সকাল হোক বা সন্ধ্যা, শিঙাড়া থাকলে বাঙালির জমে যাবেই! বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডার আসর জমাতে চা- শিঙাড়ার জুড়ি মেলা ভার। আবার বাড়িতে অতিথি এলে মিষ্টির সঙ্গে চট করে দিয়ে দেওয়া যায় সুস্বাদু এই মুখরোচক। টম্যাটো কেচাপে শিঙাড়া ডুবিয়ে তাতে এক কামড় না দিলে অনেকেরই সন্ধ্যা মাটি হয়ে যায়।
শিঙাড়ার হরেক রকমফের রয়েছে। আলু, ডাল, ফুলকপি থেকে মাংস— হরেক রকম পুর দিয়ে তৈরি হতে পারে শিঙাড়া।
এমনকি আলুর পুরেও রয়েছে প্রকারভেদ। কোথাও পুর বানানো হয় কসৌরি মেথি দিয়ে, তো কোথাও বাদাম দিয়ে। অবাঙালি দোকানের শিঙাড়া আর বাঙালি দোকানের শিঙাড়াতেও ফারাক রয়েছে।
শিঙাড়া এতটাই জনপ্রিয় যে, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন তা বিদেশের মাটিতেও পৌঁছে গিয়েছে।
কিন্তু এমন এক দেশ রয়েছে, যেখানে শিঙাড়া একেবারে নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয়, শিঙাড়ায় কামড় দিলে প্রাণ অবধি যেতে পারে।
ওই দেশের এক জঙ্গি সংগঠন শিঙাড়ার উপর সেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু কেন? দেশটিরই বা নাম কী?
উত্তর হল সোমালিয়া। ২০১১ সাল থেকে সে দেশের জঙ্গি সংগঠন আল শাবাব নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে শিঙাড়ার প্রস্তুতি এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে! অবিশ্বাস্য মনে হলেও সে কথা সত্যি।
নাইজ়িরিয়ার বোকো হারাম বা ইয়েমেনের হুথি জঙ্গিদের মতোই আফ্রিকায় নাশকতার ঘটনায় বার বার উঠে এসেছে হরকত আল শাবাব আল মুজাহিদিনের নাম। সংক্ষেপে এরা আল শাবাব নামে পরিচিত।
২০০৬ সালে সোমালিয়ায় গড়ে ওঠা এই জঙ্গি সংগঠন আদতে আল কায়দার সহযোগী। কেনিয়া, উগান্ডা এবং জিবুতির মতো পূর্ব আফ্রিকার একাধিক দেশে সক্রিয় এই গোষ্ঠী।
সোমালিয়ার ‘ইউনিয়ন অফ ইসলামিক কোর্টস’ ভেঙে তৈরি হওয়া আল শাবাব নামের অর্থ ‘তারুণ্য’। আমেরিকার গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি, প্রায় আট-ন’হাজার জঙ্গি রয়েছে এই কট্টরপন্থী সংগঠনে।
সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুর পাশাপাশি গত দেড় দশকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি এবং উগান্ডার রাজধানী কাম্পালাতেও হামলার নজির রেখেছে আল শাবাব।
২০০৮ সালে আমেরিকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আল শাবাবকে। সংগঠনের প্রধান, সোমালি জঙ্গিনেতা আহমেদ উমর ওরফে আহমদ দিরিয়ে ২০১৫ সাল থেকে রয়েছেন ওয়াশিংটনের জঙ্গি তালিকায়।
সেই আল শাবাবই শিঙাড়া নিষিদ্ধ করেছে সোমালিয়ায়। কিন্তু কেন? সমস্যা, শিঙাড়ার ত্রিভুজ আকৃতিকে নিয়ে।
ত্রিভুজাকার শিঙাড়ার সঙ্গে খ্রিস্টীয় প্রতীক ‘ট্রিনিটি’র মিল দেখে আল শাবাব, যা তারা ইসলামবিরোধী বলে দাবি করে। ফলস্বরূপ, সোমালিয়ায় আল শাবাব নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শিঙাড়া তৈরি, বিক্রি বা খাওয়াকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এমনকি, সোমালিয়ার কিছু কিছু জায়গায় শিঙাড়া তৈরি বা বিক্রি করলে এবং খেলে আল শাবাবের জঙ্গিদের হাতে প্রাণ পর্যন্ত দিতে হতে পারে। ফলে সোমালিয়া গিয়ে শিঙাড়ার খোঁজ না করাই শ্রেয়।
তবে বাঙালি তথা ভারতীয়েরা শিঙাড়ার উপর এমন নিষেধাজ্ঞার কথা কল্পনাও করতে পারবেন না। বর্ষার মরসুমে চায়ের সঙ্গে গরম শিঙাড়া পেলে আর কী-ই বা চাই? অফিস হোক বা স্কুল-কলেজের ক্যান্টিন— শিঙাড়ার দেখা পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
যদিও বাঙালির প্রিয় সেই খাবার শরীরের যে মারাত্মক ক্ষতিও করে দিতে পারে সম্প্রতি সেটাও মনে করিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সমস্ত কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়া ফরমান জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এ বার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্যান্টিনগুলিকে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক আর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জিলিপি-শিঙাড়া খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করতে হবে। শিঙাড়া-জিলিপিতে কতটা ক্যালোরি আর চিনি আছে, সেই বিষয়ে পোস্টার লাগাতে হবে ক্যান্টিনগুলিতে।
শুধু শিঙাড়া-জিলিপিই নয়, লাড্ডু, বড়া পাও, পকোড়াও রয়েছে সেই তালিকায়। কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের এই নয়া নিয়মটি নিজেদের ক্যাম্পাসে চালু করার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে।