Telangana CM Revanth Reddy

‘কংগ্রেস ম্যান’ থেকে ‘ফ্যামিলি ম্যান’, সব দায়িত্বেই সাবলীল তেলঙ্গানার হবু মুখ্যমন্ত্রী, সব দলে বন্ধুও রয়েছে রেবন্তের

রেবন্ত পরিচিত খাদ্যরসিক হিসাবেও। আমিষ খেতেই তিনি বেশি পছন্দ করেন। নিরামিষ খান খুবই কম। তবে মদ্যপান নৈব নৈব চ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:১০
Share:
০১ ২৩

তেলঙ্গানার ঘরোয়া রাজনীতিতে তিনি বেশি পরিচিত ‘আন্না’ (অর্থাৎ, বড় ভাই) নামেই। পরিচিত, ‘ফ্যামিলি ম্যান’ রাজনীতিবিদ হিসাবেও। বৃহস্পতিবার তেলঙ্গানার দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন সেই আনুমুলা রেবন্ত রেড্ডি ওরফে রেবন্ত আন্না।

০২ ২৩

তেলঙ্গানার জন্মের পর সে রাজ্যে প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে জয় লাভ করেছিল কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের টিআরএস বা তেলঙ্গনা রাষ্ট্র সমিতি (বর্তমানে বিআরএস বা ভারত রাষ্ট্র সমিতি)।

Advertisement
০৩ ২৩

তেলঙ্গানার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করেছিলেন চন্দ্রশেখর (সারা দেশ অবশ্য তাঁকে কেসিআর নামেই বেশি চেনে)। এর পর ২০১৮ সালের তেলঙ্গানা ভোটেও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ফিরেছিলেন কেসিআর। তবে ‘গড়’ রক্ষা করতে পারলেন না ২০২৩-এ। রাহুল গান্ধী, সনিয়া গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খড়্গের আবেদনে সাড়া দিয়ে কংগ্রেসকে জিতিয়েছে তেলঙ্গানার বাসিন্দারা।

০৪ ২৩

সদ্য শেষ হওয়া তেলঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনে ১১৯ আসনের মধ্যে ৬৪টিতে জিতেছে কংগ্রেস। সহযোগী সিপিআইয়ের ঝুলিতে গিয়েছে একটি। বিআরএস পেয়েছে ৩৯টি আসন। বিজেপি ৮টি এবং হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম) সাতটি আসনে জিতেছে।

০৫ ২৩

সোমবার হায়দরাবাদের একটি হোটেলে নবনির্বাচিত কংগ্রেস বিধায়কদের বৈঠকে পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে দেওয়ার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মঙ্গলবার দিল্লিতে খড়্গে এবং এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপালের সঙ্গে বৈঠকের পর রাহুল জানান, তেলঙ্গানা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি রেবন্তই সে রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রেবন্ত এগিয়ে রয়েছেন বলে গোড়া থেকেই কংগ্রেসের অন্দরে জল্পনা ছিল।

০৬ ২৩

কিন্তু কে এই রেবন্ত? কী ভাবেই বা তেলঙ্গানার রাজনীতিতে তাঁর উত্থান? ১৯৬৯ সালের ৮ নভেম্বর মেহবুবনগর জেলার কোন্ডারেডি পল্লীতে (বর্তমানে নাগারকুরনুল জেলা) রেবন্তের জন্ম। পড়াশোনা করেছেন হায়দরাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ধ্র বিদ্যালয় কলেজ থেকে।

০৭ ২৩

ছাত্রজীবনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ছাত্রশাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) করতেন রেবন্ত। সেই সময় থেকেই কোডনগলে তাঁর রাজনৈতিক তৎপরতা এবং জনপ্রিয়তা অর্জন। ৩০ বছর বয়সে ‘জুবিলি হিলস হাউজ়িং সোসাইটি’র সভাপতিও হন রেবন্ত। এই জুবিলি হিলসে তেলুগু সিনেমার সবচেয়ে ধনী এবং প্রভাবশালী তারকাদের বাসস্থান।

০৮ ২৩

২০০৭ সালে অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশে বিধান পরিষদে উপনির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়ান রেবন্ত। জিতেও যান। এর পরে চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টিতে যোগ দেন তিনি।

০৯ ২৩

রেবন্ত ২০০৯ সালে টিডিপির হয়ে বিধানসভা ভোটে জেতেন। ২০১৪ সালে পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য হওয়ার পরেও টিডিপির বিধায়ক ছিলেন তিনি।

১০ ২৩

তেলঙ্গানার ঘরোয়া রাজনীতিতে রেবন্ত পরিচিত বিবেচক রাজনীতিবিদ হিসাবে। তেলঙ্গানায় টিডিপির শোচনীয় অবস্থা হতে পারে বলে নাকি তিনি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। এর পর ২০১৭ সালে টিডিপি থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে কংগ্রেসের ‘হাত’ চিহ্নে হাত মেলান রেবন্ত।

১১ ২৩

রাজনীতিবিদ হিসাবে রেবন্ত তেলেঙ্গানার সমস্ত প্রধান দলগুলির সঙ্গে কোনও না কোনও সময় থেকেছেন। সর্বত্র সমাদৃতও হয়েছেন। তাঁর বন্ধু রয়েছে সব দলেই। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ, বিআরএস (তৎকালীন টিআরএস), টিডিপি হয়ে ২০১৭ সালে কংগ্রেসের ঘাটে এসে নোঙর ফেলেন তিনি।

১২ ২৩

কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর রেবন্ত জানিয়েছিলেন, দলের আদর্শের সঙ্গে তাঁর আদর্শগত মিলের কারণে তিনি ‘কংগ্রেসম্যান’ হয়েছেন।

১৩ ২৩

২০০৯ এবং ২০১৪ সালে থেকে টিডিপির টিকিটে জিতেছিলেন রেবন্ত। কিন্তু ২০১৮ সালে হেরে যান। এর পরে তিনি হায়দরাবাদ শহরের কাছাকাছি মালকাজগিরি থেকে লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জিতে সাংসদ হন।

১৪ ২৩

টিডিপি-তে থাকাকালীন চন্দ্রবাবুর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ছিলেন রেবন্ত। টিডিপি ছাড়ার পরও টিডিপি নেতাদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি।

১৫ ২৩

রেবন্তের কট্টর সমালোচকরাও স্বীকার করেন যে, তিনি এক জন প্রভাবী এবং শক্তিশালী বক্তা। রেবন্তের মতোই জনপ্রিয় তাঁর তুরীয় মেজাজ।

১৬ ২৩

সম্প্রতি, কংগ্রেসের হয়ে ভোটপ্রচারের সময় একটি জনসভায় পুলিশ আধিকারিকদের প্রকাশ্যে হুমকি দিতে দেখা গিয়েছিল রেবন্তকে। এক পুলিশ আধিকারিক রেবন্তকে এক বার গ্রেফতার করতে এসেছিলেন। রেবন্ত ওই পুলিশ আধিকারিকের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনি দিন গুনতে থাকুন। আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফিরছি। আমি আপনার বাড়িতে হোম গার্ড পাঠিয়ে আপনাকে বাড়ি থেকে বার করে দেব।’’

১৭ ২৩

রেবন্তের অনুগামীরা তাঁকে ভালবেসে ‘রেবন্ত আন্না’ নামে ডাকেন। তুখোড় রাজনীতিবিদের পাশাপাশি ‘ফ্যামিলি ম্যান’ হিসাবেও পরিচিত রেবন্ত। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনার এক দিন আগে অর্থাৎ, গত শনিবার সন্ধ্যায় এক বারও টেলিভিশনের সামনে বসেননি তিনি। জেতা-হারা নিয়ে কোনও আনন্দ বা উদ্বেগ দেখা যায়নি তাঁর চোখেমুখে। ওই দিন সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে আট মাস বয়সি নাতির সঙ্গে খেলা করেই সময় কাটিয়েছিলেন রেবন্ত।

১৮ ২৩

রেবন্ত পরিচিত খাদ্যরসিক হিসাবেও। আমিষ খাওয়াদাওয়া করতেই তিনি বেশি পছন্দ করেন। নিরামিষ খান খুবই কম। মদ্যপান, নৈব নৈব চ। খাসির মাংসের কিমা, মুরগির মাংস, পুরী এবং ডোসা রেবন্তের পছন্দের খাবারের তালিকায় রয়েছে।

১৯ ২৩

রেবন্তের প্রিয় খেলা ফুটবল। আর্জেন্টিনার বৈগ্রহিক ফুটবল তারকা মারাদোনার ভক্ত তিনি। প্রিয় অভিনেতা তেলুগু নায়ক কৃষ্ণ।

২০ ২৩

রেবন্ত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডির ভাইঝি গীতাকে বিয়ে করেন। দম্পতির এক কন্যাসন্তান রয়েছে।

২১ ২৩

কংগ্রেস নেতাদের মতে রেবন্তের ইউএসপি হল, তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। তেলঙ্গানা জেতার ক্ষেত্রে রেবন্তের ‘ক্যারিশমা’ও কাজে এসেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

২২ ২৩

কংগ্রেসের হেড কোয়ার্টার থেকে তেলঙ্গানার দলীয় নেতাদের মতবিরোধ এবং পারস্পরিক দূরত্ব সরিয়ে ফেলার দায়িত্বও রেবন্তকে দেওয়া হয়েছিল। রেবন্তের হাতে তেলঙ্গানা কংগ্রেসের লাগাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের তুরুপের তাস হয়েছে বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের।

২৩ ২৩

কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রেবন্তের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। উপস্থিত থাকবেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ২৮টি দলের প্রতিনিধিও।

সব ছবি: পিটিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement