নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন বিজয় রাজ। কিন্তু অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল থিয়েটারের হাত ধরে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয় করে কেরিয়ারের ঝুলিতে নব্বইটির বেশি ছবি যোগ করে ফেলেছেন তিনি। সাম্প্রতিক কালে হিন্দি ফিল্মজগতের প্রথম সারির কৌতুকাভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন বিজয়। থিয়েটার থেকে বড় পর্দায় এই কেরিয়ারযাত্রা কেমন ছিল অভিনেতার?
১৯৬৩ সালের ৫ জুন উত্তরপ্রদেশের ইলাহাবাদে জন্ম বিজয়ের। দিল্লিতে স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। কলেজে পড়াশোনা চলাকালীন অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর।
দিল্লিতেই একটি নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হন বিজয়। থিয়েটারের মাধ্যমেই অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় তাঁর। নয়াদিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় কাজ করতে শুরু করেন তিনি। প্রতি মাসে সেখান থেকে ১২ হাজার টাকা উপার্জন করতেন বিজয়।
‘পাগল ঘর’ নামে একটি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন বিজয়। ইনস্পেক্টরের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। চার বছর ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। থিয়েটারে মোট ১০ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন বিজয়।
এর পর থিয়েটার ছেড়ে বড় পর্দায় অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেন বিজয়। ১৯৯৮ সালে দিল্লি ছেড়ে মুম্বই চলে যান তিনি। গিরীশ কারনাদের নাটক ‘অগ্নি অউর বরখা’য় ৯০ বছর বয়সি বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিজয়। এই নাটকে বিজয়ের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন বলি অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ।
বলিপাড়ার বিখ্যাত পরিচালক মহেশ মাঠাই এবং মীরা নায়ারের সঙ্গে বিজয়ের আলাপ করিয়ে দেন নাসিরুদ্দিন। বিজয়কে যেন মহেশ এবং মীরা তাঁদের পরবর্তী ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেন তার জন্যও অনুরোধ করেন নাসিরুদ্দিন।
১৯৯৯ সালে মহেশের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘ভোপাল এক্সপ্রেস’ ছবিটি। এই ছবিতে নাসিরুদ্দিন এবং জীনত আমনের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান বিজয়। এই ছবির মাধ্যমেই বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ হয় বিজয়ের।
২০০০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় রামগোপাল বর্মা পরিচালিত ‘জঙ্গল’ ছবিটি। ফারদিন খান, ঊর্মিলা মাতন্ডকর এবং সুনীল শেট্টি অভিনীত এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল বিজয়কে। একই বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় হনসল মেহতা পরিচালিত কমেডি ড্রামা ঘরানার ছবি ‘দিল পে মত লে ইয়ার’। এই ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন বিজয়।
তবে হিন্দি ফিল্মজগতে বিজয় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মীরা নায়ার পরিচালিত ‘মনসুন ওয়েডিং’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। এই ছবিতে অভিনয় করে বহুল প্রশংসা কুড়োন তিনি। এর পর আর কেরিয়ারে পিছন দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি বিজয়কে।
‘মনসুন ওয়েডিং’-এর জনপ্রিয়তার পর বিজয়ের কাছে একের পর এক ছবির প্রস্তাব আসতে থাকে। ‘কোম্পানি’, ‘লাল সালাম’, ‘রোড’, ‘পাঁচ’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবি বিজয়ের কেরিয়ারে যুক্ত হতে থাকে। ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রান’ ছবিতে অভিনয় করে কৌতুকাভিনেতা হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।
২০০৪ সালে রজত কপূরের পরিচালনায় ‘রঘু রোমিও’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন বিজয়। একই বছর ‘যুবা’, ‘আন: মেন অ্যাট ওয়ার্ক’-এর মতো হিন্দি ছবির পাশাপাশি ‘মর্নিং রাগা’ এবং ‘আমেরিকান ডিলাইট’ নামের ইংরেজি ভাষার ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা যায় বিজয়কে।
এক দিকে বলিপাড়ায় নিজের পরিচিতি তৈরি করলেও মাদক রাখার অভিযোগে ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবু ধাবির বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয় বিজয়কে। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিনেতার হ্যান্ডব্যাগ থেকে ২৫ গ্রাম ওজনের মাদক পাওয়া গিয়েছিল।
হিন্দি ছবির পাশাপাশি তামিল এবং মালয়ালম ভাষার ছবিতে অভিনয় করেছেন বিজয়। ‘ধামাল’, ‘বম্বে টু গোয়া’, ‘আনওয়ার’, ‘ওয়েলকাম’, ‘দিল্লি ৬’, ‘দিল্লি বেলি’, ‘স্ত্রী’, ‘গলী বয়’, ‘ড্রিম গার্ল’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন বিজয়। কৌতুকরসে পরিপূর্ণ চরিত্রেই নয়, গুরুগম্ভীর চরিত্রেও বিজয়ের অভিনয় যে যথাযথ তারও প্রমাণ দিয়েছেন তিনি।
বড় পর্দার পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন ছবি এবং ওয়েব সিরিজ়ে কাজ করেছেন বিজয়। ‘চপস্টিকস’, ‘মেড ইন হেভেন’, ‘কানপুরিয়ে’, ‘গুলাবো সিতাবো’, ‘লুটকেস’, ‘কেয়া মেরি সোনম গুপ্তা বেওয়াফা হ্যায়?’ এবং ‘শেরনি’র মাধ্যমে ওটিটির পর্দায় দেখা গিয়েছে অভিনেতাকে।
‘শেরনি’ ছবির শুটিং চলাকালীন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন বিজয়। কানাঘুষো শোনা যায়, ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর এক বিলাসবহুল হোটেল থেকে বিজয়কে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্র পুলিশ।
বিজয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘শেরনি’ ছবির শুটিং চলাকালীন দলের এক মহিলা সদস্যকে যৌন হেনস্থা করেন বিজয়। ওই মহিলার দাবি, শুটিংয়ের সময় মধ্যপ্রদেশের বালাঘাটের একটি হোটেলে উঠেছিলেন দলের সকলে। সেই হোটেলে ছিলেন বিজয়ও। সেখানেই ওই মহিলাকে বিজয় হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। পরে যদিও গ্রেফতারির দিনই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান অভিনেতা।
২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর পরিচালনায় ‘গাঙ্গুবাই কাথিওয়াড়ি’ ছবিতে বিজয়ের অভিনয় প্রশংসা পায়। অভিনয় ছাড়াও পরিচালনার কাজে হাত পাকিয়েছেন তিনি। ‘কেয়া দিল্লি কেয়া লাহোর’ ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিজয়। এই ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি।
চলতি মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে ‘ড্রিম গার্ল ২’। একতা কপূর এবং শোভা কপূর প্রযোজিত এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে আয়ুষ্মান খুরানা, অনন্যা পান্ডে এবং পরেশ রাওয়ালের মতো বলি তারকাদের। এই ছবিতেই পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে বিজয়কে।