France Block Everything Protest

মাথায় ৩.৩৪ লক্ষ কোটি ইউরোর ঋণ, রাজকোষ নামেই ‘তালপুকুর’! ২৩৬ বছর পর ফের ‘বাস্তিলের পতন’ দেখবে ফ্রান্স?

‘ব্লক এভরিথিং’-এর ব্যানারে ফ্রান্স জুড়ে চলছে গণআন্দোলন। আন্দোলন সামলাতে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। কেন হঠাৎ বিক্ষোভে সামিল হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ? নেপথ্যে বড় কোনও ষড়যন্ত্র?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:২৮
Share:
০১ ১৯

বাংলাদেশ, নেপালের পর এ বার ফ্রান্স! প্রবল গণবিক্ষোভের আগুনে পুড়ছে ‘নেপোলিয়নের দেশ’। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমসিম খাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। পাহাড়প্রমাণ প্রাচুর্য সত্ত্বেও কেন প্যারিসের রাস্তায় জ্বলছে আগুন? আন্দোলনের নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র? না কি কোষাগারের দেউলিয়া দশাই খেপিয়ে তুলেছে দেশের আমজনতাকে? আটলান্টিকের পারের ইউরোপীয় রাষ্ট্রে অশান্তি তীব্র হতেই এই সমস্ত প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন দুনিয়ার তাবড় কূটনীতিকেরা।

০২ ১৯

চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ‘ব্লক এভরিথিং’-এর ব্যানারে ফ্রান্স জুড়ে শুরু হয় গণআন্দোলন। প্রতিবাদের নামে রীতিমতো তাণ্ডব চালান বিক্ষোভকারীরা। সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের উপর হামলার মতো অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। অবস্থা বেগতিক বুঝে এর পরই ইস্তফা দেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী। তিনি পদত্যাগ করতেই গণবিক্ষোভের কারণ খুঁজতে লেগে পড়েন বিশ্লেষকদের একাংশ। আর সেখানেই উঠে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশটির আর্থিক দুরাবস্থার দৃশ্য।

Advertisement
০৩ ১৯

বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘ব্লক এভরিথিং’ আন্দোলনের বীজ লুকিয়ে আছে ফ্রান্সের রাজনৈতিক ব্যবস্থায়। মধ্যপন্থী নেতা মাকরঁ ধ্বনিভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট ফরাসি পার্লামেন্টে কোনও দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে গত দু’বছরে পাঁচ জন প্রধানমন্ত্রী দেখেছে প্যারিস। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, কুর্সিতে বসা ইস্তক মোট সাত জনকে ওই দায়িত্ব দিয়েছেন মাকরঁ। কিন্তু প্রত্যেকেই নির্ধারিত সময়ের আগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

০৪ ১৯

ঘন ঘন প্রধানমন্ত্রী বদল হওয়ার জেরে কেন্দ্রীয় বাজেট পাশ করতে সমস্যার মুখে পড়েছে ফ্রান্স। দ্বিতীয়ত, গত কয়েক দশকে ‘নেপোলিয়নের দেশে’ লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বিদেশি ঋণের মাত্রা। বর্তমানে সেটা বাড়তে বাড়তে ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫০০ কোটি ইউরোয় পৌঁছে গিয়েছে, যা ইইউ-ভুক্ত রাষ্ট্রটির ‘মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন’ বা জিডিপির (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) ১১৪ শতাংশ। বিশ্লেষকদের দাবি, আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, ফ্রান্সে কোনও শিশু জন্মগ্রহণ করলে তার মাথায় থাকছে ৫০ হাজার কোটি ইউরোর ঋণ।

০৫ ১৯

এই আবহে ফরাসি অর্থনীতি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছে ‘আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার’ বা আইএমএফ (ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড)। তাদের দাবি, জাতীয় ঋণকে জিডিপির ১৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার রাস্তায় হাঁটছে প্যারিস, যা ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার চেয়েও ভয়াবহ। বর্তমানে প্রতি বছর শুধুমাত্র ঋণের সুদবাবদ ৫,৯০০ কোটি ইউরো দিতে হচ্ছে ফরাসি সরকারকে। সেই পরিমাণ ২০২৯ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার কোটিতে।

০৬ ১৯

বিশেষজ্ঞদের কথায়, এই পরিস্থিতিতে ‘গোদের উপর বিষফোড়া’র মতো হু হু করে বাড়ছে বাজেট ঘাটতি। এ বছরে সেটা দাঁড়িয়ে আছে ৫.৮ শতাংশে। অবস্থা আরও খারাপ হলে এই অঙ্ক আট শতাংশ পর্যন্ত নামতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তাঁরা। এককথায় দেউলিয়া হওয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ইউরোপের প্রথম তিনটি দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। বাকি দু’টি রাষ্ট্র হল গ্রিস এবং ইটালি।

০৭ ১৯

ফ্রান্সের এই আর্থিক দুরাবস্থার নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। ১৮ শতক থেকে আফ্রিকা ও এশিয়ার একের পর এক দেশ দখল করে বিশাল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলে প্যারিস। পরবর্তী ২০০ বছর ধরে সেখানকার লুট করা সম্পদ নিজেদের দেশে নিয়ে যেতে সক্ষম হন ফরাসিরা। ফলে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও পশ্চিম ইউরোপের দেশটির বৈভবে এতটুকু আঁচড় লাগেনি। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ঠাট বজায় রাখতে সমস্যা হয়নি ফ্রান্সের।

০৮ ১৯

তথ্য বলছে, গত শতাব্দীর ৭০-এর দশকে বাজেটের পর উদ্বৃত্ত অর্থ হাতে থাকত ফরাসি সরকারের। ফলে ওই সময় থেকেই একের পর এক সামাজিক সুরক্ষামূলক প্রকল্প চালু করে ইউরোপীয় দেশটির প্রশাসন। আমজনতার আরামের কথা মাথায় রেখে শুরু হয় জলের মতো টাকা খরচ। অচিরেই এর প্রভাব গিয়ে পড়ে রাজকোষে। এই পরিস্থিতিতে বৈভব বজায় রাখতে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেওয়া শুরু করে প্যারিস। বর্তমানে তারই কুফল হাতেনাতে পাচ্ছে ফ্রান্স, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

০৯ ১৯

২০২০ সালে কোভিড অতিমারি শুরু হলে বিদেশি ঋণে সুদের অঙ্ক হু-হু করে বাড়তে শুরু করে। পরবর্তী পাঁচ বছরে ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে অস্থির হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত। ঋণের জালে জড়িয়ে থাকার কারণে এই পরিস্থিতিতে একেবারে খাদের ধারে এসে দাঁড়িয়েছে ফরাসি অর্থনীতি। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যয় সঙ্কোচনের সিদ্ধান্ত নেয় মাকরঁ সরকার। সেই আভাস মিলতেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে সামিল হন সাধারণ মানুষ।

১০ ১৯

এ বছরের সেপ্টেম্বরে পার্লামেন্টে দেওয়া বাজেট বক্তৃতায় খরচ কমানোর নিদান দেন সাবেক ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেরু। জাতীয় ব্যয়ের ৪৩ শতাংশ হ্রাস করার প্রস্তাব দিতে শোনা যায় তাঁকে। এর জন্য স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলির বরাদ্দ থেকে ৫০০ কোটি কাটছাঁট করেন তিনি। কমিয়ে দেন পেনশনের অঙ্ক। এ ছাড়া জাতীয় ছুটির তালিকা থেকে দু’টি কমানোর প্রস্তাবও দেন বেরু।

১১ ১৯

পার্লামেন্টে বাজেট ভাষণে ফ্রাঁসোয়া এ-হেন পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিতেই দেশ জুড়ে শুরু হয় আন্দোলন। বিক্ষোভকারীদের যুক্তি, বিত্তশালীদের কথা মাথায় রেখে সামাজিক সুরক্ষামূলক প্রকল্পগুলি থেকে ব্যয় সঙ্কোচন করছে মাকরঁ সরকার। এতে চাপ তৈরি হলেও প্রথমে মচকাননি বেরু। কিন্তু পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটে হেরে যান তিনি। এর পরেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন ৭৪ বছরের ফরাসি রাজনীতিবিদ।

