একে রাজকন্যা, তায় ডাকসাইটে সুন্দরী। সেলুলয়েডের দুনিয়ায় পা রাখলে নায়িকাদের বলে বলে গোল দেবেন এই কন্যে। জনপ্রিয়তার নিরিখে চলচ্চিত্র তারকাদের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে পারেন দুবাইয়ের রাজকন্যা। তিনি শেখ মাহরা বিন্ত মহম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম। শেখ মাহরা নামেই যিনি বেশি পরিচিত। দুবাইয়ের শাসক শেখ মহম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের কন্যা ও দুবাইয়ের রাজকুমারী মাহরা।
রাজকুমারী বলে কথা! চোখধাঁধানো রূপের সঙ্গে আভিজাত্যের মিশেল। সমাজমাধ্যমে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। যেখানেই গিয়েছেন প্রচারের আলো তাঁর দিকেই ঘুরে গিয়েছে। তাঁর রূপের খ্যাতি যেমন দুনিয়াজোড়া, তেমনই তাঁকে নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। বিয়ে, বিচ্ছেদ, সঙ্গী এ সব নিয়ে মাঝেমাঝেই তিনি সংবাদমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমের চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়ান।
গত বছরে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন মাহরা। ১০ মাস সংসার করার পরেই স্বামীর উদ্দেশে ইনস্টাগ্রামে বিবাহবিচ্ছেদের কথা ঘোষণা করেন রাজকন্যা। সমাজমাধ্যমে ঘোষণা করেন যে তিনি আর তাঁর স্বামী শেখ মানা বিন মহম্মদ আল মাকতুমের সঙ্গে সংসার করতে চান না। জনসমক্ষে তিনি বিবাহবিচ্ছেদের কথা লিখে পোস্ট করে দেন। প্রাক্তন এই দম্পতির একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে।
বিয়ে করার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছিলেন মাহরা? সেই কারণও তিনি পোস্টে ফলাও করে জানিয়ে দিয়েছিলেন। ইনস্টাগ্রামের সেই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘প্রিয় স্বামী, যে হেতু তুমি অন্যদের সঙ্গে ব্যস্ত আছ, তাই আমি তোমার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘোষণা করছি। ভাল থেকো। ইতি: তোমার প্রাক্তন স্ত্রী।’’
বিবাহবিচ্ছেদের পর কেটে গিয়েছে একটি বছর। সম্প্রতি নতুন একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন মাহরা। নতুন সঙ্গীর সঙ্গে বাগ্দান সম্পন্ন হয়েছে। রাজকুমারীর মনের মানুষ আমেরিকার নাগরিক। মরক্কো-আমেরিকান র্যাপার ফ্রেঞ্চ মন্টানার সঙ্গে আংটিবদল হয়েছে মাহরার।
২৯ অগস্ট মাহরা তাঁর ইনস্টাগ্রামের পাতায় একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সেই ছবিতে দেখা গিয়েছে, একটি পুরুষের হাতের উপর নারীর হাত। এই দু’টি হাত মন্টানা ও মাহরার। তবে দুবাইয়ের রাজকুমারীর হাতের একটি আংটি এখন সমস্ত আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। হিরেখচিত আংটির মূল্য ১১ লক্ষ ডলার বা ৯ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
মন্টানা ১২ ক্যারাটের এমারেল্ড কাটের হিরের আংটিটি দিয়ে বিয়ের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছেন মাহরাকে। শোনা যাচ্ছে, এই বাগ্দান পর্ব সারা হয়েছিল ২০২৫ সালের জুন মাসে। প্যারিস ফ্যাশন উইকের সময়।
৪০ বছর বয়সি মন্টানা এবং ৩১ বছর বয়সি মাহরার আলাপ পর্বের সূচনা হয়েছিল ২০২৪ সালে। মাহরা মন্টানাকে দুবাই ঘুরিয়ে দেখান এবং তার পর পরই সমাজমাধ্যমে দু’জনের একসঙ্গে তোলা ছবি প্রকাশ্যে আসে। এই জুটিকে প্রায়শই দুবাই এবং মরক্কোর বিলাসবহুল রেস্তরাঁয় দেখা গিয়েছে। দু’জনকে প্যারিসের পঁ দেজ়ারে সময় কাটাতে দেখা গিয়েছে। তবে তাঁদের বিয়ের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
ফ্রেঞ্চ মন্টানার আসল নাম করিম খারবুশ। মরোক্কোয় জন্মালেও ১৩ বছর বয়সে আমেরিকায় চলে আসেন তিনি ও তাঁর পরিবার। নিউ ইয়র্কের সাউথ ব্রঙ্কসে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। ২০০০ সালে ‘ইয়ং ফ্রেঞ্চ’ নামে র্যাপারশিল্পী হিসাবে পরিচিত হতে শুরু করেন। তাঁর ‘আনফরগেটেবল’ নামের একটি অ্যালবাম ২০১৭ সালের বিলবোর্ডের শীর্ষ ১০টি অ্যালবামের মধ্যে জায়গা করে নেয়।
সেই অ্যালবামের ভিডিয়ো শুট করতে গিয়ে উগান্ডায় স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা প্রকল্পে অর্থসাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মন্টানা। ২০১৮ সালে উগান্ডার একটি হাসপাতালের এক লক্ষ ডলার দিয়েছেন তিনি। মাহরার মতো মন্টানারও বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। ২০০৭ সালে তিনি নাদিন খারবুশকে বিয়ে করেছিলেন। ২০১৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে। ক্রুজ খারবুশ নামে মন্টানার একটি পুত্রসন্তান আছে।
রুপোলি পর্দার তথাকথিত নায়িকাদের মতোই বেশবাস হলে কী হবে লেখাপড়া-সহ অন্যান্য বিষয়েও চৌকস রাজকুমারী মাহরা। ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুবাইয়ে জন্ম তাঁর। প্রাথমিক শিক্ষা দুবাইয়ে সম্পন্ন করেন তিনি। ব্রিটেনের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়াশোনা করেছেন মাহরা। এই বিষয়ে তাঁর ডিগ্রিও রয়েছে।
বরাবরই দুঃস্থদের পাশে থাকতে পছন্দ করেন রাজকন্যা। তাই সমাজসেবাতেও নিজেকে যুক্ত করেছেন তিনি। দুবাইয়ে বিভিন্ন ধরনের সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনি।
তাঁর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। উত্তরাধিকারের বাইরে, মাহরা তাঁর নিজস্ব একটি ব্র্যান্ডও তৈরি করেছেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর বিলাসবহুল সুগন্ধি, ‘মাহরা এম১’ চালু করেছেন। সেই ব্র্যান্ডের প্রথম সুগন্ধিটির নাম রেখেছিলেন ‘ডিভোর্স’।
নারীদের ক্ষমতায়ন, পরিবেশরক্ষার মতো বিষয় নিয়ে বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা গিয়েছে মাহরাকে।
ঘোড়ার প্রতি মাহরার প্রেমও নজর কেড়েছে সমাজমাধ্যমে। তাঁর বাবার মতোই ঘোড়া ভালবাসেন মাহরা। আর এর আভাস পাওয়া গিয়েছে ইনস্টাগ্রামে। ঘোড়ার সঙ্গে মাহরার বিভিন্ন ছবি দেখা গিয়েছে।