Rafale Fighter Jet

শত্রুর বুকে আতঙ্ক ধরিয়ে জন্ম নিল ৩০০তম রাফাল! পাক-চিনের ঘাঁটি ওড়াতে ফরাসি ‘ঝোড়ো হাওয়া’য় ভরসা ভারতের?

সাড়ে চার প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির লড়াকু জেট রাফালের ৩০০তম ইউনিট নির্মাণের মধ্যে দিয়ে ইতিহাস স্পর্শ করল ফরাসি প্রতিরক্ষা সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশন। কেন প্যারিসের এই ‘ঝোড়ো হাওয়া’র দুনিয়া জু়ড়ে বাড়ছে চাহিদা?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:৫৭
Share:
০১ ১৮

ফরাসি ‘ঝোড়ো হাওয়া’র দাপটে লন্ডভন্ড আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাজার! সেখানে লড়াকু জেটের প্রসঙ্গ উঠলে সকলের মুখে শোনা যাচ্ছে একটাই নাম, রাফাল। ইতিমধ্যে এই যুদ্ধবিমানের ৩০০তম ইউনিট তৈরির মাধ্যমে ইতিহাস স্পর্শ করেছে প্যারিসের নির্মাণকারী সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশন। এ বার কি তবে লড়াকু জেট উৎপাদনে যাবতীয় রেকর্ড ভেঙে দেবে তারা? কয়েক যোজন পিছিয়ে পড়বে আমেরিকা ও রাশিয়া? রাফালের সাফল্য সংক্রান্ত খবর প্রকাশ্যে আসতেই এই নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।

০২ ১৮

চলতি বছরের ৭ অক্টোবর রাফালের ৩০০তম ইউনিট নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ঘোষণা করে দাসো অ্যাভিয়েশন। সংস্থার তরফে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘লড়াইয়ের ময়দানে নিজের বহুমুখী প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছে আমাদের যুদ্ধবিমান। এর সুফল প্রতিরক্ষা শিল্পক্ষেত্রে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।’’ বর্তমান বিশ্বে শক্তির নিরিখে আর কোনও লড়াকু জেট রাফালের ধারেকাছে নেই বলেও দাবি করেছে তারা।

Advertisement
০৩ ১৮

ফরাসি ফৌজে অন্তর্ভুক্তির মাত্র আড়াই দশকের মধ্যে সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটির এ-হেন সাফল্য যে ঈর্ষণীয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতার পাশাপাশি সেখানকার সরকারের একটি সিদ্ধান্তের দিকেও আঙুল তুলেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। গত শতাব্দীর ৮০-এর দশকে লড়াকু জেট নির্মাণের ক্ষেত্রে ‘একা চলা’র নীতি নেয় প্যারিস। এটি সময়ের চাকা ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে যাবতীয় ‘খেলা ঘোরাতে’ দাসোর মূল হাতিয়ার হয়ে ওঠে, বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।

০৪ ১৮

১৯৮৬ সালের জুলাইয়ে প্রথম বার আকাশে ওড়ে রাফাল। যদিও ২০০১ সালের আগে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে পারেনি দাসো অ্যাভিয়েশন। ফরাসি নৌবাহিনীতে সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটটির অন্তর্ভুক্তি হয় ২০০৪ সালে। আর বিমানবাহিনীর ক্ষেত্রে সেই সালটা ছিল ২০০৬। গোড়ার দিকে যুদ্ধবিমানটি দুর্দান্ত ‘পারফরম্যান্স’ করছিল, এমনটা নয়। কিন্তু সেই প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে অচিরেই রফতানি বাণিজ্যে ছাপ ফেলতে সক্ষম হয় দাসোর রাফাল, যার অর্থ ‘ঝোড়ো হাওয়া’।

০৫ ১৮

ফরাসি যুদ্ধবিমান নির্মাতা সংস্থাটির দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ৫৩৩টি রাফাল তৈরির বরাত পেয়েছে তারা। ঘরোয়া সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বায়না এসেছে আটটি দেশের থেকে। এর মধ্যে ২৩৩টি লড়াকু জেটের সরবরাহ এখনও বাকি আছে। ফ্রান্সের থেকে রাফাল কেনা দেশগুলির তালিকায় রয়েছে ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস এবং সার্বিয়া।

০৬ ১৮

বর্তমানে দাসোর তৈরি এই যুদ্ধবিমানের ১০৪টি রয়েছে ফরাসি বিমানবাহিনীর বহরে। এ ছাড়া সেখানকার নৌসেনা ব্যবহার করছে ৪১টি ইউনিট, যার পোশাকি নাম রাফাল-এম। ফ্রান্সকে বাদ দিলে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ১২টি, মিশরের কাছে ২৮টি, গ্রিসের কাছে ২৪টি, কাতারের কাছে ৩৬টি এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীর কাছে ৩৫টি রয়েছে এই লড়াকু জেট। সব মিলিয়ে মোট ছ’টি দেশের বাহিনীর যুদ্ধবিমানের বহরে রাফালের সংখ্যা ২৮০ বলে জানা গিয়েছে।

০৭ ১৮

সমীক্ষক সংস্থা ‘সিরিয়াম ফ্লিট’ আবার জানিয়েছে, সরবরাহ না হওয়া ২৩৩টি যুদ্ধবিমানের মধ্যে ৪৭ ইউনিটের বরাত দিয়েছে ফরাসি বাহিনী। বাকি ১৮৬টি রাফালের গ্রাহক হল মিশর, ভারতীয় নৌসেনা, ইন্দোনেশিয়া, সার্বিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। এর মধ্যে প্রথম দু’জনকে ২৬টি করে লড়াকু জেট সরবরাহ করবে দাসো। বাকি দেশগুলির যুদ্ধবিমানের বহরে যথাক্রমে ৪২টি, ১২টি এবং ৮০টি করে রাফাল সংযুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

০৮ ১৮

গত শতাব্দীর ৬০-এর দশকে ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্যানাভিয়া টর্নেডো নামের একটি যুদ্ধবিমান নির্মাণে উদ্যোগী হয় ব্রিটেন। কিন্তু, ১৯৬৭ সালে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি থেকে নিজেকে আলাদা করে প্যারিস। ওই সময় মিরাজ-২০০০ নামের একটি লড়াকু জেট তৈরিতে পুরোপুরি মন দিয়েছিল দাসো। ১৯৭৮ সালে শুরু হয় সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটির বাণিজ্যিক উৎপাদন। এই লড়াকু জেট এখনও ব্যবহার করছে ভারতীয় বিমানবাহিনী।

০৯ ১৮

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় ইউরোফাইটার টাইফুনের ক্ষেত্রে। ১৯৯৪ সালে আত্মপ্রকাশ করে ব্রিটেন, জার্মানি, ইটালি এবং স্পেনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেট। প্রথম দিকে এই প্রকল্পের অংশ ছিল ফ্রান্স। কিন্তু, দ্রুত সেখান থেকে সরে এসে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে যুদ্ধবিমান নির্মাণে মনোযোগ দেয় প্যারিসের সংস্থা দাসো। ফলস্বরূপ, রাফাল তৈরিতে সক্ষম হয় তারা। যেটা ‘নেপোলিয়নের দেশের’ প্রতিরক্ষা রফতানিকে যে কয়েক গুণ বৃদ্ধি করেছে, তা বলাই বাহুল্য।

১০ ১৮

রাফালের সঙ্গে তুলনায় মাত্র পাঁচটি দেশ থেকে ১৫১টি যুদ্ধবিমানের বরাত পেয়েছে ইউরোফাইটার টাইফুনের নির্মাণকারী চার ইউরোপীয় রাষ্ট্র। অর্থাৎ, দ্বিগুণের বেশি বায়না আছে দাসোর খাতায়। নির্মাণকারী চারটি দেশ, অর্থাৎ ব্রিটেন, জার্মানি, ইটালি এবং স্পেনের বিমানবাহিনী ছাড়াও ইউরোফাইটার টাইফুন বহরে শামিল করেছে সৌদি আরব, অস্ট্রিয়া, কুয়েত, কাতার এবং ওমান। এর নেপথ্যে অবশ্য একাধিক কারণের কথা বলেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

১১ ১৮

সাবেক সেনাকর্তাদের কথায়, ইউরোফাইটার টাইফুন কোনও একটি দেশের তৈরি যুদ্ধবিমান নয়। ফলে নির্মাতাদের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক মতপার্থক্য তৈরি হলে তার প্রভাব এর সরবরাহ শৃঙ্খলে পড়তে বাধ্য। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটটির রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রেও একই সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে। সেই কারণেই দুনিয়ার অস্ত্রবাজারে সে ভাবে পা জমাতে পারছে না এই যুদ্ধবিমান।

১২ ১৮

উদাহরণ হিসাবে সৌদি আরবের কথা বলা যেতে পারে। রিয়াধের বিমানবাহিনীতে ইউরোফাইটার টাইফুন শামিল হওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে প্রবল আপত্তি তোলে জার্মানি। পরে বার্লিন সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে সংশ্লিষ্ট জেটটির সরবরাহ শুরু হয়। একই ভাবে তুরস্ককে এই যুদ্ধবিমান বিক্রি করা নিয়ে আপত্তি তুলেছে স্পেন। ফলে এ ব্যাপারে কোনও প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে পারেনি আঙ্কারা।

১৩ ১৮

দ্বিতীয়ত, রাফালের তুলনায় ইউরোফাইটার টাইফুনের সংঘর্ষের অভিজ্ঞতা বেশ কম। সূত্রের খবর, গত মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে চলা ‘যুদ্ধে’ সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটটিকে ময়দানে নামায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, এর থেকে ছোড়া স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র এবং হ্যামার বোমায় মাত্র ২৫ মিনিটে গুঁড়িয়ে যায় ন’টি জঙ্গিঘাঁটি। ওই সময় পাল্টা প্রত্যাঘাতে নয়াদিল্লির তিনটি রাফাল ধ্বংসের দাবি করে ইসলামাবাদ।

১৪ ১৮

পাক ফৌজের এ-হেন ‘সাফল্য’ মানার ব্যাপারে প্রবল আপত্তি আছে ফরাসি জেটটির নির্মাণকারী সংস্থা দাসোর। সংঘর্ষ চলাকালীন এই নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন তাদের সিইও এরিক ট্র্যাপিয়ার। তাঁর কথায়, ‘‘রাফাল ধ্বংসের ক্ষমতা ইসলামাবাদের বাহিনীর নেই। অপারেশন সিঁদুরে এই যুদ্ধবিমানের একটি হারায় নয়াদিল্লি। তবে সেটা সংঘর্ষের কারণে নয়। প্রযুক্তিগত ত্রুটি থাকায় সংশ্লিষ্ট জেটটি ভেঙে পড়েছিল।’’ এতে কোনও যোদ্ধা পাইলটের জীবনহানি হয়নি।

১৫ ১৮

বর্তমানে যুদ্ধবিমানের স্বল্পতায় ভুগছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। সেই অভাব পূরণ করতে বিদেশ থেকে লড়াকু জেট আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। সূত্রের খবর, এর জন্য ফরাসি সংস্থাটির ১১৪টি রাফালের বরাত পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে এখনও কোনও তথ্য প্রকাশ্যে আনেনি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী প্রশাসন।

১৬ ১৮

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, সম্প্রতি ফ্রান্স, জার্মানি এবং স্পেন যৌথ উদ্যোগে ‘ফি‌উচার কমব্যাট এয়ার সিস্টেম’ (এফসিএএস) নামের একটি প্রকল্প শুরু করেছে। এর মাধ্যমে ইউরোফাইটার টাইফুনের উত্তরসূরি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। কিন্তু ইতিমধ্যেই অংশীদারি নিয়ে তিন শরিকের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিবাদ। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির অপমৃত্যুর আশঙ্কা প্রবল, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

১৭ ১৮

পশ্চিমি গণমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ফিউচার কমব্যাট এয়ার সিস্টেম’-এর ৫৮ থেকে ৬২ শতাংশ অংশীদারি নিজের হাতে রাখতে চায় প্যারিস। সেটা না পেলে এই প্রকল্প ত্যাগ করার হুমকি দিয়েছে ফ্রান্স। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত নিলে এফসিএএসে ব্রিটেন এবং ইটালির মেগা এন্ট্রির সম্ভাবনা রয়েছে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

১৮ ১৮

সাবেক সেনাকর্তারা জানিয়েছেন, দাসোর তৈরি রাফালের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল এর প্রতিটা অংশই তৈরি করেছে ফ্রান্স। গত ২৫ বছরে মাত্র আট বার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে সাড়ে চার প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির এই যুদ্ধবিমান। সেখানে পঞ্চম প্রজন্মের মার্কিন লড়াকু জেট এফ-৩৫ লাইটনিং টু-র পারফরম্যান্স মোটেই সন্তোষজনক নয়। রফতানি বাণিজ্যে নিজের জায়গা করে নেওয়ার ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যানেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশ্লেষকেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement