দিল্লির লালকেল্লার সামনে সিগনালে থামা এক গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য দেশ জুড়ে। আত্মঘাতী হামলা, না কি বিস্ফোরণের নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
পুলিশের সঙ্গে ঘটনার তদন্ত করছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত এক জনকে আটক করা হয়েছে। নাম মহম্মদ সলমন।
জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে একটি ছোট গাড়ি গতি কমিয়ে লালকেল্লার কাছে সুভাষ মার্গ সিগনালে দাঁড়ায়। তখনই আচমকা বিস্ফোরণ ঘটে ওই গাড়িতে।
বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। টুকরো টুকরো হয়ে যায় গাড়িটি। বিস্ফোরণস্থলের অদূরেই ছিল গৌরী শঙ্কর এবং জৈন মন্দির।
সোমবার দিল্লির বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে আট জনের। জখমও হয়েছেন পথচলতি অনেকে। বিস্ফোরণের জেরে লালকেল্লা মেট্রো গেট এবং আশপাশের কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই ছিল যে আশপাশের বহু গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে লালকেল্লার ওই চত্বরের একাধিক ছবি এবং ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও সে সব ছবি এবং ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।
সেই সব ছবি-ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, বিস্ফোরণের পর লালকেল্লার কাছে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। আতঙ্কে দৌড়োদৌড়ি করছেন মানুষ। কেউ কেউ ঘটনাস্থল থেকে দূরে পালানোর চেষ্টা করছেন। কেউ আবার কৌতূহলের বশে সে দিকেই ছুটছেন। সকলের চোখে-মুখে আতঙ্ক।
কিছু ছবিতে দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি গাড়ি দাউ দাউ করে জ্বলছে। গাড়ির ভাঙা অংশ ছড়িয়ে রয়েছে রাস্তা জুড়ে। নিকটবর্তী অনেক গাড়ির জানলার কাচ ভেঙে গিয়েছে। পিচের রাস্তায় বিস্ফোরণের ছাপ সর্বত্র।
দিল্লিতে লালকেল্লার সামনে গাড়িতে বিস্ফোরণের পর রাস্তায় নিহত ব্যক্তিদের দেহাংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখেন অনেকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই এখনও বিস্ফোরণের ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ বলছেন, এত জোরে বিস্ফোরণের শব্দ আগে কখনও শোনেননি। বিস্ফোরণের পর থেকে আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন তাঁরা সকলেই।
বিস্ফোরণের পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় দমকলের অন্তত ২০টি ইঞ্জিন। দমকলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
তার পরেই ঘটনাস্থলে একে একে পৌঁছোয় এনএসজি, এনআইএ, ফরেন্সিক দল। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করার কাজ চলছে।
প্রথমে মনে করা হয়েছিল দিল্লির লালকেল্লা মেট্রোর পার্কিংয়ে দাঁড়ানো গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে পরে দিল্লি পুলিশ বিষয়টি স্পষ্ট করে। বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই ছিল যে আশপাশের অন্তত ২২টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া গাড়িটি হুন্ডাই আই২০। সূত্রের খবর, গাড়িটির নম্বরপ্লেট হরিয়ানার। হরিয়ানার বাসিন্দা মহম্মদ সলমনের নামে রেজিস্ট্রেশন ছিল আই২০ গাড়িটির। তাঁকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় সলমন দাবি করেছেন, তিনি এখন আর ওই গাড়ির মালিক নন। গাড়িটি তিনি তারেক নামে পুলওয়ামার এক বাসিন্দার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।
তবে গাড়ির নথিপত্রে নাম এখনও পরিবর্তন হয়নি। গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় ইতিমধ্যে ইউএপিএ-র ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। যুক্ত করা হয়েছে বিস্ফোরক আইনের যথাযথ ধারাও।
দিল্লিতে লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের পর আশপাশের এলাকার সব সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করতে শুরু করেছে পুলিশ। দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চলছে বলেও খবর।