কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপাবলি উৎসবে সেজে ওঠে গোটা দেশ। আলোর উৎসবের ঝলকে কেটে যায় অমানিশা। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, এই দিনে আপনার রাশি অনুসারে দান করলে দেবী লক্ষ্মী সন্তুষ্ট হন। ধনতেরস থেকে শুরু করে ভাইফোঁটা পর্যন্ত ৫ দিন ধরে কিছু জিনিস দান করলে বর্ষিত হবে ধনদেবীর আশীর্বাদ।
পৌরাণিক কাল থেকেই বিশেষ তিথিতে দানের প্রথা প্রচলিত রয়েছে। বেদ ও পুরাণেও দানের গুরুত্ব বিশদ ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দীপাবলি একটি অতি প্রাচীন উৎসব। সেই পুণ্যতিথিতে দান করলে যে সৌভাগ্য লাভ হয় তার প্রভাবে সংসারে সুখ ও শান্তি বিরাজ করে। তার সঙ্গে ধনপ্রাপ্তির সুযোগ বাড়ে।
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, দীপাবলি উৎসবের দিন রাশিচক্র অনুসারে দান করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে কোন রাশি কী কী বস্তু দান করলে সুফল লাভ করবেন তারই হদিস রইল।
মেষ: রাশিচক্রের প্রথম রাশি মেষ রাশির জাতক-জাতিকাদের এই বিশেষ তিথিতে বস্ত্রদান করতে বলা হয়। এ ছাড়াও এই শুভ দিনে গুড়, মুসুর ডাল, লাল কাপড় অথবা ঝাড়ু দান করতে বলা হয়। এই দান করতে হবে মন্দিরে গিয়ে। এতে প্রচুর সম্পদ ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
বৃষ: এই রাশিতে জন্মগ্রহণকারীদের এই দিনে দুঃস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের ভাত, চিনি, দই বা খাবার দেওয়া উচিত। দানে যে পুণ্য অর্জিত হবে তাতে ঘরে সুখ ও সমৃদ্ধি আসবে। বৃষ রাশির জাতক-জাতিকাদের লক্ষ্মীর পুজোর পর সবুজ মুগ ডাল দান করা উচিত। এ দিন সাদা পোশাক পরে দান করতে হবে।
মিথুন: এই রাশির জাতকদের কর্মজীবনে সাফল্য লাভ করতে হলে দান করতে হবে। দানের সামগ্রীর মধ্যে রাখতে হবে কালচে সবুজ গোটা মুসুর ডাল, মিষ্টিজাতীয় খাবার। লক্ষ্মীর পুজো করার পর গরিবদের দান করতে হবে গুড়। সুখ ও সমৃদ্ধি পেতে দীপাবলির দিন পাখিদের খাওয়ানো উচিত বলে জ্যোতিষশাস্ত্র বলছে।
কর্কট: ব্রাহ্মণদের চাল দান করলে ভাল ফল পাবেন কর্কট রাশির ব্যক্তিরা। বিশেষ তিথি উপলক্ষে গরুর গোয়ালঘরে দুধ, ভাত, সাদা মিষ্টি বা পশুখাদ্য দান করা উচিত। এটি করলে তাঁদের জীবন মঙ্গলময় হয়ে উঠবে। এ ছাড়াও মা লক্ষ্মীর পুজো সম্পন্ন করার পর কালো মাসকলাই দান করল শুভ ফল পাবেন।
সিংহ: সিংহ রাশির জাতক-জাতিকারা এই বিশেষ তিথিতে ভাগ্য ফেরাতে দীপাবলিতে হলুদ রঙের মিষ্টি দান করুন। এর প্রভাবে বাড়িতে সুখ ও শান্তি বিরাজ করবে। ধনদেবীর আশীর্বাদ লাভ করবেন। এ ছাড়াও সাতটি শস্য দান করলে সুফল মিলবে। দান করার সময় কালো কাপড় পরা চলবে না।
কন্যা: এই শুভ ক্ষণে কন্যা রাশির জাতক-জাতিকাদের সবুজ শাকসব্জি, ধনেপাতা বা পিতলের পাত্র দান করা উচিত। এতে তাঁদের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। এই দিনে কন্যা রাশির ব্যক্তিদের শনিমন্দিরে সর্ষের তেল দান করা উচিত। এ ছাড়াও ঝাঁটা দান করলে পরিবারে আনন্দ ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। অর্থকষ্ট দূর হবে।
তুলা: দীপাবলিতে অন্নদান তুলা রাশির জাতক-জাতিকাদের পক্ষে শুভ বলে মনে করা হয়। আতুরকে অন্নদান করলে মা লক্ষ্মীর কৃপা ছা়ড়াও মা অন্নপূর্ণার কৃপাদৃষ্টি সারা বছর পড়বে তুলা রাশির উপর। কর্মক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করতে চাইলে অভাবী ব্যক্তিদের বই, দই বা সাদা পোশাক দান করতে হবে।
বৃশ্চিক: লক্ষ্মীর আশীর্বাদধন্য হতে চাইলে বৃশ্চিক রাশিকে মেনে চলতে হবে দানের কতগুলি নিয়ম। সাফল্যের নতুন পথ প্রশস্ত করার জন্য গুড় দান করতে পারেন। শিবমন্দিরে গুড়, ছোলার ডাল বা মধু দিয়ে অভিষেক করলে দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাবেন। ধনদেবীর কৃপা পেলে অর্থাভাব দূর হবে।
ধনু: হলুদ মিষ্টি বা হলুদ রঙের পোশাক দান করা উচিত ধনু রাশির জাতকদের। জুতো দান করা যেতে পারে। এমনকি লোহার তৈরি জিনিসও দানের তালিকায় রাখতে পারেন। দান করার সময় এই দিন বাদামি রঙের জামাকাপড় পরলে উপকার হবে।
মকর: মকর রাশির ব্যক্তিরা এই তিথিতে অনাথাশ্রমে বই দান করতে পারেন। মকর রাশির জাতকদের শুকনো ধনে দান করা উচিত। ব্রাহ্মণের জন্য খাবার দান শুভ বলে ধরা হয়। এই দিনে মকর রাশির জাতক-জাতিকাদের আস্ত মাসকলাই, কম্বল, সর্ষের তেল অথবা তিল দান করা উচিত। এতে তাঁদের জীবনে সুখ ও শান্তি নেমে আসবে।
কুম্ভ: দীপাবলিতে যে কোনও দেবীর মন্দিরে কালো রঙের ডাল, সবুজ শাকসব্জি অথবা লাল আবির নিবেদন করুন। এতে আর্থিক সমস্যা দূর হবে। মা দুর্গার মন্দিরে লাল গোলাপ অর্পণ করলে শুভ ফল লাভ করবেন। সঙ্গে পরতে হবে লাল রঙের পোশাকও।
মীন: দীপাবলিতে গরিব বা অভাবীদের সাহায্য করলে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়ে উঠবে মীন রাশির জাতক-জাতিকাদের। দীপাবলির উৎসবে পূজার পর কোনও অভাবী ব্যক্তিকে খাদ্য, অর্থ বা গরম কাপড় দান করা উচিত। দরিদ্রদের হলুদ, বেসন, হলুদ মিষ্টি বা কম্বল দান করুন। এটি করলে আর্থিক বাধা কেটে যাবে।
জ্যোতিষে জল দানকে সবচেয়ে বড় দান বলা হয়। মীন রাশির জাতকেরা এই বিশেষ তিথিতে জলদান করলে কোষ্ঠীতে অবস্থান করা অশুভ গ্রহকে শান্ত করতে পারবেন।