মাত্র ৩১ বছর বয়স। তার মধ্যেই তেলুগু সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। বলা চলে অপ্রতিরোধ্য অভিনেত্রী। কাজ করেছিলেন কন্নড়, তামিল, মালয়ালম এবং হিন্দি ছবিতেও। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা প্রাণ কাড়ে তাঁর। তিনি অভিনেত্রী সৌন্দর্য। আসল নাম সৌম্য সত্যনারায়ণ।
সেই দুর্ঘটনার ২১ বছর পর প্রয়াত অভিনেত্রী নতুন করে শিরোনামে। খবর, অন্ধ্রপ্রদেশের খাম্মাম জেলার জনৈক এক ব্যক্তি এডুরুগাটলা চিট্টিমাল্লু থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগকারীর দাবি, সৌন্দর্যের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। অভিনেত্রী দুর্ঘটনায় নিহত হননি। তাঁর মৃত্যুর নেপথ্যে ছিলেন দক্ষিণী সিনেমা জগতের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা মোহনবাবু।
জনৈক ওই সমাজকর্মীর অভিযোগ, মোহনবাবুর সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ বেধেছিল সৌন্দর্য এবং তাঁর ভাই অমরনাথের। অভিনেতা নাকি শামশাবাদের জলপল্লী গ্রামে সৌন্দর্য এবং তাঁর ভাইয়ের ছয় একরের একটি জমি কিনতে চেয়েছিলেন। জমি বিক্রি করতে রাজি ছিলেন না প্রয়াত অভিনেত্রী এবং অমরনাথ। তার পরেই এই বিবাদ। পরে জানা যায়, অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর ওই জমিটি অবৈধ ভাবে দখল করেন অভিনেতা।
সরকারের কাছে দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবিও তুলেছেন অভিযোগকারী। বিষয়টিতে কোনও অসঙ্গতি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার আবেদন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, মোহনবাবু তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। সে কারণে পুলিশের কাছে নিরাপত্তার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
যদিও মোহনবাবুর সঙ্গে সৌন্দর্যের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের কথা অস্বীকার করেছেন অভিনেত্রীর স্বামী জিএস রঘু। সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ‘সূর্যবংশম’ অভিনেত্রীর স্বামী বিষয়টিকে ‘ভুয়ো খবর’ বলে মন্তব্য করেছেন।
রঘু এ-ও দাবি করেছেন যে, সম্পত্তি নিয়ে মোহনবাবুর সঙ্গে সৌন্দর্যের কোনও বিবাদ ছিল না। তিনি মোহনবাবুকে ‘পরিবারের এক জন’ বলেও অভিহিত করেছেন। জানিয়েছেন, অভিনেতার সঙ্গে তাঁদের সুসস্পর্ক রয়েছে।
সংবাদমাধ্যম ‘তেলুগু৩৬০’ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় রঘু বলেন, ‘‘আমি জানাতে চাই যে, মোহনবাবু এবং আমার প্রয়াত স্ত্রী সৌন্দর্যের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের খবরটি ভিত্তিহীন। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, মোহনবাবু আমার স্ত্রীর কোনও সম্পত্তি অবৈধ ভাবে দখল করেননি। তাঁর সঙ্গে কখনওই আমাদের কোনও জমির লেনদেন হয়নি।’’ তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি মোহনবাবু।
ফলে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। একই সঙ্গে সৌন্দর্যকে নিয়ে নতুন করে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারণ, নতুন প্রজন্মের অনেকেই অভিনেত্রী সম্পর্কে বিশদ জানেন না।
সৌন্দর্যের সৌন্দর্যে মুগ্ধ ছিল তামাম দেশ। অভিনেত্রী হিসাবেও তাঁর কদর কম ছিল না। অল্প বয়সেই অমিতাভ বচ্চন, রজনীকান্ত থেকে শুরু করে মোহনলাল, নাগার্জুন— নামী অভিনেতাদের বিপরীতে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন দক্ষিণী অভিনেত্রী।
১৯৭২ সালের ১৮ জুলাই কর্নাটকের কোলার জেলার মুলাবাগিলুতে জন্ম সৌন্দর্যের। তবে তিনি বড় হন বেঙ্গালুরুতে। অভিনেত্রীর বাবা এবং মায়ের নাম কেএস সত্যনারায়ণ এবং মঞ্জুলা। সত্যনারায়ণ কন্নড় চলচ্চিত্র জগতের লেখক এবং প্রযোজক ছিলেন।
বাবা সিনেমার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সৌন্দর্য চেয়েছিলেন চিকিৎসক হতে। কিন্তু নিয়তিকে টলাবে কে? একটা সময়ের পর পড়াশোনা ছেড়ে দেন সৌন্দর্য। শেষ পর্যন্ত অভিনয় জগতেই পা রাখেন তিনি।
কন্নড় সিনেমা দিয়ে কেরিয়ার শুরু করলেন তেলুগু চলচ্চিত্র জগতেই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন সৌন্দর্য।
কৃষ্ণ, মোহনলাল, চিরঞ্জীবী, নাগার্জুন, নন্দমুরি বালকৃষ্ণ, ভেঙ্কটেশ, রম্য কৃষ্ণণ, নাগমা, রাজেন্দ্র প্রসাদ এবং জগপতি বাবু সহ দক্ষিণী চলচিত্রের এক ঝাঁক তারকার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন সৌন্দর্য। অভিনয় করেছিলেন দক্ষিণের বৈগ্রাহিক অভিনেতা রজনীকান্ত এবং বলি তারকা অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গেও। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনীত তাঁর ‘সূর্যবংশম’ ছবি দেখেননি, ভারতে এমন লোক কম।
নব্বইয়ের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় তেলেগু অভিনেত্রী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সৌন্দর্য। তাঁর অভিনীত ‘আম্মুরু’, ‘পবিত্র বন্ধম’, ‘অন্তপুরম’, ‘রাজা’, ‘দোনি সাগালি’, ‘দ্বীপা’র মতো ছবিগুলি দর্শকদের মনে বিশেষ দাগ কেটেছিল।
‘পবিত্র বন্ধম’ ছবির জন্য তিনটি নন্দী পুরস্কার এবং ‘আম্মুরু’ এবং ‘অন্তপুরম’-এর জন্য বিশেষ জুরি পুরস্কার জিতেছিলেন অভিনেত্রী।
২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রঘুকে বিয়ে করেন সৌন্দর্য। মৃত্যুর দিন কয়েক আগে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন সৌন্দর্য।
২০০৪ সালের ১৭ এপ্রিল রাজনৈতিক প্রচার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অন্ধ্রপ্রদেশের করিমনগর যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেই মতো বেঙ্গালুরুর জাক্কুর বিমানবন্দর থেকে একটি একক ইঞ্জিনের সেসনা ১৮০ বিমানে উঠেছিলেন তিনি।
সৌন্দর্যের সঙ্গে ওই বিমানে ছিলেন তাঁর ভাই অমরনাথ এবং বিজেপি কর্মী রমেশ কদম। যাত্রার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
বেঙ্গালুরুর গান্ধী কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (জিকেভিকে) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ভেঙে পড়ে বিমানটি। পুড়ে মারা যান বিমানে থাকা সকলেই। কারও দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
মৃত্যুর সময় সৌন্দর্য অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিনি খুন হয়েছিলেন না দুর্ঘটনার শিকার, সেই ঘটনার ২১ বছর পর আবার শিরোনামে প্রয়াত অভিনেত্রী।