Baguiati double murder

অনলাইনে টাকা নিয়ে ধরা পড়ে গেলেন সত্যেন্দ্র, জোড়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের অপেক্ষায় পুলিশ

বাগুইআটিতে জোড়া ছাত্র খুনে গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরি-সহ পাঁচ জন। আটক আরও এক। সত্যেন্দ্রের ফাঁসির দাবি করল নিহত ছাত্রের পরিবার।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:৫২
Share:
০১ ২১

বাগুইআটিতে দুই মাধ্যমিক পড়ুয়াকে অপহরণ করে খুন করার ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য। দশম শ্রেণির দুই ছাত্রের এই নির্মম পরিণতি মানতে পারছেন না তাঁর স্বজনরা। ছেলে হারানোর কান্না অতনু ও অভিষেকের বাড়িতে। ঠিক কী কারণে এই হত্যা? খুনের নেপথ্যে কি লুকিয়ে কোনও রহস্য?

০২ ২১

কেন এই হত্যা, বা পুলিশি পরিভাষায় ‘খুনের মোটিভ’ কী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। খুনের নেপথ্যে বেশ কিছু তত্ত্ব উঠে আসছে। যেমন, সত্যেন্দ্রর স্ত্রীর সঙ্গে কোনও অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল কি না দুই পড়ুয়া, দুই পড়ুয়ার পারিবারের সঙ্গে সত্যেন্দ্রর কোনও পুরনো বিবাদ ছিল কি না, সত্যেন্দ্র ‘সাইকোপ্যাথ ক্রিমিনাল’ কি না, না কি এই জোড়া খুনের নেপথ্যে রয়েছে অন্য কারণ, তার সত্য-মিথ্যা নির্ণয়ই এখন তদন্তকারীদের প্রধান লক্ষ্য। শুধু অর্থ যে এই হত্যার নেপথ্যে নেই, তা এক প্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরা। তা হলে এই হত্যার নেপথ্যে কী, তার জট কাটতে পারে সত্যেন্দ্র গ্রেফতারের পরই।

Advertisement
০৩ ২১

গত ২২ অগস্ট থেকে বাগুইআটির হিন্দু বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ছাত্র অতনু দে এবং অভিষেক নস্কর নিখোঁজ হন বলে দাবি। দু’দিন তাদের কোনও খোঁজ না পেয়ে বাগুইআটি থানায় অভিযোগ জানায় পরিবার।

০৪ ২১

দুই ছাত্রকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানাতে বাগুইআটি থানার দ্বারস্থ হয় পরিবার। পুলিশের কাছে অতনুর বাবা অভিযোগ করেন, তিনি বেশ কয়েক বার উড়ো ফোন পেয়েছেন। মুক্তিপণের মেসেজও পেয়েছেন।

০৫ ২১

পরিবারের অভিযোগ ছিল, ছাত্রদের নিখোঁজের অভিযোগ প্রথমে তেমন গুরুত্বই দেয়নি পুলিশ। গত ২৪ অগস্ট থেকে দুই কিশোরের খোঁজ শুরু করে পুলিশ।

০৬ ২১

গত ২৫ অগস্ট হাড়োয়া থানার আওতায় কুলটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নয়ানজুলি থেকে উদ্ধার করা হয় অভিষেকের দেহ। এর আগে, গত ২৩ অগস্ট ন্যাজাট থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয় অতনুর দেহ।

০৭ ২১

গত ২৪ অগস্ট অভিযোগ পাওয়ার পর ১৩ দিন কেটে গেলেও দুই ছাত্রের হদিস পায়নি পুলিশ। অভিযোগ, ১০-১২ দিন বসিরহাট মর্গে পড়ে ছিল দুই ছাত্রের দেহ। এত দিন মর্গে দেহ পড়ে থাকার পরও কেন পুলিশের জানতে দেরি হল, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার প্রথম বার সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ্যে আসে। তার পরই হইচই পড়ে যায়।

০৮ ২১

মঙ্গলবার দুপুরে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান বিশ্বজিৎ ঘোষ সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, ওই দুই কিশোর গত ২২ অগস্ট থেকে নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে পুলিশের কাছে ২৪ অগস্ট একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়। চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরি পলাতক।

০৯ ২১

মঙ্গলবার নিহত ছাত্রদের বাড়িতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, তাঁকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেন স্থানীয়েরা। পড়শিরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা এর মধ্যে রাজনীতি চান না।

১০ ২১

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে গত ৭ সেপ্টেম্বর, বুধবার সন্ধ্যায়। অভিষেকের বাড়িতে যান সিপিএমের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এবং রাজ্য কমিটির সদস্য সৃজন ভট্টাচার্য। নিহতের ছবিতে মালা দিতে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। ছেলের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি চান না বলে সাফ জানিয়ে দেয় পরিবার।

১১ ২১

বুধবারই বিকেল নাগাদ বাগুইআটি-কাণ্ডে আর এক নিহত অতনুদের বাড়িতে যান রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু এবং বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার সুপ্রতিম সরকার।

১২ ২১

এই ঘটনার তদন্তে উঠে আসে বেশ কিছু তথ্য। পুলিশ জানতে পারে, দুই কিশোরকে অচেনা কেউ নয়, ‘অপহরণ’ করেছে তাদের পরিচিতই।

১৩ ২১

অতনুর পরিবারের দাবি, একটি বাইক কেনার জন্য সত্যেন্দ্রকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল ওই ছাত্র। কিন্তু বাইক কেনা হয়নি।

১৪ ২১

অভিযোগ, গত ২২ অগস্ট অতনুকে নিজেই ফোন করে বাইক কেনার জন্য ডাকেন সত্যেন্দ্র। সেই মতো বাড়ি থেকে বেরোয় সে। তার সঙ্গে ছিল তুতো ভাই অভিষেক।

১৫ ২১

পুলিশ সূত্রে খবর, সত্যেন্দ্র গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। সেই গাড়িতেই দুই কিশোরকে নিয়ে রাজারহাটে একটি বাইক শোরুমে যান। কিন্তু বাইক পছন্দ হয়নি সত্যেন্দ্রের। তাই শোরুম থেকে দু’জনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। বাসন্তী হাইওয়ে ধরে ছোটে গাড়ি। সে দিন রাতেই তাদের খুন করা হয়।

১৬ ২১

এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ৭ সেপ্টেম্বর, বুধবার রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাগুইআটি থানার আইসি কল্লোল ঘোষকে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে এবং মামলার তদন্তভার হাতে নিয়েছে সিআইডি। ৭ সেপ্টেম্বর, বুধবার বাগুইআটি থানার আইসি কল্লোল ঘোষকে সাসপেন্ড করা হয়।

১৭ ২১

দুই ছাত্র খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় থেকে এক যুবককে আটক করে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি)। আটক যুবকের নাম রবিউল মোল্লা। তিনি ভাঙড়ের পোলেরহাটের বাসিন্দা।

১৮ ২১

শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ এই খুনের ঘটনায় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে হাওড়া স্টেশন চত্বরে হানা দিয়ে সত্যেন্দ্রকে নাটকীয় ভাবে পাকড়াও করে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট।

১৯ ২১

পুলিশ সূত্রে খবর, অন্য রাজ্যে পালানোর ছক কষেছিলেন সত্যেন্দ্র। ট্রেনে যাবেন বলে এসেছিলেন হাওড়া স্টেশন চত্বরে। স্টেশনেই ট্রেনের টিকিট কাটছিলেন তিনি। টিকিট কাটার আগে এক আত্মীয়ের সঙ্গে অনলাইনে টাকার একটি লেনদেন করেন সত্যেন্দ্র। ওই অনলাইন লেনদেনের সূত্র ধরেই সত্যেন্দ্রের হদিস পায় বিধাননগর পুলিশ। তার পরই তাঁকে পাকড়াও করে সাদা পোশাকে পরিহিত পুলিশের একটি দল।

২০ ২১

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, বার বার সিম কার্ড বদলেছিলেন সত্যেন্দ্র। তাই তাঁর নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু শেষ মুহূর্তের একটি ‘ভুল’ই ধরিয়ে দিল তাঁকে। পুলিশ সূত্রে খবর, অনলাইনে টাকার লেনদেন করে আর সিম কার্ড বদল করেননি সত্যেন্দ্র। যে আত্মীয়ের থেকে অর্থ তিনি নেন, তাঁর ফোনও পুলিশের নজরে ছিল। ফলে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে অসুবিধা হয়নি গোয়েন্দাদের।

২১ ২১

শুক্রবার সত্যেন্দ্রের গ্রেফতারের খবর প্রকাশ্যে আসার পর তাঁর ফাঁসির দাবি তুলেছেন নিহত ছাত্র অতনুর বাবা-মা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement