কিছু কিছু রহস্য আজীবন রহস্যের মোড়কেই বন্দি থাকে। হাজার চেষ্টা করেও অনেক ফেলুদা বা ব্যোমকেশ সেই রহস্য উন্মোচন করতে পারেন না। তেমনই এক রহস্য অভিনেত্রী-মডেল ট্যামি লিন লেপার্টের অন্তর্ধান।
মার্কিন সেই অভিনেত্রী-মডেলের আচমকা উধাও হওয়ার যে রহস্য তা এক অন্য মাত্রা নিয়েছিল আশির দশকে।
ফ্লোরিডার রকলেজে ১৯৬৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লেপার্টের জন্ম। মাত্র চার বছর বয়স থেকেই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ শুরু করেন তিনি। অংশ নেন প্রায় ৩০০টি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়। ২৮০টি মুকুটও জেতেন।
কিশোরী বয়স থেকেই আমেরিকায় উল্লেখযোগ্য মডেল হিসাবে উঠে এসেছিল লেপার্টের নাম। ১৯৭৮ সালের অক্টোবরে ‘কভারগার্ল’ পত্রিকার প্রচ্ছদে জায়গা করে নিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।
কিশোরীবেলা পার করে তারুণ্যের উচ্ছল দুনিয়ায় পা রাখতে না রাখতেই হাজার হাজার পুরুষের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন ট্যামি। পুড়িয়েছিলেন অনেক পুরুষমন।
হলিউড থেকেও ডাক আসে। সেই হাতছানি উপেক্ষা করতে পারেননি লেপার্ট। তিনটি ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তবে তাঁর যে সম্ভাবনা ছিল বড় অভিনেত্রী হওয়ার, তেমনটা বিশ্বাস করতেন অনেকেই।
কিন্তু সাফল্যের স্বাদ উপভোগ করার আগেই অষ্টাদশী এই উঠতি নায়িকা আচমকা উধাও হয়ে যান। তার পর ৪২ বছর অতিক্রান্ত। আজও তাঁর খোঁজ মেলেনি। বরং যত দিন গড়িয়েছে, তাঁকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
লেপার্টকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল ১৯৮৩ সালের ৬ জুলাই। সে সময় ফ্লোরিডার কোকোয়া সৈকতে গিয়েছিলেন মডেল তথা উঠতি অভিনেত্রী।
লেপার্ট যখন নিখোঁজ হন, তখন তাঁর পরনে ছিল নীল রঙের ডেনিম শার্ট। সঙ্গে ছিল মানানসই স্কার্ট। হাতে ছিল ধূসররঙা ভ্যানিটি ব্যাগ।
লেপার্টের পরিবারের সদস্যেরা তাঁর নিখোঁজ হওয়ার কথা পুলিশকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু অনেক খুঁজেও তাঁর অন্তর্ধানের কূলকিনারা করতে পারেননি তদন্তকারীরা। ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছিল রহস্য।
তদন্তে উঠে এসেছিল, উধাও হওয়ার আগে এক বন্ধুকে তিন বার ‘জরুরি ফোন’ করেছিলেন লেপার্ট। কিন্তু তাঁর সেই ফোনের উত্তর দেননি বন্ধু।
১৯৮২ সালের সফল ছবি ‘স্প্রিং ব্রেক’-এ কাজ করেছিলেন লেপার্ট। ছবির সাফল্যের পর একটি পার্টিতে গিয়েছিলেন তিনি। জল্পনা ছড়ায়, লেপার্ট যখন বাড়ি ফিরেছিলেন, তখন তাঁর অন্য রূপ দেখেছিলেন পরিবারের সদস্যেরা।
নিখোঁজ হওয়ার পর অভিনেত্রীর মা জানিয়েছিলেন, ওই পার্টিতে লেপার্ট নাকি এমন কিছু দেখেছিলেন, যা তাঁর দেখা উচিত হয়নি। লেপার্ট শুধু তাঁর মাকে বলেছিলেন, ‘ওরা’ লেপার্টের কাছে আসবেন। পরিবারের দাবি, ওই পার্টি থেকে ফেরার পর থেকেই লেপার্টের আচরণে বেশ কিছু বদল লক্ষ করেছিলেন তাঁরা। এর বছরখানেক পর নিখোঁজ হন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, সে সময় এ বিষয়ে কোনও সূত্র পাওয়া যায়নি। লেপার্টকে খুন করা হয়েছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল বিভিন্ন মহলে।
লেপার্টের উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় দুই সন্দেহভাজন সিরিয়াল কিলারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কেউই দোষী সাব্যস্ত হননি। তা ছাড়া লেপার্টের দেহও উদ্ধার করা যায়নি।
এর মধ্যেই গুজব রটেছিল, মাদক কেলেঙ্কারিতে যোগ ছিল লেপার্টের। তিনি অন্তঃসত্ত্বাও হয়ে পড়েছিলেন বলে জল্পনা ছড়ায়। ফলে তাঁর অন্তর্ধান রহস্য ক্রমেই জটিল হতে থাকে।
১৯৮৩ সালে ‘স্কারফেস’ ছবিতে অভিনয় করছিলেন লেপার্ট। কিন্তু চতুর্থ দিনের শুটিংয়ে নকল রক্ত দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। অন্তর্ধানের পর সে নিয়েও অনেক জল্পনা, অনেক তত্ত্ব শোনা গিয়েছিল।
লেপার্টের দেহ সন্দেহে সেই সময় কমপক্ষে ১৪টি মৃতদেহ খতিয়ে দেখেছিল পুলিশ। শনাক্ত করতে এসেছিলেন পরিবারের সদস্যেরাও। কিন্তু লাভ হয়নি।
চার দশক পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও লেপার্টের খোঁজ পেতে মরিয়া তাঁর পরিবার। লেপার্ট সংক্রান্ত কোনও তথ্য পেতে তাঁর বোন সুজ়ান দিদির নামে একটি ফেসবুক পেজও চালু করেছেন। লেপার্ট যদি এখনও বেঁচে থাকেন, তা হলে বর্তমানে তাঁর বয়স হবে ৬০।