খাবারের এক সংস্থায় কাজ শুরু করেন ২২ বছর আগে। বেতন ছিল ঘণ্টায় ৫ ডলার। থালা-বাসন পরিষ্কার করা, রেস্তরাঁয় আসা অতিথিদের খাবার পরিবেশন করা-সহ বেয়ারার সব কাজই করতে হত তাঁকে। ২০২৫ সালে সেই সংস্থারই মালিক হলেন অমোল কোহলি।
অমোল ভারতীয় বংশোদ্ভূত। বড় হওয়া আমেরিকাতেই। ফিলাডেলফিয়ার এক হাই স্কুলে পড়ার সময় হাতখরচ জোগাড় করতে বেয়ারার কাজে ঢোকেন ‘ফ্রেন্ডলিস’ নামক এক রেস্তরাঁয়।
‘ফ্রেন্ডলিস’ পরিচিত তাঁদের বার্গার, বিভিন্ন ধরনের আইসক্রিম এবং সানডের জন্য। আমেরিকা জুড়ে তাঁদের বেশ কয়েকটি শাখা রয়েছে। তেমনই এক শাখায় খাবার তৈরি করার পাশাপাশি নানা ধরনের কাজ করতে হত অমোলকে।
রেস্তরাঁয় আংশিক সময়ের জন্য কাজ করতেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি খুব বেশি সময় দিতে পারতেন না অমোল, যা উপার্জন হত তাই দিয়ে পড়াশোনার খরচ এবং টুকটাক শখ মেটাতেন।
স্কুলের পাট চুকলে ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স ও মার্কেটিং বিভাগে স্নাতক স্তরে ভর্তি হন তিনি। তবে তখনও কিন্তু ‘ফ্রেন্ডলিস’-এর চাকরি ছেড়ে দেননি।
বেয়ারার কাজের পাশাপাশি ‘ফ্রেন্ডলিস’-এর অন্যান্য কাজ শেখার চেষ্টা করতে থাকেন অমোল। ওই সংস্থায় বিমার কাজ কী ভাবে হয়, সংস্থার আয়-ব্যয় কত— সেই সব শেখার প্রতি ঝোঁক বাড়তে থাকে তাঁর।
স্নাতক হওয়ার পর অমোল অন্য সংস্থায় ভাল বেতনের চাকরির সুযোগ পান। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেন। বেছে নেন ‘ফ্রেন্ডলিস’-এর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকের পদ।
সেই সময় যতটুকু আয় করতেন তার বেশির ভাগই জমানোর চেষ্টা করতেন অমোল। আর সেটাই মালিক হওয়ার পথে কাজে এসেছিল তাঁর। এক সময় ‘ফ্রেন্ডলিস’-এর একটি শাখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
অমোল নিজের সঞ্চয় এবং ঋণ নিয়ে ওই শাখাটি কিনে নিয়েছিলেন। এ ভাবেই শুরু হয় তাঁর প্রথম ব্যবসা। তবে একটা শাখা কিনেই থেমে থাকেননি। তাঁর কাজের প্রতি একাগ্রতা আরও বেড়ে যায়।
২০২০ সালে করোনার ফলে ‘ফ্রেন্ডলিস’ সম্পূর্ণ ভাবে দেউলিয়া হয়ে যায়। পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আসে। তখন ‘ব্রিক্স হোল্ডিংস’ নামক এক সংস্থা কিনে নেয় ‘ফ্রেন্ডলিস’কে।
একটি শাখা কিনলেও অমোল তখনও ‘ফ্রেন্ডলিস’-এর কর্মচারী ছিলেন। কাজের পাশাপাশি নিজের একটি বিনিয়োগ সংস্থা তৈরির চেষ্টা করেন। শেষমেশ ২০২৫ সালে অমোল ‘লেগ্যাসি ব্র্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি বিনিয়োগ সংস্থা তৈরি করেন।
এই সংস্থার মূল কাজ ছিল খাবার সংক্রান্ত রুগ্ন সংস্থা কিনে নেওয়া। যদি কোনও সংস্থা বন্ধ হওয়ার মুখে থাকে অথবা অর্থনৈতিক ভাবে ধুঁকছে এমন পরিস্থিতিতে থাকে, তখন অমোলের সংস্থা তা কিনে নেয়।
অন্য দিকে, ‘ফ্রেন্ডলিস’কে ‘ব্রিক্স হোল্ডিংস’ কিনলেও খুব ভাল চলছিল না সেটি। সে সময় অমোলের সংস্থা ‘ফ্রেন্ডলিস’কে সম্পূর্ণ অধিগ্রহণ করে। অর্থাৎ, শুরুর দিনে যে সংস্থায় বেয়ারা হিসাবে কাজ করতেন, সেই সংস্থারই তিনি মালিক হয়ে যান।
দীর্ঘ ২২ বছরে বহু চড়াই-উতরাই গিয়েছে অমোলের জীবনে। তবুও থেমে থাকেননি তিনি। মোটা বেতনের একাধিক চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর তিল তিল করে জমানো টাকা, ব্যবসায়িক বুদ্ধি এবং একাগ্রতার জোরে অমোল আজ অনেকগুলি সংস্থার মালিক।
‘ফ্রেন্ডলিস’, ‘ক্লিন জুস’, ‘রেড ম্যাঙ্গো’, ‘অরেঞ্জ লিফ’-সহ আরও সংস্থা অমোলের মালিকানাধীনে। বর্তমানে ‘ব্রিক্স হোল্ডিংস’-এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অমোল। এ ছাড়াও আমেরিকা জুড়ে তাঁর বিভিন্ন সংস্থা মিলিয়ে মোট ২৫০টি শাখা রয়েছে। ঘণ্টায় পাঁচ ডলার উপার্জন করা ছেলেটি আজ কোটি কোটি টাকার মালিক।