আচমকা যদি পরমাণু হামলা হয় দেশে! যদি শত্রুর ছোড়া পরমাণু বোমার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে শহরের পর শহর! তখন কী করণীয়? সে বিষয়ে কয়েক বছর আগে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে, পরমাণু হামলা হলে তা থেকে বাঁচতে এক বিশাল ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার তৈরি করে ফেলেছে আমেরিকা। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের সময়ের এক কর্তার দাবি শুনে অন্তত তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
বুশ জমানার ওই প্রাক্তন কর্তার দাবি, ২১ লক্ষ কোটি ডলার খরচ করে একটি বিস্তৃত ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে আমেরিকা। বাঙ্কারগুলি ১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকারের ‘অননুমোদিত ব্যয়’ দিয়ে নির্মিত বলেও দাবি করেছেন তিনি।
আমেরিকার ওই প্রাক্তন কর্তার নাম ক্যাথরিন অস্টিন ফিটস। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের শাসনকালে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আমেরিকার গৃহ এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সহ-সচিব ছিলেন তিনি।
সম্প্রতি পডকাস্টার টাকার কার্লসনের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ক্যাথরিন। তিনি ওই অনুষ্ঠানে দাবি করেছেন, লুকোনো তহবিল ব্যবহার করে আমেরিকা জুড়ে প্রায় ১৭০টি ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাঙ্কারগুলির মধ্যে কয়েকটি সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত বলেও দাবি করেছেন তিনি।
পডকাস্টে টাকারকে ক্যাথরিন বলেন যে, পৃথিবীর শেষ দিনের কথা চিন্তা করে ওই বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে। তবে তাঁর দাবি, সাধারণ মানুষ ওই বাঙ্কারে থাকার সুযোগ পাবেন না। কেবল অভিজাত, বিত্তশালী এবং শক্তিশালী মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে সেগুলি তৈরি হয়েছে।
ক্যাথরিন এ-ও দাবি করেছেন, মহাকাশ কর্মসূচি-সহ গোপন সরকারি প্রকল্পের কাজ করার জন্যও নাকি তৈরি করা হয়েছে বাঙ্কারগুলি।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পডকাস্টে ‘মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি’র অর্থনীতিবিদ মার্ক স্কিডমোরের ২০১৭ সালের একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করেছেন ক্যাথরিন।
‘স্কিডমোর রিপোর্ট’ নামে ওই প্রতিবেদনে প্রতিরক্ষা এবং গৃহ ও নগরোন্নয়ন দফতরের অননুমোদিত আর্থিক তছরুপের তদন্ত করা হয়েছিল। সেই রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে যে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ওই দুই বিভাগে ২১ লঢক্ষ কোটি ডলার এ দিক-ও দিক করা হয়েছে। সেই অর্থ কোন খাতে ব্যবহার হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে রিপোর্টটিতে।
২০১৫ সালের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে, আমেরিকার সেনাবাহিনীর বার্ষিক বরাদ্দ ১২ হাজার ২০০ কোটি ডলার হওয়া সত্ত্বেও তাদের হাতে ৬.৫ লক্ষ কোটি ডলার এসেছিল সে সময়।
স্কিডমোর রিপোর্ট নিয়ে দু’বছরের তদন্ত এবং উপলব্ধ নথি পর্যালোচনা করার পরে ক্যাথরিনের অনুমান, অনুমোদিত সেই ২১ লক্ষ কোটি ডলার দিয়ে আমেরিকার মাটির নীচে এবং উপকূলরেখার কাছাকাছি কমপক্ষে ১৭০টি ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি তৈরি করেছে সরকার।
একই সঙ্গে প্রাক্তন মার্কিন কর্তা এ-ও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, বিশ্বের অন্য জায়গাতেও ওই ধরনের বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে আমেরিকার তরফে।
ক্যাথরিন বর্ণনা করেছেন, ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার নেটওয়ার্কগুলি অত্যাধুনিক। পরমাণু যুদ্ধের মতো সংঘাত শুরু হলে সেগুলিতে আশ্রয় নেওয়ার সমস্ত সুবিধা রয়েছে।
ক্যাথরিন এ-ও ইঙ্গিত দিয়েছেন, কোনও গোপন শক্তি ব্যবস্থা সম্ভবত এই বাঙ্কারগুলিতে শক্তি সরবরাহ করছে। তবে তাঁর দাবির পক্ষে পোক্ত কোনও প্রমাণ পেশ করতে পারেননি আমেরিকার প্রাক্তন কর্তা।
উল্লেখ্য, এর আগেও ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার তৈরি করে নজরে এসেছিল আমেরিকা। তার মধ্যে কলোরাডোর ‘শায়েন মাউন্টেন কমপ্লেক্স’ বা পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ‘গ্রিনব্রিয়ার বাঙ্কার’-এর মতো ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’-এর সময় তৈরি বাঙ্কার অন্যতম।
যদিও আমেরিকার সরকার ১৭০টি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারের অস্তিত্ব বা ওই ধরনের কোনও প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে কিছু জানায়নি। আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি ২১ লক্ষ কোটি ডলার খরচ করা নিয়েও।
বর্তমানে পেশায় একজন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার ক্যাথরিন কোভিড টিকা এবং আন্তর্জাতিক অন্যান্য ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (কনস্পিরেসি থিয়োরি)-এর কথা বলেও বিতর্ক তৈরি করেছিলেন।