রবিবার সকালে আচমকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন চেতেশ্বর পুজারা। সমাজমাধ্যমে অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন ৩৬ বছরের ডানহাতি ব্যাটার। একসময়ে ভারতীয় টেস্ট দলের মিডল অর্ডারের স্তম্ভ বলা হত তাঁকে।
দেশ হোক বা বিদেশ, টেস্টে পুজারা সফল হয়েছেন প্রায় সব ক্ষেত্রেই। রাহুল দ্রাবিড়ের পরবর্তী ভারতীয় টেস্ট দলে তিন নম্বরে বড় ভরসা হয়ে উঠেছিল পুজারার ব্যাট।
৩৬ বছর বয়সি সৌরাষ্ট্রের ডানহাতি ব্যাটারের টেস্ট অভিষেক ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। কারা ছিলেন সেই দলে? এখন কী করছেন পুজারার অভিষেক টেস্টের সতীর্থেরা?
মুরলি বিজয়: বেঙ্গালুরুর সেই ম্যাচে কথা বলেছিল বিজয়ের ব্যাট। প্রথম ইনিংসে ১৩৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসেও ৩৭ রান করে ইনিংসের ভাল শুরু করেছিলেন তিনি।
দেশের হয়ে ৬১টি টেস্ট খেলেছেন ডানহাতি ব্যাটার। ৩৮-এর উপর গড়ে করেছেন প্রায় চার হাজার রান। ১২টি শতরান রয়েছে বিজয়ের নামের পাশে। ২০২৩-এর ৩০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন বিজয়।
বীরেন্দ্র সহবাগ: বিজয়ের সঙ্গে ওপেন করেছিলেন বীরেন্দ্র সহবাগ। প্রথম ইনিংসে স্বভাবসিদ্ধ বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট করতে শুরু করেন সহবাগ। ২৮ বলে ৩০ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৭ রান করেন ডানহাতি।
কেরিয়ারে ১০৪টি টেস্ট খেলেছেন সহবাগ। প্রায় ৫০ গড়ে করেছেন সাড়ে আট হাজারেরও বেশি রান। টেস্টে ২৩টি শতরানের মালিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর অবসর নেন।
রাহুল দ্রাবিড়: বেঙ্গালুরুর সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে তিন নম্বরে নেমেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। তবে রান পাননি। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য ২১ রানে অপরাজিত থেকে যান ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দ্য ওয়াল’।
কেরিয়ারে ১৬৪টি টেস্ট খেলেছেন ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটার। ৫২.৩১ গড়ে করেছেন ১৩২৮৮ রান। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান দ্রাবিড়। পরে তিনি ফিরে আসেন জাতীয় দলের কোচ হিসাবে।
সচিন তেন্ডুলকর: বেঙ্গালুরু ম্যাচের নায়ক। প্রথম ইনিংসে ২১৪ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৫৩ রান করেন সচিন। তাঁর ব্যাটের সৌজন্যেই সহজে ম্যাচ জেতে ভারত।
কেরিয়ারে ২০০ টেস্ট খেলেছেন ‘লিটল মাস্টার’। করেছেন ১৫৯২১ রান। ৫১টি শতরান রয়েছে তাঁর টেস্ট কেরিয়ারে। ২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর ক্রিকেট থেকে অবসর নেন সচিন।
চেতেশ্বর পুজারা: অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসটা ভাল হয়নি চেতেশ্বর পুজারার। মাত্র চার রান করে জনসনের বলে আউট হন তিনি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে জাত চিনিয়েছিলেন। হরিৎজ়ের বলে আউট হওয়ার আগে ৭২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন পুজারা।
কেরিয়ারে দেশের হয়ে ১০৩টি টেস্ট খেলেছেন পুজারা। ৪৩.৬ গড়ে করেছেন ৭১৯৫ রান। ১৯টি শতরান রয়েছে ডানহাতি ব্যাটারের নামের পাশে। গত ২৪ অগস্ট সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন পুজারা।
সুরেশ রায়না: বেঙ্গালুরুর ম্যাচে ছ’নম্বরে নেমেছিলেন সুরেশ রায়না। ৩২ রান করার পাশাপাশি প্রথম ইনিংসে রিকি পন্টিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটও নেন তিনি।
রায়নার টেস্ট কেরিয়ার দীর্ঘ ছিল না। দেশের হয়ে মাত্র ১৮টি টেস্ট খেলেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটার। একটাই শতরান করেছিলেন তিনি। টেস্টে ১৩টি উইকেটও নিয়েছিলেন রায়না। ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন রায়না।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি: সাত নম্বরে নেমেছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সে দিনের ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৮৭ বলে ৩০ রান করেন অধিনায়ক। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে নামতে হয়নি ‘ক্যাপ্টেন কুল’কে।
কেরিয়ারে ৯০টি টেস্ট খেলেছিলেন ধোনি। ৩৮ গড়ে করেছেন ৪৮৭৬ রান। ছ’টি শতরানও রয়েছে তাঁর নামের পাশে। ২০২০ সালের ১৫ অগস্ট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
হরভজন সিংহ: পুজারার অভিষেক ম্যাচে স্পিন বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন হরভজন সিংহ। প্রথম ইনিংসে ৪টি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে দু’টি উইকেট নেন ভাজ্জি।
কেরিয়ারে পুজারার সমসংখ্যক টেস্ট খেলেছেন হরভজন। ১০৩টি টেস্টে ৪১৭টি উইকেট নিয়েছেন এই অফস্পিনার। দু’টি শতরানও করেছেন তিনি। ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন হরভজন সিংহ।
জ়াহির খান: জ়াহিরের হাতে ছিল সেই ম্যাচের পেস ব্যাটারির দায়িত্ব। প্রথম ইনিংসে একটি উইকেট নিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট নিয়ে ভারতের জয়ের পথ সুগম করেন বাঁহাতি পেসার।
৯২ টেস্টের কেরিয়ারে ৩১১ উইকেট নিয়েছেন ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা বাঁহাতি পেসার। পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন ১১ বার। নামের পাশে তিনটি অর্ধশতরানও রয়েছে তাঁর। ২০১৭ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানান জ়াহির খান।
প্রজ্ঞান ওঝা: হরভজনের সঙ্গে স্পিন বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন প্রজ্ঞান ওঝা। দুই ইনিংসেই তিনটি করে উইকেট নিয়ে ভারতের জয়ে বড় ভূমিকা নেন বাঁহাতি স্পিনার।
জাতীয় দলের হয়ে খুব বেশি দিন খেলার সুযোগ পাননি ওঝা। দেশের হয়ে মাত্র ২৪টি টেস্ট খেলেন তিনি। নেন ১১৩টি উইকেট। ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন বাঁহাতি স্পিনার।
শ্রীসন্থ: বেঙ্গালুরু ম্যাচে জ়াহিরের সঙ্গে পেস বিভাগের দায়িত্ব সামলেছিলেন শ্রীসন্থ। প্রথম ইনিংসে উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে দু’টি উইকেট নেন ডানহাতি পেসার।
বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় কেরিয়ার দীর্ঘায়িত হয়নি শ্রীসন্থের। দেশের হয়ে মাত্র ২৭টি টেস্ট খেলেন ডানহাতি জোরে বোলার। নিয়েছেন ৮৭টি উইকেট। ২০২২ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন শ্রীসন্থ।