লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা। এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া অবধি মৃতের সংখ্যা ৬০০-র গণ্ডি পার করেছে। আহত হাজারেরও বেশি। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রবিবার মধ্যরাতের ভূমিকম্পে বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর।
রবিবার মধ্যরাতে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী রাত পৌনে ১টা) কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির তথ্য অনুযায়ী রিখটার স্কেলে প্রথম ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৩। কম্পনের উৎসস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। এর পর আরও কয়েক বার কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান।
বেশ কয়েক বার ভূকম্প পরবর্তী কম্পন (আফটারশক) অনুভূত হয়েছে আফগানিস্তানে। তার মধ্যে অন্তত দু’টি কম্পনের মাত্রা ছিল ৫-এর বেশি। কম্পন অনুভূত হয়েছে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর এবং দিল্লির আশপাশের এলাকাতেও।
সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গভীর রাতে আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বে কুনার প্রদেশে ৬.৩ মাত্রার ওই কম্পন অনুভূত হয়। কুনার প্রদেশে তিনটি গ্রাম একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে পূর্ব আফগানিস্তানের নুর গুল, সোকি, ওয়াটপুর, মনোগি এবং চাপাদরে জেলা।
ভূমিকম্পের কারণে ধসে পড়েছে বহু ঘরবাড়ি। প্রশাসনের আশঙ্কা, ধ্বংসস্তূপের নীচে বহু মানুষ চাপা পড়ে রয়েছেন। যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ।
ভূমিকম্পবিধ্বস্ত এলাকায় এখন শুধুই স্বজনহারাদের কান্নার রোল। হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা চলছে অনেক মানুষের। যাঁরা বেঁচে গিয়েছেন, তাঁদের খাবার, পানীয় জল ও ওষুধ সরবরাহ করার কাজে লেগেছেন উদ্ধারকর্মীরা। অনেকেই বাড়িঘর হারিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন, পর্যাপ্ত খাবার এবং জলও পাওয়া যাচ্ছে না বহু এলাকায়।
ভূমিকম্পের কবলে পড়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অনেক ঘরবাড়ি, দোকান। ভূমিকম্প তছনছ বিস্তীর্ণ এলাকা। ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে রাস্তার উপর। ভূমিকম্পের উৎসস্থলের কাছাকাছি অঞ্চলে প্রচুর বাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে খবর।
সেই ধ্বংস এবং অসহায়তার অনেক ছবি ও ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। সে সব দেখে উদ্বেগ এবং শোক প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ঘরবাড়ি হারানো মানুষের অসহায়তার কয়েকটি ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন উদ্ধারকারীরা।
উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয়েরাও। ধ্বংসস্তূপের নীচে কেউ চাপা পড়ে রয়েছেন কি না সেই খোঁজও চলছে।
সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, জালালাবাদের কাছে এক গ্রামে ৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নানগরহরে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ন’জনের। তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
আশপাশের গ্রামগুলি মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা কয়েকশো ছাড়িয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র শরাফাত জামান বলছেন, ‘‘যা মনে হচ্ছে, হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকাগুলিতে উদ্ধারকারী দলকে পৌঁছোতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তাই সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যাচ্ছে না। উদ্ধারকাজ চলছে।’’
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া লাগোয়া সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকাগুলিতে মাটি এবং পাথরের অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। সেখানেও উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। প্রাদেশিক তথ্য প্রধান নাজিবুল্লাহ হানিফের কথায়, ‘‘শয়ে শয়ে আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’’
উল্লেখ্য, ভূমিকম্পের আগে বন্যা পরিস্থিতির সঙ্গেও লড়াই করছিল আফগানিস্তানের নানগরহর প্রদেশ। শুক্রবার এবং শনিবার বন্যা পরিস্থিতির কারণে পাঁচ জন নিহত এবং অনেক ফসল ও সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে।
আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, বিশেষত হিন্দুকুশ পর্বতমালা সংলগ্ন এলাকা অত্যম্ত ভূমিকম্পপ্রবণ। কারণ, ওই এলাকা ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত।
এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ৬.৩ মাত্রারই আর এক ভূমিকম্প হয়েছিল আফগানিস্তানে। গুঁড়িয়ে গিয়েছিল দেশের একাংশ। তালিবান সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, মৃতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। যদিও পরে রাষ্ট্রপুঞ্জ জানায়, মৃতের সংখ্যা দেড় হাজারের কিছু বেশি।