Cyrus Mistry

টাটাদের সঙ্গে ৭০ বছরের সম্পর্ক ভাঙেন, ৩৮ বছরে হাল ধরেন টাটা সন্সের, কে এই সাইরাস মিস্ত্রি?

‘টাটা’ পদবিহীন হলেও এককালে টাটাদের ব্যবসা সামলেছিলেন সাইরাস মিস্ত্রি। টাটা গোষ্ঠীর ষষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসাবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য সাইরাসের আগে রয়েছেন নওরোজি সাকলতওয়ালা।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:৫৭
Share:
০১ ১৯

সাইরাস পালোনজি মিস্ত্রি। রতন টাটার এককালের উত্তরাধিকারী। বয়স মাত্র ৫৪। ঝড়ের গতিতে উত্থানের মতোই সাইরাসের বিদায় নেওয়াও আকস্মিক হয়ে রইল। রবিবার দুপুর সওয়া ৩টে নাগাদ মহারাষ্ট্রের পালঘরের কাছে পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হল সাইরাসের। সেই সঙ্গে দাঁড়ি পড়ল কর্পোরেট দুনিয়ার এক অধ্যায়ের। কে এই সাইরাস মিস্ত্রি?

০২ ১৯

পদবিতে টাটা নেই। তবে সাইরাস হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি এককালে ‘টাটা’ পদবিহীন হলেও টাটাদের ব্যবসা সামলেছিলেন। টাটা গোষ্ঠীর ষষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসাবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য সাইরাসের আগে রয়েছেন নওরোজি সাকলতওয়ালা। ১৯৩২ সালে থেকে ’৩৮ পর্যন্ত আমৃত্যু যিনি এই গোষ্ঠীর তৃতীয় চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন।

Advertisement
০৩ ১৯

১৯৬৮ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন বম্বে প্রেসিডেন্সিতে এক পার্সি পরিবারে জন্ম সাইরাসের। মা প্যাটসি পেরিন ডুবাস ছিলেন আইরিশ। বাবা পালোনজি মিস্ত্রিও পরে আয়ারল্যান্ডের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন। সাইরাসের দাদা সাপুর মিস্ত্রিও সে পথ বেছে নেন। তবে সে পথে হাঁটেননি সাইরাস।

০৪ ১৯

সাইরাসদের পরিবারের অনেকেই চাকরির বদলে ব্যবসা বেছে নিয়েছিলেন। এক শতকের বেশি আগে সেই তিরিশের দশকে টাটা সন্সের কিছুটা স্বত্ব দখল নিয়েছিলেন সাইরাসের ঠাকুরদা সাপুরজি মিস্ত্রি। বাবাও ব্যবসার হাল ধরেছিলেন। সে পথেই এগোন সাইরাস।

০৫ ১৯

স্কুলের পড়াশোনার পর লন্ডনে পাড়ি দিয়েছিলেন সাইরাস। ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের উচ্চশিক্ষা শেষে প্রবেশ লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রির পর লন্ডন বিজনেস স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। সেখানকার পাঠ চুকিয়ে হাসিল করে ইন্টারন্যাশনাল এগজিকিউটিভ মাস্টার্স ইন ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি। তা-ও আবার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে।

০৬ ১৯

বিদেশ থেকে ঘরে ফিরে পারিবারিক ব্যবসায় নেমে পড়েন সাইরাস। এ বার প্রবেশ সাপুরজি পালোনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড-এ। ১৯৯১ সালে সাইরাস ওই সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন। সেই সংস্থাটি ছিল সাপুরজি পালোনজি গোষ্ঠীর অংশ।

০৭ ১৯

পারিবারিক গোষ্ঠীর একটি ব্যবসায়িক সংস্থার ডিরেক্টরের পদ থেকে দেশের অন্যতম নামী সংস্থায় চেয়ারম্যান— সাইরাসের উত্থান ছিল আক্ষরিক অর্থেই চোখে পড়ার মতো।

০৮ ১৯

২০১৩ সালে ‘দ্য ইকনমিস্ট’ নামে ব্রিটিশ সাপ্তাহিকের একটি প্রতিবেদনে সাইরাসকে ব্রিটেন এবং ভারত, দু’দেশেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপতির আখ্যা দিয়েছিল।

০৯ ১৯

বস্তুত, টাটাদের সঙ্গে শাপুরজি পালোনজিদের সম্পর্ক ছিল ৭০ বছরের। ২০০৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর টাটা সন্সের বোর্ডে যোগ দেন সাইরাস। তার বছরখানেক আগে যেখান থেকে সাইরাসের বাবা অবসর নিয়েছিলেন।

১০ ১৯

টাটাদের সঙ্গে মিস্ত্রিদের শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল, তা নয়। তা গড়িয়েছিল পারিবারিক সম্পর্কেও। পালোনজি মিস্ত্রির মেয়ে তথা সাইরাসের বোন আলু মিস্ত্রি বিয়ে করেছিলেন রতন টাটার সৎভাই নোয়েল মিস্ত্রিকে। যদিও ব্যবসার তিক্ততা সে সব সম্পর্ককে ছাপিয়ে গিয়েছিল।

১১ ১৯

টাটা গোষ্ঠীর একাধিক সংস্থার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিলেন সাইরাস। টাট এলেক্সি লিমিটেডের বা টাটা পাওয়ার কোম্পানির ডিরেক্টর হিসাবেও দায়িত্বে ছিলেন। প্রথম সংস্থায় ১৯৯০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এবং পরের সংস্থায় ২০০৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কার্যভার সামলেছে

১২ ১৯

২০১৩ সালে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সে সময় তাঁর কাঁধে টাটাদের বিভিন্ন সংস্থার অতিরিক্ত দায়িত্বও ছিল। তার মধ্যে ছিল, টাটা স্টিল, টাটা মোটরস, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস, টাটা পাওয়ার, টাটা টেলিসার্ভিসেস, ইন্ডিয়ান হোটেলস, টাটা গ্লোবাল বেভারেজেস এবং টাটা কেমিক্যালসের মতো সংস্থা।

১৩ ১৯

টাটাদের সঙ্গে সাইরাসের মধুর সম্পর্কে আচমকা দাঁড়ি পড়েনি। ২০১২ সালে রতন টাটার উত্তরাধিকারী হিসাবে সাইরাসকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যানের পদে বসানো হয়েছিল সাইরাসকে।

১৪ ১৯

টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হওয়ার চার বছরের মাথায় আচমকাই ছন্দপতন। ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর সাইরাসকে তাঁর পদ থেকে অপসারিত করে টাটা সন্সের বোর্ড। সে পদে বসানো হয় রতন টাটার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নটরাজন চন্দ্রশেখরনকে। এই ঘটনা নিয়েই শুরু হয় আইনি যুদ্ধ। যার জল গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। যার জেরে টাটা এবং মিস্ত্রিদের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে গিয়েছিল।

১৫ ১৯

টাটা গোষ্ঠীর সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতীয় কোম্পানি আইন আবেদন ট্রাইবুন্যালে (ন্যাশনাল ল’ অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল বা এনসিএলএটি) যান মিস্ত্রি।

১৬ ১৯

টাটাদের সঙ্গে মিস্ত্রিদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক খতিয়ে দেখলে কী নজরে পড়ে? টাটা গোষ্ঠীর হোল্ডিং সংস্থা টাটা সন্সের ১৮.৩৭ শতাংশ ( যা এখন ১৮.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে) অংশীদারি ছিল সাপুরজি পালোনজি গোষ্ঠীর (এসপি গোষ্ঠী) হাতে। যার প্রোমোটার ছিল সাইরাস মিস্ত্রির পরিবার। বস্তুত, টাটা সন্সে টাটাদের হাতে থাকা শেয়ারের বাইরে সবচেয়ে বেশি শেয়ার ছিল এসপি গোষ্ঠীর হাতে।

১৭ ১৯

যদিও টাটা সন্স থেকে সাইরাসের অপসারণের পরেই টাটা-মিস্ত্রিদের সম্পর্ক তিক্ততা শুরু হয়। বাগ্‌যুদ্ধ পরিণত হয় আইনি লড়াইয়ে। টাটাদের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডারদের দমিয়ে রাখার এবং টাটা সন্সের পরিচালনায় অব্যবস্থার অভিযোগ করেছিল সাইরাসের পরিবার। এবং সাইরাসকে সরানোর বিরুদ্ধেও আবেদন করেছিল।

১৮ ১৯

কর্পোরেট ইতিহাসের অন্যতম তিক্ত ও দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে জয়ী হয়েছিল টাটা গোষ্ঠী। ২০১৬ সালে সাইরাসকে আচমকা টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্তকে দমনমূলক তকমা দিয়েছিল এনসিএলএটি। তবে ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্ট তাকেই সঠিক বলে রায় দেয়।

১৯ ১৯

সাইরাসকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহালের জন্য এনসিএলএটি-র নির্দেশও খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতি এসএ বোবডে, বিচারপতি এএস বোপান্না এবং ভি রামসুব্রহ্মণ্যনের বেঞ্চ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement