Sunil Kumar Pintu

অশ্লীল ভিডিয়োয় ‘মুখ দেখা’ গিয়েছে, মাথায় তিনটি মামলা! কলঙ্ককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিহার নির্বাচনে জয়ী, কে এই সুনীল পিন্টু?

৬ নভেম্বর প্রথম দফার নির্বাচনের কয়েক দিন আগে বিজেপি প্রার্থী সুনীল কুমারের ‘অশ্লীল ভিডিয়ো’ ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সমাজমাধ্যমে ঘুরতে থাকে। অশ্লীল ভিডিয়োর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নিজেকে বৃহত্তর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৫১
Share:
০১ ১৬

সদ্য ফলপ্রকাশ হয়েছে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের। ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল সীতামঢ়ী বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী সুনীল কুমার পিন্টু। ৬ নভেম্বর প্রথম দফার নির্বাচনের ঠিক কয়েক দিন আগেই সুনীলের বিরুদ্ধে ওঠে এক মারাত্মক অভিযোগ। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একাধিক অশ্লীল ভিডিয়ো। তাতে নাকি দেখা গিয়েছিল এই বিজেপি প্রার্থীকে।

০২ ১৬

ভিডিয়োগুলি সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিরোধী দলের নেতারা শোরগোল তুলেছিলেন। নির্বাচন কমিশনের নজরে এনে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি তোলেন তাঁরা। অভিযোগ ওঠে, দু’টি পৃথক ভিডিয়োয় মুখ দেখা গিয়েছে বিজেপি প্রার্থীর। একটিতে এক মহিলার সঙ্গে তাঁকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যায়। অন্যটিতে এক নগ্ন মহিলার সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করার অভিযোগ ওঠে সুনীলের বিরুদ্ধে।

Advertisement
০৩ ১৬

বিজেপি প্রার্থী সুনীল কুমারের ‘অশ্লীল ভিডিয়ো’ ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সমাজমাধ্যমে ঘুরতে থাকে। যদিও এই ধরনের গুরুতর অভিযোগের কোনও প্রতিফলন পড়তে দেখা যায়নি ভোটবাক্সে। ভোটগণনা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় যে সীতামঢ়ী বিধানসভা আসনে সুনীল এগিয়ে রয়েছেন। চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায় যে বিরোধীদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে প্রায় ছ’হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতে সীতামঢ়ী আসন নিজের দখলে রাখেন সুনীল।

০৪ ১৬

প্রথম দফার নির্বাচনের রাজনৈতিক উত্তাপের আবহে সুনীল তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বাভাবিক ভাবেই নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। অশ্লীল ভিডিয়োর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নিজেকে বৃহত্তর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেন তিনি। সুনীলের দলীয় সমর্থকেরা ও অনুগামীরা জানান, বিজেপির প্রার্থীর সুনাম নষ্ট করার জন্য বিরোধীদের চক্রান্তের শিকার সুনীল। প্রথম পর্বের ভোটের আগে অশ্লীল ভিডিয়োর ঘটনা নিয়ে একটি এফআইআর দায়ের করেন।

০৫ ১৬

সাইবার সেলের কাছে দায়ের হওয়া সেই এফআইআরে সুনীল লেখেন, ভিডিয়োগুলি তাঁর খ্যাতি এবং রাজনৈতিক ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য বিশেষ ভাবে সম্পাদিত ও কৃত্রিম মেধা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রাক্‌-নির্বাচনী সময়ে বিরোধীদের মস্তিষ্কপ্রসূত ষড়যন্ত্রের অংশ এটি। পিন্টু আরও বলেন যে, এই ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। ২০২৩ সালে তিনি সাংসদ থাকাকালীন তাঁকে জড়িয়ে একই ধরনের ভিডিয়ো ছেয়ে গিয়েছিল সমাজমাধ্যমে। তিনি অভিযোগ তোলেন যে দু’বছরের পুরনো ভিডিয়োটি মূলত তাঁকে দলীয় টিকিট না দেওয়ার জন্য প্রচার করা হয়েছিল।

০৬ ১৬

সুনীলের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর প্রার্থী পদ ঘোষণা করার পর বিরোধীরা ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য পুরনো ভিডিয়োটি পুনরায় প্রকাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, সাংসদ থাকাকালীন যে ভিডিয়োটি প্রকাশ করা হয়েছিল তা দিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা হয়। সেই সময় ২ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন পোড়খাওয়া এই রাজনৈতিক নেতা। সেই মামলায় তিন জনকে ইতিমধ্যেই জেলে পাঠানো হয়েছে।

০৭ ১৬

বিধানসভা ভোটে নতুন করে সেই ভিডিয়ো প্রচার করে রাজনৈতিক ফয়দা লুটতে চেয়েছে বিরোধীরা, মত প্রাক্তন সাংসদের। পুরো ব্যাপারটিকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে উল্লেখ করে সুনীল ভোটারদের কাছে আবেদন জানান। ভোটারেরা যেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিভ্রান্তিকর প্রচারে কান না দেন। সীতামঢ়ীর ভোটারেরা অবশ্য সুনীলের প্রতি আস্থা রেখেছেন শেষ পর্যন্ত। অশ্লীল ভিডিয়োর অভিযোগ তেমন ভাবে সীতামঢ়ীর জনমানসে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।

০৮ ১৬

সুনীল কুমার ২০১৯ সালে জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর টিকিটে লোকসভা ভোটে লড়েছিলেন বিহারের সীতামঢ়ী থেকে। সেই আসনে জিতে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৯ সালের আগে অবশ্য তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্য ছিলেন। বিজেপিতে থাকাকালীন ২০০৩ সাল থেকে তিনি চার বার সীতামঢ়ী বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে শামিল হন। ২০১৫ সালে তিনি অবশ্য আরজে়ডির প্রার্থীর কাছে হেরে যান।

০৯ ১৬

৬৪ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদের স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে। যদিও সুনীলের মাথায় ঝুলছে ৩টি মামলার খাঁড়া। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ২১.৬ কোটি টাকা। এ বার তাঁর বিরুদ্ধে আরজেডি-র টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন সুনীল কুমার কুশওয়াহা। দুই সুনীলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জনতা বেছে নেন বিজেপির সুনীলকে। বিজেপির সুনীল যেখানে ১,০৪,২২৬টি ভোট পেয়েছিলেন, সেখানে আরজেডি-র সুনীল পেয়েছেন ৯৮,২৪৩টি ভোট।

১০ ১৬

মিথিলার ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক সংযোগের কারণে সীতামঢ়ী আসনটি গুরুত্বপূর্ণ। বিহারের মিথিলাঞ্চলের এলাকাগুলি রাজনৈতিক ভাবে সংবেদনশীলও বটে। যাদব ও মুসলিম ভোটারদের প্রভাব যথেষ্ট।

১১ ১৬

২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে বিহারের সীতামঢ়ীতে সীতার মন্দির তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নেপালের সীমান্ত ঘেঁষা সীতামঢ়ীকে ঘিরে রয়েছে সীতার জন্মস্থান সংক্রান্ত বিতর্ক। অনেকেই এই অংশটিকে সীতার জন্মস্থান বলে দাবি করেন।

১২ ১৬

নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জেডিইউয়ের এই প্রাক্তন সাংসদ বরাবরই বিজেপি ঘেঁষা। সুনীল বার বারই দাবি করেছেন, তিনি মনেপ্রাণে বিজেপির সঙ্গে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তিনি এ-ও দাবি করেছিলেন যে, বিজেপি নেতাদের কথাতেই তিনি জেডিইউ দলে যোগ দিয়েছিলেন।

১৩ ১৬

২০২৩ সালে বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যের জন্য প্রাক্তন দল জেডিইউ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে সুনীল দলবদলের জল্পনা তৈরি করেছিলেন। দলবিরোধী কথাবার্তার পর সমালোচনা শুরু হতে সুনীল জানিয়েছিলেন, নীতীশ তাঁকে পদত্যাগ করতে বললে তিনি যে কোনও সময় তা করতে রাজি।

১৪ ১৬

২০২০ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গী হয়ে লড়ে জিতলেও ২০২২ সালের অগস্টে এনডিএ ছেড়ে বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের সমর্থন নিয়ে ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার গড়েছিলেন নীতীশ। তার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ধব ঠাকরে, অরবিন্দ কেজরীওয়াল, অখিলেশ যাদবদের দলে টেনে জাতীয় স্তরে বিরোধী জোট গড়ে তুলতে উৎসাহী হন নীতীশ। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে নীতীশ আবার ফিরে যান এনডিএ-তে। এর পরে লোকসভা ভোটে বিহারে ৪০টি আসনের মধ্যে এনডিএ-র ঝুলিতে এসেছিল ৩০টি।

১৫ ১৬

৬ নভেম্বর ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় প্রথম দফায় ১২১টি আসনে ভোট পড়েছিল ৬৫.০৮ শতাংশ। ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় ১২২টি আসনে ৬৮.৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ, সামগ্রিক ভাবে প্রায় ৬৭ শতাংশ। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৫৭ শতাংশ। সে বার ৩৭.২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ১২৫টি আসনে জিতেছিল এনডিএ।

১৬ ১৬

পরিসংখ্যান বলছে, ২০০০ সাল থেকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে মোট ন’বার শপথ নিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ছ’বার বিজেপির সহযোগী হয়ে। তিন বার আরজেডি-কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে। জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমারকে ভোটের প্রচারে ধারাবাহিক ভাবে খোঁচা দিয়েছে বিরোধীরা। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত ভোটের ফল জানিয়েছে, এখনও বিহারবাসীর কাছে তাঁর ভাবমূর্তি অটুট।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement