সিলিকন ভ্যালির কর্মীদের গোপনীয় এবং সংবেদনশীল তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য যৌনতার ফাঁদ পাতে চিন এবং রাশিয়ার গুপ্তচরেরা! দাবি করলেন রাশিয়ারই এক প্রাক্তন চর।
রাশিয়ার ওই প্রাক্তন মহিলা গুপ্তচরের নাম আলিয়া রোজ়া। বর্তমানে আমেরিকায় থাকেন তিনি। আলিয়ার দাবি, কৌশল করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতাতে চিন এবং রাশিয়া ‘যৌন গুপ্তচর’দের কাজে লাগাচ্ছে।
আইনজীবীর পরামর্শে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁর পুরনো জীবন নিয়ে মুখ খোলেন আলিয়া। তাঁকে এবং তাঁর সহযোগী ‘যৌন গুপ্তচর’দের কী ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, সে সম্পর্কেও কথা বলেন তিনি।
প্রাক্তন রুশ চর সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক পোস্ট’-কে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কিশোরী বয়স থেকেই গুপ্তচর হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সেখানেই ‘টার্গেট’দের প্রলুব্ধ করতে এবং তাঁদের কাজে লাগানোর বিদ্যা শিখেছিলেন তিনি।
কী ভাবে এক জন গুপ্তচর তাঁর লক্ষ্যবস্তুর কাছে পৌঁছোন, সাক্ষাৎকারে সে সম্পর্কেও বিশদে জানিয়েছেন আলিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘টার্গেট ঠিক করা হয়, তাঁদের কাছে থাকা তথ্যের উপর নির্ভর করে। টার্গেটকে ফাঁদে ফেলতে তাঁদের আবেগ, অনুভূতি নিয়ে খেলতে হয়।’’
আলিয়া বলেছেন, ‘‘যাঁদের থেকে তথ্য হাতানোর দরকার, ফাঁদে ফেলার আগে তাঁদের সঙ্গে গুনে গুনে সাত বার দেখা করতে হয়। এক বার বেশিও না, এক বার কমও না। তাঁরা কোন কফি শপে যাচ্ছেন বা কোন জিমে যাচ্ছেন, সে দিকে নজর রাখতে হয়। যেতেও হয় সেখানে। নজর রাখতে হয়, টার্গেটের সমাজমাধ্যমের পাতাতেও।’’
প্রাক্তন রুশ গুপ্তচর জানিয়েছেন, এর পরের পদক্ষেপ ‘টার্গেট’কে প্রেম এবং যৌনতা দিয়ে কাবু করা। এর জন্য লক্ষ্যবস্তুকে নিজেদের আকর্ষণীয় ছবি পাঠাতে হয় মাঝেমধ্যে। তাঁর ঝুড়ি ঝুড়ি প্রশংসা করে মেসেজও পাঠাতে হয়। তবে এ সব করার আগে টার্গেটের বিশ্বাস অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি।
আলিয়ার দাবি, এর পরেই শুরু হয় আসল খেলা। কারও সঙ্গে একটু বন্ধুত্ব হওয়ার পরেই চরেরা নিজেদের খুব দুর্বল দেখাতে শুরু করেন। ভুয়ো কারণে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ার অভিনয়ও করতে হয় তাঁদের।
সংবাদমাধ্যমে আলিয়া বলেন, ‘‘দুর্বল বা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ার ভান করে নিজেকে টার্গেটের কাছে সঁপে দিতে হয়। আবেগের বশে টার্গেটও মনে করতে শুরু করেন যে, তিনিই আপনার সব দুঃখ-দুর্দশা ঘোচাবেন। এক বার বিশ্বাস তৈরি হয়ে গেলে, চরেরা সেই আবেগ ব্যবহার করতে শুরু করেন।’’
আলিয়া এ-ও জানিয়েছেন, টার্গেটের মন তাঁরই পরিবার, সহকর্মী এবং বন্ধুদের বিরুদ্ধে বিষিয়ে দেওয়াও এক জন চরের কাজ। যখন এক জন চর তাঁর টার্গেটকে পুরোপুরি বশে এনে ফেলেন, তখনই শুরু হয় যৌনতার ফাঁদে ফেলার প্রক্রিয়া। ধীরে ধীরে তাঁর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সব তথ্য বার করা হয়।
প্রাক্তন রুশ চরের দাবি, সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তিকর্মীদেরই মূলত লক্ষ্যবস্তু করেন চিন এবং রাশিয়ার চরেরা। কিন্তু প্রযুক্তিকর্মীরাই কেন?
আলিয়া ব্যাখ্যা করেছেন, প্রযুক্তিকর্মীরা অতিরিক্ত কাজ করেন। পরিবারের থেকে আলাদা থাকেন। আর সে কারণে তাঁদের বশ করতেও সুবিধা হয়।
আলিয়ার কথায়, ‘‘প্রযুক্তিকর্মীরা খুব বুদ্ধিমান এবং পরিশ্রমী। তবে তাঁরা যতই প্রতিভাবান হোন না কেন, কাজের চাপের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রেম অধরা থেকে যায়়। একাকিত্বে ভোগেন তাঁরা। আর সেই সুযোগকেই কাজে লাগানো হয়।’’
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতাতে আলিয়া নিজেও এ ভাবেই ফাঁদে ফেলতেন বিভিন্ন জনকে। তবে চর হিসাবে আমেরিকার থেকে ব্রিটেন এবং ইউরোপের অন্য দেশগুলিতে বেশি কাজ করেছেন তিনি। তেমনটাই দাবি আলিয়ার।
আলিয়া এ-ও জানিয়েছেন, চর হিসাবে কাজ করতে করতে সত্যি সত্যিই এক বার এক টার্গেটের প্রেমে পড়েন তিনি। তিনি যাঁর প্রেমে পড়েছিলেন, তিনি ছিলেন এক জন গোয়েন্দা। আর সে কারণে তাঁকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। ২০২০ সালে গ্রিন কার্ড পেয়ে পাকাপাকি ভাবে আমেরিকায় চলে আসেন তিনি।
আলিয়ার দাবি, তিনি আর চরবৃত্তি করেন না। সেই জীবন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন অনেক দিন হল। সুখে ঘর-সংসার করছেন। ওই জীবনে আর ফিরেও যেতে চান না।
প্রেমরূপে জীবনে চর ডেকে আনছেন কি না তা বুঝতে সিলিকন ভ্যালির পেশাদারদের পরামর্শও দিয়েছেন আলিয়া। জানিয়েছেন, জীবনে হঠাৎ প্রেম এলে এক বার যাচাই করে নিতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে প্রেমিকাকে নিয়ে। কারণ, একটু অসাবধান হলেই— গুরুত্বপূর্ণ নথি ‘ভ্যানিশ’।