অতীতে খনিজ তেল থাকার দাবিকে কেন্দ্র করে বার বার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের সরকার বার বার দাবি করেছে, পাকিস্তানের মাটির তলায় লুকিয়ে রয়েছে ‘তরল সোনা’র ভান্ডার। শুধু তা খুঁজে বার করা বাকি।

০৪ ২৪

ভারত থেকে রফতানি হওয়া পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কয়েক ঘণ্টা পরেই পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করার কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। পাকিস্তানের ‘তেলের ভান্ডার’-এর উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করার কথাও ঘোষণা করেন।

০৫ ২৪

ট্রাম্পের নিজস্ব সমাজমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ সে কথা জানিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘‘কে জানে হয়তো পাকিস্তান একদিন ভারতকেও তেল বিক্রি করবে।’’

০৬ ২৪

তবে তেল থাকা নিয়ে পাকিস্তান দু’চোখে স্বপ্নের নগরী বুনলেও সেই তেল এখনও খুঁজে বার করা যায়নি। তেলের ভান্ডার থাকা নিয়ে পাকিস্তানের জিগির তোলার সূত্রপাত ২০১৮ সাল থেকে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি তুলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন।

০৭ ২৪

সেই সময় পাক জনতাও আনন্দে উদ্বেল হয়ে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, সে দেশে তেল ও জ্বালানির সঙ্কট কাটতে চলেছে। তবে প্রচুর ঢাকঢোল পিটিয়ে করাচির উপকূলে খনন চালিয়েও কোনও তেলের ভান্ডার খুঁজে পাওয়া যায়নি সে সময়। সে দেশের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকও জানিয়ে দিয়েছিল যে, তেলের ভান্ডারের খোঁজ পাওয়া যায়নি পাকিস্তানে।

০৮ ২৪

এর পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের তেলের ভান্ডার হদিস মিলেছে বলে জিগির তুলেছিল শাহবাজ় শরিফের সরকার। পাক সরকার এবং সংবাদমাধ্যমগুলি দাবি তুলেছিল, সে দেশে খনিজ তেলের এমন এক ভান্ডারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যা তাদের ধসে পড়া অর্থনীতিকে একধাক্কায় চাঙ্গা করে দেবে।

০৯ ২৪

পাক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডন’-এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সেই ‘বিশাল ভান্ডার’-এর খোঁজ মিলেছে পাকিস্তানের আঞ্চলিক সমুদ্রসীমায়। সেটিকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ খনিজ তেলের ভান্ডার বলেও দাবি করা হয়েছিল পাক সরকারের তরফে।

১০ ২৪

পাক সরকারের তরফে এই খনিজ ভান্ডার থেকে যে বিপুল অর্থ উপার্জন হওয়ার কথা ছিল, তাকে গালভরা নামও দিয়েছিল ইসলামাবাদ—‘ব্লু ওয়াটার ইকনমি’। তেল ও গ্যাসের উপস্থিতি যাচাই করার জন্য বন্ধুপ্রতিম দেশের সহযোগিতায় তিন বছরের একটি পরিকল্পনাও করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল।

১১ ২৪

পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান মিললে তা আর্থিক সঙ্কটে থাকা দেশটির ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারবে বলে ধুয়ো তোলা হলেও, বাস্তবে তা কতটা সম্ভব সে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সরকারের অন্দরের কাজ করা একাধিক কর্তা।

১২ ২৪

গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের এক জন উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, সরকার আশাবাদী হলেও ১০০ শতাংশ নিশ্চয়তা নেই যে, বিপুল তেলের সন্ধান মিলবে। হয়েওছিল তাই।

১৩ ২৪

এক্সনমোবিল, ইএনআই, পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এবং অয়েল অ্যান্ড গ্যাস ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড পাকিস্তান সরকারের দেখানো জায়গায় ৫,৫০০ মিটারের বেশি খনন করেও তেল বা গ্যাসের কোনও মজুত খুঁজে পায়নি। খননকাজও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৪ ২৪

তেলের হদিস না পেয়ে তেল খনন এবং উত্তোলনের জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের থেকে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। ২০১৮ সালে একই কায়দায় প্রায় একই পরিমাণ বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করেছিলেন ইমরান খানও। তবে সেই প্রয়াস ফলপ্রসূ হয়নি।

১৫ ২৪

তবে কি সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে এ বারও? বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, তৈলভান্ডার থাকার সেই ‘স্বপ্ন’ এ বার ট্রাম্পকে বিক্রি করে দিয়েছে ইসলামাবাদ। সেই ‘স্বপ্ন’, যা বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব নয়। অন্যথায়, প্রতি লিটার পেট্রলের জন্য ২৭২ টাকা খরচ করতে হত না পাকিস্তানের আমজনতাকে। অন্তত তেমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

১৬ ২৪

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তানের লুকোনো প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি বেশ কিছু বিনিয়োগকারী আগ্রহ দেখাতে শুরু করলেও প্রকৃতপক্ষে সেই প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও বিপণনের প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি।

১৭ ২৪

শুধুমাত্র খনিজ তেলের অনুসন্ধানের জন্যই বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন। যদি অনুসন্ধানে ভাল ফল পাওয়া যায়, তা হলে মজুত উত্তোলন ও জ্বালানি উৎপাদনের় কূপ এবং পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য আরও বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।

১৮ ২৪

বর্তমানে খনিজ তেল মজুতে শীর্ষে রয়েছে ভেনেজ়ুয়েলা। দেশটিতে প্রায় ৩৪০ কোটি ব্যারেল তেল মজুত রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেলের খনি রয়েছে ভেনেজ়ুয়েলাতেই। এ ছাড়া সৌদি আরব, ইরান, কানাডা এবং ইরাকেও প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামের খনি রয়েছে।

১৯ ২৪

বিশ্বের পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ দেশগুলির তালিকায় ৫২তম স্থানে রয়েছে পাকিস্তান। ২০১৬ সালের প্রামাণ্য নথি অনুযায়ী, পাকিস্তানে মজুত থাকা খনিজ তেলের পরিমাণ আনুমানিক ৩৫.৩৫ কোটি ব্যারেল, যা বিশ্বব্যাপী তেল মজুতের মাত্র ০.০২১ শতাংশ।

২০ ২৪

এর মধ্যেও বেশির ভাগ তেল মজুত রয়েছে পাকিস্তানের ‘গলার কাঁটা’ বালোচিস্তানে। সেই বালোচিস্তান যা ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ হিসাব বলছে, পাকিস্তান যদি অন্য দেশ থেকে তেল আমদানি না করে তা হলে দু’বছরেরও কম সময়ের মধ্যে পাকিস্তানে মজুত তেল ফুরোবে।

২১ ২৪

অন্য দিকে, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল ব্যবহারকারী দেশ ভারতে মজুত রয়েছে প্রায় ৪৯০ কোটি ব্যারেল তেল, যা বিশ্বের মোট তেল মজুতের প্রায় ০.২৯%।

২২ ২৪

কিন্তু তার পরেও কেন পাকিস্তানের ‘তেল-ফাঁদে’ পা দিলেন ‘বিচক্ষণী’ ট্রাম্প? বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার প্রয়োজন বাণিজ্যের চেয়েও বেশি কৌশলগত। আর সে কারণেই তেল পাওয়া যাবে কি না, তা ভাল ভাবে বিচার না করেই পাকিস্তানের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়েছেন ট্রাম্প।

২৩ ২৪

আবার অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পকে অনেক দিন ধরেই ‘তৈলমর্দন’ করছেন পাকিস্তান। আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সমর্থনেও আওয়াজ তুলেছিল পাকিস্তান। আর তাতেই মন গলেছে ট্রাম্পের। অর্থাৎ, ট্রাম্পকে রীতিমতো ‘তেল মালিশ’ করে খনিজ তেলের ভান্ডারের স্বপ্ন বিক্রি করেছে ইসলামাবাদ।

২৪ ২৪

এর আগে তেল নিয়ে পাকিস্তান শেষ খবরে এসেছিল জুলাই মাসে। সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, জুলাই মাসে পেট্রলের দাম লিটারপ্রতি ৫.৩৬ পাকিস্তানি রুপি বৃদ্ধি করে ২৭২.১৫ পাকিস্তানি রুপি করে পাক সরকার। তা নিয়ে পাকিস্তানে ব্যাপক জনরোষও তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তানের আমজনতা প্রশ্ন তুলেছিল, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমে যাওয়া সত্ত্বেও জ্বালানির দাম কেন বৃদ্ধি করছে শরিফ সরকার?

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement