Chinese Debt Trap

ঋণ উদ্ধারে ‘টুঁটি চেপে’ টাকা আদায়! ২,২০০ কোটি ডলার ঘরে ফেরাতে মরিয়া ‘সুদখোর’ চিন, মাফ নেই ‘বন্ধু’ পাকিস্তানেরও?

চলতি বছরে বিশ্বের ৭৫টি গরিব দেশের থেকে ২,২০০ কোটি ডলারের ঋণ ফেরত পেতে কোমর বেঁধে নামছে চিন। অস্ট্রেলীয় গবেষণা সংস্থার রিপোর্টে দুনিয়া জুড়ে পড়ে গিয়েছে শোরগোল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৫ ০৭:৫৭
Share:
০১ ১৯

এ বার সুদখোর মহাজনের ভূমিকায় চিন! গরিব দেশের ‘গলা টিপে’ টাকা আদায়ে কোমর বেঁধে নামতে চলেছে বেজিং। চলতি বছরে দু’হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন ড্রাগনভূমির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এতে দুনিয়া জুড়ে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা তীব্র হল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

০২ ১৯

সম্প্রতি এই ইস্যুতে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে অস্ট্রেলিয়ার লোই ইনস্টিটিউট নামের একটি গবেষণা সংস্থা। সেখানে বলা হয়েছে, এ বছর বিশ্বের দরিদ্রতম এবং আর্থিক ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ৭৫টি দেশ থেকে ঋণের অর্থ সংগ্রহ করবে চিন। সেই টাকার অঙ্ক ২,২০০ কোটি ডলার। কারণ বর্তমানে ঋণ সংগ্রহকারী হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে চাইছে বেজিং।

Advertisement
০৩ ১৯

লোই ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলিকে বিপুল পরিমাণে ঋণ দিয়েছে জিনপিং সরকার। সংশ্লিষ্ট দেশগুলিতে চলছে বেজিঙের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প বা বিআরআইয়ের (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) কাজ। বর্তমানে এর বকেয়া বিলের মাত্রা নতুন করে দেওয়া ঋণের অর্থের চেয়ে বেশি হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই ওই অর্থ পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে ড্রাগন প্রশাসন।

০৪ ১৯

অস্ট্রেলীয় গবেষকেরা মনে করেন, চিন আর নিজেকে মূলধন সরবরাহকারী দেশ হিসাবে তুলে ধরতে চায় না। পুরনো ঋণের টাকা সংগ্রহ করে তহবিল পূরণ করাই বেজিঙের মূল উদ্দেশ্য। তবে এতে প্রেসিডেন্ট শি কতটা সফল হবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ এই ৭৫টি দেশের অধিকাংশেরই ওই টাকা ফেরত দেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা নেই।

০৫ ১৯

সূত্রের খবর, ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে রেকর্ড পরিমাণে ঋণ প্রদান করে চিনা প্রশাসন। লোই ইনস্টিটিউটের গবেষক রাইলি ডিউকের কথায়, ‘‘ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক চাপের কারণে বকেয়া ঋণ পুনরুদ্ধারে নেমে সমস্যার মুখে পড়েছে বেজিং। কিন্তু এর জেরে ঘরোয়া আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় এ ব্যাপারে আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না প্রেসিডেন্ট শি।’’

০৬ ১৯

ডিউক মনে করেন, ২০২০ সাল থেকে ঋণ সংগ্রহকারীর ভূমিকা নিতে চেয়েছিল চিন। কিন্তু, ওই সময় কোভিড অতিমারি চলে আসায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় বেজিং। পরবর্তী বছরগুলিতে ধীরে ধীরে এ ব্যাপারে তৎপরতা বাড়াতে থাকে ড্রাগন সরকার। ফলে বিশ্বের ৭৫টি গরিব দেশকে আপাতত ‘সঙ্কটকালীন সময়’-এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে বলে স্পষ্ট করেছে ওই অস্ট্রেলীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক।

০৭ ১৯

গত ২৭ মে অবশ্য এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেয় চিনের বিদেশ মন্ত্রক। সেখানে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ঋণের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য করেছে বেজিং। কিন্তু এই নিয়ে কয়েকটি দেশে গুজব ছাড়াতে শুরু করেছে। ড্রাগনভূমির বদনাম যে বরদাস্ত করা হবে না, বিবৃতিতে তা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়।

০৮ ১৯

চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, ‘‘উন্নয়নশীল দেশগুলিকে অর্থসাহায্য করা এবং সেখানে বিনিয়োগ অন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার। বিশ্বের অনেক দেশই এটা করে থাকে। আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে বেজিংও ওই ধরনের কিছু বিনিয়োগ করেছে। এতে বিতর্কের কিছু নেই।’’ ইচ্ছাকৃত ভাবে বিষয়টিকে জটিল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

০৯ ১৯

মাও নিঙের যুক্তি, ঋণ দেওয়া এবং তা আদায় করার বিষয়টি বহু পাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে। এখানে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের কোনও বিষয় নেই। কিন্তু, ঋণের টাকা ফেরত পেতে চিন হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। বেজিঙের তরফে এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

১০ ১৯

কিন্তু অস্ট্রেলীয় গবেষকদের সংস্থাটি চিনের এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের দাবি, বিআরই প্রকল্পটি পুরোপুরি প্রেসিডেন্ট শির মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁর নির্দেশেই চিনা প্রতিষ্ঠানগুলি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে সেখানে আর্থিক লোকসান হলে বা ঋণ আদায় না হলে দায় বর্তাবে জিনপিঙের উপরেই। সেটা কখনওই মেনে নেবেন না তিনি।

১১ ১৯

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে বিআরআই প্রকল্প চালানোর নেপথ্যে চিনের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। সেটা হল, ওই দেশে প্রভাব বিস্তার করা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এর জন্য সেখানে নৌঘাঁটি বা বায়ুসেনা ঘাঁটি পর্যন্ত তৈরি করতে পিছপা হয়নি বেজিং। উদাহরণ হিসাবে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের কথা বলা যেতে পারে। ৯৯ বছরের লিজ়ে ওই এলাকাটিকে একরকম কব্জাই করেছে ড্রাগন সরকার।

১২ ১৯

চিনের বিআরআই প্রকল্প সবচেয়ে বেশি মার খায় কোভিড অতিমারির সময়। এর ফলে বহু জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে পারেনি বেজিং। উল্টে আরও বেশি করে আর্থিক বোঝা এসে চাপে তাদের ঘাড়ে। অন্য দিকে গরিব দেশগুলির ওই সময় আর্থিক সঙ্কটের সূচক আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। এতে শি সরকারের কপালে পড়ে চিন্তার ভাঁজ।

১৩ ১৯

সরকারি সূত্রে খবর, ১২০টির মধ্যে ৫৪টি উন্নয়নশীল দেশ চিনের ঋণের জালে এমন ভাবে জড়িয়ে পড়েছে যে তাদের সুদেমূলে ‘প্যারিস ক্লাব’-এর প্রদেয় সম্মিলিত ঋণের চেয়ে বেশি টাকা ফেরত দিতে হবে। পশ্চিমি দেশগুলির আর্থিক সঙ্কট দূর করার উদ্দেশ্য এই ‘প্যারিস ক্লাব’কে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তির ঋণ দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠান।

১৪ ১৯

গবেষকদের দাবি, ন’টি প্রতিবেশীর মধ্যে সাতটিকে বিপুল অঙ্কের ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলেছে চিন। সেই তালিকায় রয়েছে লাওস, পাকিস্তান, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তান। এরা আর কখনও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে বেশ সন্দেহ রয়েছে।

১৫ ১৯

অস্ট্রেলীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্কের গবেষক ডিউক বলেছেন, ‘‘২০১৯ সাল থেকে এই দেশগুলি চিনের থেকে আরও বেশি করে ঋণ নিতে শুরু করে। কারণ, ওই সময়ে এ ব্যাপারে নতুন করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বেজিং। ২০১৮ সাল থেকে কিন্তু ড্রাগনভূমিতে আর্থিক মন্দা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তার পরও ঝুঁকি নিতে পিছপা হননি প্রেসিডেন্ট জিনপিং।’’

১৬ ১৯

আর্থিক মন্দা শুরু হওয়ার পর প্রতিবেশী দেশগুলিকে যে পরিমাণ অর্থ বিলি করা হয়েছে, বর্তমানে তার এক চতুর্থাংশ আদায় করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আসরে নেমেছে চিন। গত বছর ‘বন্ধু’ পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ ঋণদাতা ছিল বেজিং। বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ড্রাগন সরকারের থেকে ২,৯০০ কোটি ডলার ঋণ পায় ইসলামাবাদ।

১৭ ১৯

বর্তমানে একেবারে দেউলিয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছে পাকিস্তান। ঋণের উপরে ভিত্তি করেই চলছে ইসলামাবাদের অর্থনীতি। তাদের প্রাপ্ত ঋণের ২২ শতাংশ আসছে চিনের থেকে। বাকি ১৮ শতাংশ বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং ১৫ শতাংশ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের থেকে তারা পাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

১৮ ১৯

চলতি বছরের মার্চে ‘চিন পাকিস্তান আর্থিক বারান্দা’ বা সিপিইসির (চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর) কাজ দ্রুত শেষ করতে আরও ছ’হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নেয় চিন। ফলে এর থেকে ২০০ কোটি ডলার পাবে পাক সরকার। উল্লেখ্য, এই সিপিইসি জিনপিঙের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের আওতাভুক্ত।

১৯ ১৯

২০১৩ সাল থেকে বিআরআই প্রকল্প শুরু করেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এর মাধ্যমে এশিয়াকে ইউরোপ এবং আফ্রিকার সঙ্গে সংযুক্ত করে নতুন বাণিজ্যিক রাস্তায় জুড়ে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে বেজিঙের। যদিও এই বিআরআইয়ের জন্য ড্রাগনভূমিতে আর্থিক মন্দা বাড়ছে বলেও মনে করেন আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement