অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা সকলেই কৌতূহলী। কেমন হবে ভবিষ্যতের পৃথিবী? আজ যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, ১০০০ বছর আগে সেই দুনিয়া কেমন ছিল? ১০০ বছর পর কেমন থাকবে সেই জায়গা? এমন নানা প্রশ্ন প্রায় প্রত্যেকের মনেই রয়েছে। আর এই জল্পনা-কল্পনা থেকেই বার বার উঠে এসেছে ‘টাইম মেশিন’ বা ‘সময়যান’-এর কথা।
এই নিয়ে প্রচুর সিনেমা হয়েছে। রয়েছে প্রচুর তত্ত্ব-জল্পনা। কিন্তু সময়যানে চেপে অতীতে বা ভবিষ্যতে ভ্রমণ কি বাস্তবে সম্ভব? বিজ্ঞানীরা এখনও তেমন ভাবে আশার বাণী না শোনালেও, নানা সময়ে নানা লোক সময়-ভ্রমণের ‘গল্প’ শুনিয়েছেন।
বাস্তবের ‘টাইম ট্রাভেলার্স’দের নিয়ে নানা সময় বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জনকে নিয়ে আজও নেটমাধ্যমে চর্চা অব্যাহত।
সেই ব্যক্তির নাম অ্যান্ড্রু কার্লসিন। রহস্যে মোড়া এক চরিত্র। এই মানুষটিকে নিয়ে নানা গল্পকথা ছড়িয়ে রয়েছে।
অ্যান্ড্রুকে নিয়ে চর্চা শুরু হয় ২০০৩ সালে। তারিখ ছিল ২৫ ফেব্রুয়ারি। খবর রটে, আমেরিকার শেয়ার বাজারে মাত্র ১৩ দিনে এক ব্যক্তি ৩৫ কোটি ডলার আয় করেছেন। তিনি বিনিয়োগ করেছিলেন নাকি মাত্র ৮০০ ডলার।
সামান্য বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ আয় কী ভাবে, তা নিয়ে নাকি তদন্ত শুরু হয়েছিল। আটকও নাকি করা হয় অ্যান্ড্রু কার্লসিনকে।
তদন্তকারীরা যখন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন, তখন অ্যান্ডু তাঁর এই অস্বাভাবিক আয় নিয়ে অদ্ভুত যুক্তি খাড়া করেছিলেন বলে শোনা যায়।
অ্যান্ডু নাকি তদন্তকারীদের বলেন, তিনি ভবিষ্যৎ থেকে এসেছেন। ২২৫৬ সালে ছিলেন তিনি। সময়যাত্রা করে এসেছেন ২০০৩-এ। ভবিষ্যৎ থেকেই নাকি তিনি জেনে এসেছিলেন কোন শেয়ারের দর কোথায় যেতে পারে।
সেই বুঝেই নাকি অ্যান্ডু সময়মতো অতীতে এসে শেয়ারগুলি কিনেছেন। আর তার জেরে বিপুল মুনাফা কামিয়েছেন তিনি। তাঁর কাছে এটা স্বাভাবিক ঘটনা বলেও নাকি অ্যান্ড্রু জানিয়েছিলেন তদন্তকারীদের।
স্বাভাবিক ভাবেই তদন্তকারী আধিকারিকেরা অ্যান্ড্রুর এই যুক্তি বিশ্বাস করেননি। মূল বিষয়বস্তুর থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই তিনি সময়-ভ্রমণের অদ্ভুত যুক্তি খাড়া করেছিলেন বলেও নিশ্চিত ছিলেন তাঁরা।
প্রচলিত রয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় অ্যান্ড্রু নাকি এ-ও দাবি করেন যে, কুখ্যাত জঙ্গিনেতা ওসামা বিন লাদেন কোথায় আছেন তা তিনি আগাম বলে দিতে পারেন।
এমনকি, এডসের ওষুধ কবে আবিষ্কার হবে তারও দিনক্ষণ নাকি তাঁর জানা বলে দাবি করেছিলেন অ্যান্ড্রু। জানা যায়, তিনি তদন্তকারীদের কাছে নাকি আবেদন করেছিলেন, তাঁকে তাঁর ‘টাইম মেশিনে’ করে ফিরে যেতে দেওয়া হোক।
অ্যান্ড্রু নাকি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, বিষয়টি জানাজানি হলে তাঁর ‘টাইম মেশিন’ ভুল লোকের হাতে চলে যেতে পারে। যদিও সেই যান কোথায় তা নিয়ে তদন্তকারীদের কিছু জানাননি তিনি।
২০০৩ সালের ২৯ এপ্রিল এই নিয়ে নাকি একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন অ্যান্ড্রু। কিন্তু তার পর তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ওই প্রতিবেদনেই দাবি করা হয়েছিল, জেলে থাকাকালীন কবে ইরাককে আক্রমণ করবে আমেরিকা তারও ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ করেছিলেন অ্যান্ড্রু।
এর পরেও প্রশ্ন থেকে যায় সত্যিই কি অ্যান্ড্রু কার্লসিন বলে কেউ ছিলেন? না কি সবটাই গল্পকথা? কারণ, ২০০২ সালের আগে তাঁর সম্পর্কে কোনও তথ্য পাওয়া যায় না।
যে প্রতিবেদনগুলি প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলিতে অ্যান্ড্রু হিসাবে দু’জন আলাদা ব্যক্তির ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। ফলত তিনি কে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল।
তা সত্ত্বেও অ্যান্ড্রু এবং তাঁর সময়যাত্রা নিয়ে গল্পকথা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল সেই সময়। নবীন প্রজন্মের কাছেও তিনি আগ্রহ বিষয়। এখনও নেটমাধ্যমেও তাঁকে নিয়ে চর্চা চলে। তবে যুক্তিবাদীদের বিশ্বাস, অ্যান্ড্রু বলে আদতে কেউ ছিলেন না। পুরোটাই সাজানো গল্প। সময়যানের তত্ত্বকে খাড়া করতেই সেই গল্প ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল জনগণের মনে।