নব্বইয়ের দশকে বড় পর্দা মাত করে রেখেছিলেন বলিপাড়ার ‘সঞ্জু’ সঞ্জয় দত্ত এবং ‘ভাইজান’ সলমন খান। কখনও তাঁদের একক ছবির মাধ্যমে আবার কখনও দুই অভিনেতার যুগলবন্দিতে দর্শকমনে জায়গা করে নিয়েছিল একাধিক ছবি। তবে এই দুই অভিনেতার প্রত্যাখ্যানেই এক নবাগত তারকা হিন্দি ফিল্মজগতে তাঁর পসার জমিয়ে ফেলেছিলেন। বক্স অফিসকে উপহার দিয়েছিলেন একটি ব্লকবাস্টার ছবি।
পুলিশের চেয়ে চোরের বুদ্ধি বেশি! পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে বার বার পালিয়ে যাচ্ছে চোর। আদিত্য চোপড়ার প্রযোজনায় ‘ধুম’ ছবিতে নেতিবাচক চরিত্রকে পর্দায় বড় করে দেখানো হয়েছিল বটে। তবে এই চরিত্রই যে বক্স অফিস কাঁপিয়ে ফেলবে তা বোধ হয় ঠাহর করে উঠতে পারেননি সঞ্জয় এবং সলমন।
২০০৪ সালে যশরাজ ফিল্মস প্রযোজনা সংস্থার তরফে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ধুম’। এই ছবিতে পুলিশের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল অমিতাভ বচ্চনের পুত্র অভিষেক বচ্চনকে। তিনি এই ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হন।
‘ধুম’ ছবিতে পুলিশের বন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল আদিত্যের ভাই উদয় চোপড়াকে। রিমি সেন এবং এষা দেওলকেও দুই অভিনেত্রীর চরিত্রের জন্য ঠিক করে ফেলেছিলেন ছবিনির্মাতারা।
গোল বেঁধেছিল কবীর চরিত্র নিয়ে। নেতিবাচক চরিত্রে কোন বলি তারকা অভিনয় করবেন তা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না ‘ধুম’ ছবির নির্মাতারা। যাঁর কাছেই প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনিই খালি হাতে ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন নির্মাতাদের।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, কবীরের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথমে সলমনকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ‘ধুম’ ছবির নির্মাতারা। কিন্তু এই ধরনের ধূসর চরিত্রে অভিনয় করতে চাননি সলমন।
সলমন প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে ‘ধুম’ ছবির নির্মাতারা হাজির হন সঞ্জয়ের কাছে। কিন্তু কোনও অজানা কারণে তিনি সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন।
মাথায় হাত পড়ে নির্মাতাদের। তাঁরা প্রথমে যে দুই অভিনেতাকে পছন্দ করেছিলেন, দু’জনেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন। এ বার উপায়?
বড় মাপের বলি তারকাদের বাদ দিয়ে এ বার নবাগত অভিনেতাদের দিকে নজর ফেললেন ‘ধুম’ ছবির নির্মাতারা। তাঁদের মনেও ধরল দু’জনকে।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, বলি অভিনেতা দিনো মারিয়া এবং জন আব্রাহমকে পছন্দ করেছিলেন ‘ধুম’ ছবির নির্মাতারা। দু’জনেই তখন বড় পর্দার উঠতি অভিনেতা।
‘ধুম’ ছবির নির্মাতারা ভেবেছিলেন যে, আগে জনকে প্রস্তাব দেবেন। তিনি যদি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি না হন তা হলে দিনোর সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা।
পরিকল্পনামাফিক জনকে ‘ধুম’ চরিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি জন।
মডেল হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেন জন। পূজা ভট্টের পরিচালনায় ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জিস্ম’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় জনের।
‘ধুম’ ছবির প্রস্তাব যখন জনকে দেওয়া হয় তখন তাঁর কেরিয়ারের ঝুলিতে একটি মাত্র ছবি। তাই চটজলদি ‘ধুম’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য রাজি হয়ে যান ইন্ডাস্ট্রির নবাগত নায়ক।
২০০৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ধুম’। ১১ কোটি টাকার বাজেটে তৈরি ছবি বক্স অফিস থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ব্যবসা করে।
‘ধুম’ ছবিটি বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার ছবির তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলে। জনের অভিনয়ও দর্শকের কাছে উচ্চকিত প্রশংসা পায়। রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়ে যান জন।
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, জনের অভিনয় দেখেই দর্শক ‘ধুম’-এর প্রেমে পড়েন। পরবর্তীকালে ‘ধুম ২’তে হৃতিক রোশন এবং ‘ধুম ৩’তে আমির খানকে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়।