Tej Pratap Yadav

বিয়ের ছ’মাসের মধ্যে বিচ্ছেদ মামলা, তার মধ্যেই ‘প্রেমিকা’র ছবি! ভোটের আগে নাগপাশে লালু-পুত্র তেজপ্রতাপ

শনিবারই তেজপ্রতাপের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এক মহিলার ছবি পোস্ট করা হয়। দাবি, ছবিতে তেজপ্রতাপের সঙ্গে যাঁকে দেখা গিয়েছে, তাঁর নাম অনুষ্কা যাদব। সেই পোস্টে দাবি করা হয়, তেজপ্রতাপ এবং অনুষ্কা গত ১২ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৫ ১৪:০১
Share:
০১ ২১

বিভিন্ন কীর্তিকলাপের জেরে একাধিক বার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদবের জ্যেষ্ঠ পুত্র তেজপ্রতাপ। বিতর্ক তাঁর নিত্যসঙ্গী। সেই তেজপ্রতাপ আবারও বিতর্কে।

০২ ২১

গত শনিবার তেজপ্রতাপের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এক মহিলার ছবি পোস্ট করা হয়। দাবি, ছবিতে তেজপ্রতাপের সঙ্গে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম অনুষ্কা যাদব। সেই পোস্টে দাবি করা হয়, তেজপ্রতাপ এবং অনুষ্কা গত ১২ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ। দীর্ঘ দিনের সেই সম্পর্কের কথা এখন তিনি প্রকাশ্যে আনছেন।

Advertisement
০৩ ২১

সেই পোস্ট প্রকাশ্যে আসার পরই শোরগোল পড়ে যায় বিহারের রাজনীতিতে। তবে তেজপ্রতাপ পরে দাবি করেন, তাঁর ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক করা হয়েছে। তাঁর ছবি ‘এডিট’ করে পোস্ট করেছে হ্যাকারেরা। তাঁর এবং তাঁর পরিবারের মানহানির লক্ষ্যেই এই সব ছবি পোস্ট করা হয়েছে। গুজবে কান না-দেওয়ার আহ্বানও জানান তেজপ্রতাপ।

০৪ ২১

কিন্তু ঠিক তার এক দিন পর, অর্থাৎ রবিবার, জ্যেষ্ঠ পুত্র তেজপ্রতাপকে দল থেকে তাড়িয়ে দেন লালু। শুধু দল থেকে নয়, পরিবার থেকেও বিতাড়িত করা হয় তাঁকে। ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’ এবং ‘পারিবারিক মূল্যবোধ ক্ষুণ্ণ’ করার অভিযোগ তুলে দল এবং পরিবার থেকে তেজপ্রতাপকে বহিষ্কার করেন আরজেডি প্রধান। আগামী ছ’বছর আরজেডির সঙ্গে তেজপ্রতাপের কোনও সম্পর্ক থাকবে না বলেও জানিয়েছেন লালু।

০৫ ২১

তবে তেজপ্রতাপের ফেসবুক প্রোফাইলের ওই পোস্ট এবং তাঁকে দল ও পরিবার থেকে তাড়ানোর মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। শুধু তা-ই নয়, লালু যে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতার’ কথা বলেছেন, তা কোন উদ্দেশ্যে, তা-ও স্পষ্ট করেনি কোনও পক্ষই।

০৬ ২১

এ কথা বললে ভুল হবে না যে তেজপ্রতাপ এবং অনুষ্কা নামে ওই মহিলার সম্পর্ক সংক্রান্ত ফেসবুক পোস্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বিহারের রাজনীতিতে প্রাধান্য পেয়েছে বিষয়টি। এই আবহে উঠে এসেছে তেজপ্রতাপের প্রথম বিয়ে এবং বিচ্ছেদের প্রসঙ্গ।

০৭ ২১

২০১৮ সালে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দারোগা রাইয়ের নাতনি এবং প্রাক্তন মন্ত্রী চন্দ্রিকা রাইয়ের মেয়ে ঐশ্বর্যার সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তেজপ্রতাপ।

০৮ ২১

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ঐশ্বর্যা। শোনা যায়, তেজের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা পটনা বিমানবন্দরে। তেজ ফিরছিলেন দিল্লি থেকে। একই দিনে ঐশ্বর্যার উড়ে যাওয়ার কথা দিল্লিতে। ভিআইপি লাউঞ্জে বসে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেন দু’জনে। সেই আলাপই ধীরে ধীরে গড়ায় বন্ধুত্বে।

০৯ ২১

এর পর ২০১৮ সালের ১২ মে পটনার পশুকলেজের চত্বরে তেজপ্রতাপের সঙ্গে ধুমধাম করে বিয়ে হয় ঐশ্বর্যার। শাসক এবং বিরোধী— উভয় দলেরই বিশিষ্ট নেতারা বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

১০ ২১

উভয় পরিবারই এই বিয়েতে খুশি ছিল। বিয়ের দু’দিন পর লালু-জায়া রাবড়ি দেবী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের পুত্রবধূ লক্ষ্মী। তার আগমনে ঘরে অনেক সুখ এসেছে।’’ এর কয়েক দিন পরে তেজপ্রতাপ এবং ঐশ্বর্যার সাইকেলে বসে থাকার একটি ছবিও ভাইরাল হয়।

১১ ২১

তবে সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই বাপের বাড়ি ফিরে যান ঐশ্বর্যা। খবরে বলা হয়েছিল, তিনি কাঁদতে কাঁদতে তেজপ্রতাপের বাড়ি ছেড়েছিলেন। লালুর পরিবারের বিরুদ্ধে অভব্য আচরণের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি, যা নিয়ে বিবাদে জড়ায় দুই পরিবার। লালুর দল আরজেডি ছেড়ে দেন ঐশ্বর্যার পিতা চন্দ্রিকা।

১২ ২১

সেই সময়ও বিষয়টি নিয়ে বিহারের রাজনীতিতে অনেক জলঘোলা হয়েছিল। বিরোধীরা লালুর পরিবারকে আক্রমণ করেছিলেন। ঐশ্বর্যার কাঁদতে কাঁদতে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ভিডিয়োটিও বেশ আলোচিত হয়েছিল।

১৩ ২১

২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর, অর্থাৎ বিয়ের ছ’মাসের মাথায় তেজপ্রতাপ পটনার পারিবারিক আদালতে ঐশ্বর্যার সঙ্গে বিচ্ছেদের আবেদন করেন। তেজ এবং ঐশ্বর্যার বিবাহবিচ্ছেদের মামলা আদালতে এখনও বিচারাধীন। তা নিয়ে দু’পক্ষের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে প্রায়ই তেতে ওঠে বিহারের রাজনীতি।

১৪ ২১

তেজের দাবি, ঐশ্বর্যা বিশাল অঙ্কের খোরপোশ দাবি করেছেন। পাল্টা ঐশ্বর্যার দাবি, তেজ মাদকাসক্ত ছিলেন। ঐশ্বর্যার উপর কোনও ধরনের বিরূপ আচরণ না-করার নির্দেশও তেজপ্রতাপকে দিয়েছিল আদালত।

১৫ ২১

তেজপ্রতাপ এবং ঐশ্বর্যার বিচ্ছেদ নিয়ে অনেক দিন ধরেই চাপানউতর চলছে। এর মধ্যেই আবার অনুষ্কা যাদবের সঙ্গে লালু-পুত্রের সম্পর্কের বিষয়টি শিরোনামে উঠে এল। শনিবার তেজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এক মহিলার ছবি পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টের বিবরণীতে লেখা হয়, ‘‘আমি তেজপ্রতাপ যাদব। ছবিতে আমার সঙ্গে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম অনুষ্কা যাদব। আমরা দু’জন দু’জনকে ১২ বছর ধরে চিনি এবং একে অপরকে ভীষণ ভালবাসি। এই গোটা সময় ধরে আমরা সম্পর্কে রয়েছি। আমি এই কথাগুলো আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইছিলাম। কিন্তু কী ভাবে বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আজ আমি আপনাদের কাছে এই কথাগুলো বললাম। আশা করি আপনারা আমাকে বুঝবেন।’’

১৬ ২১

মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তেজের ওই ফেসবুক পোস্টটি। বিতর্কও শুরু হয়। অনেকে প্রশ্ন তোলেন, তা হলে কি বিয়ের পরেও পুরনো সম্পর্ক ভাঙেননি তেজ? বিষয়টি নিয়ে লালুর পরিবারকে আক্রমণ শানাতে শুরু করে বিরোধীরা।

১৭ ২১

লালুর শ্যালক সুভাষ যাদব আবার দাবি করেছেন, ঐশ্বর্যার বিয়ের আগে থেকেই অনুষ্কার সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন তেজপ্রতাপ। তাঁর পরিবারের সবাই বিষয়টি সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও নাকি জোর করে ঐশ্বর্যার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় তেজপ্রতাপের।

১৮ ২১

অনুষ্কাকে নিয়েও কৌতূহলের অন্ত নেই বিহার রাজনীতির অন্দরে। তাঁর সম্পর্কে বিশেষ কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। তবে অসমর্থিত সূত্রে খবর, অনুষ্কার পরিবার পটনার লঙ্গরটোলিতে থাকে। অনুষ্কার বাবার নাম মনোজ যাদব।

১৯ ২১

ওই সূত্র আরও জানাচ্ছে যে, অনুষ্কা আরজেডির ছাত্র শাখার প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি আকাশ যাদবের বোন। আকাশকে নাকি তেজপ্রতাপই আরজেডির ছাত্র শাখার রাজ্য সভাপতি নিযুক্ত করেছিলেন।

২০ ২১

২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নীতীশ কুমারের মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন তেজ। তাঁর হাতে পরিবেশ, বন এবং আবহাওয়া পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ের দফতর ছিল। বিহারের রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, চলতি বছরের শেষে রাজ্যে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনে বৈশালী জেলার মহুয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তেজপ্রতাপের লড়াই করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।

২১ ২১

তার আগে তেজকে নিয়ে বিতর্কে স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে প়ড়েছে যাদব পরিবার। সেই কারণেই তড়িঘড়ি তাঁকে দল এবং পরিবারকে থেকে বিতাড়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement