বছর পাঁচ-ছয়েক আগে তামাম নেটদুনিয়া মেতেছিল পাকিস্তানের এক গোলগাল বাচ্চার কাণ্ডকারখানায়। ‘পিছে তো দেখো’— মোটা কাচের তলা থেকে দুষ্টু চোখ নিয়ে আদুরে গলায় তার বলা এই কথা ভাইরাল হয়েছিল ঝড়ের গতিতে। মিমের বন্যা বয়ে গিয়েছিল।
তার পর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি, তখনকার বালক এবং আজকের কিশোর আহমদ শাহকে। রাতারাতি পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় নেটপ্রভাবী তথা তারকা হয়ে ওঠে সে।
সেই আহমদের পরিবারেই এ বার শোকের ছায়া। মৃত্যু হল পাকিস্তানের জনপ্রিয় কিশোর তারকার ভাই উমের শাহের। মৃত্যুর সময় মাত্র ১৫ বছর বয়স হয়েছিল তার।
দাদার হাত ধরেই পাকিস্তানের বিনোদনজগতে পা দিয়েছিল উমের। জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল। সমাজমাধ্যমে উজ্জ্বল উপস্থিতি তো ছিলই, শিশুশিল্পী হিসাবে বেশ কয়েকটি টিভি শোয়েও কাজ করেছিল সে।
ডেরা ইসমাইল খান শহরের বাসিন্দা ছিল উমেররা। সেখানেই মৃত্যু হয় সমাজমাধ্যমে মনোমুগ্ধকর উপস্থিতির জন্য পরিচিত কিশোরের। সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিল বলেও খবর।
পাক সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার ভোরে হঠাৎই বমি করতে শুরু করে উমের। তার ফুসফুসে তরল জমে যায়। এর পরেই নাকি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয় সে। বাড়িতেই মৃত্যু হয় তার।
কিন্তু কেন এত কম বয়সে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হল উমের, তা এখনও পরিষ্কার হয়নি। উমেরের পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়িতে একটি বিষাক্ত সাপ ঢুকে পড়েছিল। যদিও উমেরের মৃত্যু সেই সাপের কামড়েই হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করেননি চিকিৎসকেরা।
উমেরের মৃত্যুর খবর ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করে তার দাদা আহমদ। অনুরাগীদের কাছে উমেরকে স্মরণ করার এবং তাদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছে সে।
আহমদ লিখেছে, ‘‘আপনাদের জানাই যে আমাদের পরিবারের ছোট্ট উজ্জ্বল তারকা উমের শাহ আল্লার কাছে ফিরে গিয়েছে। আমি সকলকে অনুরোধ করছি উমের এবং আমাদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করার।’’
উমের সমাজমাধ্যম এবং টেলিভিশনের শিশু তারকা হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিল। দাদার সঙ্গে জুটি বেঁধে দর্শকের মন জয় করে নিয়েছিল সে। এআরওয়াই ডিজিটালের ‘জিতো পাকিস্তান’ এবং ‘শান-এ-রমজান’-এর মতো জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলিতে উপস্থিতির মাধ্যমে ঘরে ঘরে পরিচিত হয়ে উঠেছিল দাদা-ভাইয়ের জুটি।
দাদার সঙ্গে রিল বানিয়ে সমাজমাধ্যমেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিল উমের। দুই ভাইয়ের রসবোধ দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিল। উমেরের অনুরাগীদের তালিকায় ছিলেন পাকিস্তানের অনেক নামীদামি তারকাও।
উমেরের অকালমৃত্যুতে স্বাভাবিক ভাবেই শোকস্তব্ধ পাক বিনোদনজগৎ। পাকিস্তানের অনেক তারকা উমেরের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে বার্তা দিয়েছেন।
জনপ্রিয় পাক টেলিভিশন শো ‘জিতো পাকিস্তান’-এর উপস্থাপক ফাহাদ মুস্তাফা জানিয়েছেন, উমেরের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি বাক্রুদ্ধ। ছোট্ট তারকার মৃত্যু হৃদয়বিদারক বলেও মন্তব্য করেন ফাহাদ।
উমেরকে আলো এবং আনন্দের প্রতীক হিসাবে মন্তব্য করেছেন অভিনেতা আদনান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘‘আমি ভেঙে পড়েছি। আমি মেনে নিতে পারছি না যে উমের আর আমাদের মধ্যে নেই।’’
এ ছাড়াও মাহিরা খান, হিনা আলতাফ, মোমল শেখ, শয়েস্তা লোধি, প্রাক্তন ক্রিকেটার সরফরাজ আহমদও উমেরের মৃত্যুকে পাকিস্তান বিনোদনজগতের অপূরণীয় ক্ষতি বলে জানিয়েছেন।
এর আগে ২০২৩ সালে দুর্ভাগ্য আঘাত হানে আহমদদের পরিবারে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ছোট বোন আয়েশাকে হারিয়েছিল সে। এ বার প্রিয় ভাইকেও হারাল।