সুন্দরী রুশ গুপ্তচর। রাশিয়ার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আরও ১০ সহযোগী-সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বন্দি হয়েছিলেন। পরবর্তী কালে বন্দি-গুপ্তচর বিনিময়ের সময় রাশিয়ায় ফেরেন। তার পর থেকে অন্তরালেই ছিলেন। নতুন দায়িত্ব পেয়ে আবার খবরে উঠে এলেন রাশিয়ার সেই রক্তিম কেশের সুন্দরী গুপ্তচর অ্যানা চ্যাপম্যান। তিনি পরিচিত ‘ব্ল্যাক উইডো’ নামেও।
দুঁদে গুপ্তচর অ্যানাকে মস্কোর নবপ্রতিষ্ঠিত গোয়েন্দা জাদুঘরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
৪৩ বছর বয়সি অ্যানা বর্তমানে রাশিয়ার নাগরিক। আগে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব ছিল তাঁর। রাশিয়ার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ২০১০ সালে নিউ ইয়র্কে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) গ্রেফতার করে তাঁকে।
কিছু দিন আমেরিকার জেলে কাটিয়েছিলেন অ্যানা। পরে ‘হাই প্রোফাইল’ গুপ্তচর বিনিময় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মস্কোয় নির্বাসিত করা হয় তাঁকে।
তার পর থেকে লোকচক্ষুর আড়ালেই দিন কাটাচ্ছিলেন অ্যানা। সে ভাবে খবরে উঠে আসেননি তিনি। এখন তাঁকে মস্কোর নবনির্মিত ওই গোয়েন্দা জাদুঘরের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
মস্কোর গোর্কি পার্কের কাছে তৈরি জাদুঘরটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শীর্ষ গোপন পরিষেবা এসভিআর। জাদুঘরটি রাশিয়ার গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাস এবং কৃতিত্ব তুলে ধরবে। সম্মান জানাবে রাশিয়ান গুপ্তচরদের উত্তরাধিকারকে।
বর্তমানে গোয়েন্দা জাদুঘরটির দায়িত্বে রয়েছেন এসভিআর প্রধান এবং পুতিনের বিশ্বস্ত সহযোগী সের্গেই নারিশকিন। এ বার অ্যানাকেও সেই জাদুঘরের অন্যতম প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হল।
কিন্তু কে এই অ্যানা চ্যাপম্যান? রুশ গুপ্তচর হিসাবে কী ভাবেই বা উত্থান হল তাঁর? অ্যানা প্রথমে খ্যাতি অর্জন করেন লন্ডনে। অ্যানা এতটাই সুন্দরী ছিলেন যে, ব্রিটেনের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং অভিজাত মহলে তাঁর আনাগোনা লেগেই থাকত।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, লন্ডনে থাকা রুশ গুপ্তচরদের একটি নেটওয়ার্কের নজরে পড়েন তিনি। রাশিয়ার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য নিয়োগ করা হয় তাঁকে।
রাশিয়ার বেশ কয়েকটি গোপন অভিযানের অংশ ছিলেন অ্যানা। তাঁর দায়িত্ব ছিল মোহময়ী আবেদন কাজ লাগিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে প্রলুব্ধ করা এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি ও তথ্য হাতিয়ে আনা।
অ্যালেক্স চ্যাপম্যান নামে এক ব্রিটিশ যুবককে বিয়ে করে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন অ্যানা। কিন্তু তাঁর সেই বিয়ে বেশি দিন টেকেনি।
২০১০ সালে নিউ ইয়র্কে রাশিয়ার একটি স্লিপার সেলের অংশ হিসেবে এফবিআই গ্রেফতার করে অ্যানাকে। প্রায় এক দশক ধরে তদন্ত করে মার্কিন গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন, বিদেশি চরেরা নাম ভাঁড়িয়ে অবৈধ ভাবে আমেরিকায় বসবাস করছেন। এর পরেই অভিযান শুরু করে এফবিআই। গ্রেফতার হন অ্যানাও।
তবে পরে অ্যানাকে একটি বিনিময় চুক্তির অংশ হিসাবে রাশিয়ায় নির্বাসিত করা হয়েছিল। পরিবর্তে ‘ডবল এজেন্ট’ সের্গেই স্ক্রিপাল ব্রিটেনে চলে যান।
রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার পর অ্যানা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। তবে তাঁকে নিয়ে বিশেষ খবর শোনা যেত না। সম্প্রতি অ্যানা রোমানোভা নামে জনসমক্ষে ফেরেন অ্যানা। টেলিভিশন এবং সমাজমাধ্যমেও জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এর মধ্যেই রুশ গোয়েন্দা জাদুঘরের প্রধান হিসাবে অ্যানাকে নিযুক্ত করার খবর প্রকাশ্যে আসে।
ভ্লাদিমির পুতিনের একনিষ্ঠ সমর্থক অ্যানা বর্তমানে এক সন্তানের মা। তাঁর কাহিনি এতটাই জনপ্রিয় যে, রাশিয়ায় বাস্তব জীবনের ‘ব্ল্যাক উইডো’ তকমা পেয়েছেন তিনি। ‘ব্ল্যাক উইডো’ মার্ভেল কমিক্সের একটি জনপ্রিয় চরিত্র।
গত বছর অ্যানার আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়। বইটির নাম ‘বন্ডিআনা— টু রাশিয়া উইথ লাভ’। সেই বইয়ে তিনি নিজেকে ‘মহিলা জেম্স বন্ড’ হিসাবে দাবি করেছেন। পাশাপাশি অ্যানার দাবি, রূপ, চেহারা এবং আত্মবিশ্বাসের কারণে প্রভাবশালীদের বৃত্তে অনায়াসে জায়গা তৈরি করে ফেলেছিলেন তিনি।
বইয়ে অ্যানা লিখেছেন, “আমি জানতাম পুরুষদের উপর আমার প্রভাব কী। সরু কোমর, আকর্ষণীয় স্তন, রক্তিম কেশরাশি— প্রকৃতি আমাকে উদার ভাবে প্রয়োজনীয় গুণাবলি দিয়েছিল। আমি কেবল ছোট পোশাক এবং হালকা রূপটান করে প্রভাবশালীদের কাছে যেতাম। আর আমার উপস্থিতি জাদুর মতো কাজ করত।”