১২ ১৯

ফ্রান্সের আর্থিক বৃদ্ধির হার নেমে যাওয়ার নেপথ্যে আরও একটি কারণ রয়েছে। আটলান্টিকের পারের এই ইউরোপীয় দেশটির জনসংখ্যার সিংহভাগই বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তা ছাড়া গত শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকেই ঘরোয়া উৎপাদনশীলতা ধীরে ধীরে কমাতে থাকে প্যারিস। ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানির উপরেই বেশি ভরসা করেছিলেন তৎকালীন ফরাসি শাসকেরা। বিগত দিনের সেই সিদ্ধান্তগুলির মাসুল এখন দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।

১৩ ১৯

উল্লেখ্য, গত ৯ মে বেরু পদত্যাগ করলে দীর্ঘ দিনের সহযোগী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করেন মাকরঁ। ৩৯ বছরের এই ফরাসি রাজনীতিবিদ এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১৭ সালে কুর্সি পাওয়ার পরই লেকর্নুকে তাঁর ‘কিচেন ক্যাবিনেট’-এর সদস্য করে নেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। বেহাল অর্থনীতিকে ঠিক রাস্তায় নিয়ে আসতে তিনিও ব্যয় সঙ্কোচনের কথা বলেছেন। এর জেরে ‘ব্লক এভরিথিং’ আন্দোলন হাওয়া পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।উল্লেখ্য, গত ৯ মে বেরু পদত্যাগ করলে দীর্ঘ দিনের সহযোগী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করেন মাকরঁ। ৩৯ বছরের এই ফরাসি রাজনীতিবিদ এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১৭ সালে কুর্সি পাওয়ার পরই লেকর্নুকে তাঁর ‘কিচেন ক্যাবিনেট’-এর সদস্য করে নেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। বেহাল অর্থনীতিকে ঠিক রাস্তায় নিয়ে আসতে তিনিও ব্যয় সঙ্কোচনের কথা বলেছেন। এর জেরে ‘ব্লক এভরিথিং’ আন্দোলন হাওয়া পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

১৪ ১৯

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে লেকর্নুর নাম ঘোষণা হতেই তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুমকি দিয়েছে ফ্রান্সের কট্টরপন্থী অতি বাম দল ‘ফ্রান্স আনবোউড’। অন্য দিকে, মাকরেঁর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী তথা অতি ডানপন্থী দল ‘ন্যাশনাল র‌্যালি’র নেত্রী মেরিন লে পেন এক্স হ্যান্ডলে (আগে নাম ছিল টুইটার) লিখেছেন, ‘‘নতুন প্রধানমন্ত্রীর কাজকর্ম আমরা বিচার করব। তবে শেষ ল্যাপে পৌঁছে গিয়েছেন মাকরঁ। ছল করে আর ক্ষমতা টিঁকিয়ে রাখতে পারবেন না তিনি।’’

১৫ ১৯

ফরাসি গণমাধ্যমগুলির একাংশ অবশ্য লেকর্নুর প্রধানমন্ত্রী হওয়াকে মাকরঁর ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসাবেই দেখছেন। কারণ, অতি ডানপন্থীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশ ভাল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কিভকে পিছন থেকে সাহায্য করার ব্যাপারে তাঁদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন তিনি। ফলে মেরিন লে পেনের মতো নেত্রীকে সামলে তিনি বাজেট পাশ করিয়ে নিতে পারবেন বলে দাবি করেছে তারা।

১৬ ১৯

ফ্রান্স জুড়ে চলা গণআন্দোলনে অবশ্য নেপালের সঙ্গে একটি সাদৃশ্য চোখে পড়েছে। দু’টি জায়গাতেই বিক্ষোভ সংগঠনে বড় ভূমিকা পালন করেছে সমাজমাধ্যম। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর সে দেশ জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে একাধিক শ্রমিক সংগঠন। ওই দিন অশান্তির আশঙ্কা থাকায় ৮০ হাজারের বেশি পুলিশকে রাস্তায় নামানোর কথা জানিয়েছে মাকরঁ প্রশাসন।

১৭ ১৯

২০১৮ সালে একই রকমের বিক্ষোভ প্রত্যক্ষ করেছিল ফ্রান্স। সে বার ‘ইয়েলো ভেস্ট’-এর ব্যানারে পরিচালিত হয় গণআন্দোলন। ২০২৩ সালে পুলিশের গুলিতে নাহেল নামে ১৭ বছরের এক অভিবাসী কিশোরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজধানী প্যারিসে রীতিমতো দাঙ্গা বেধে গিয়েছিল। ফরাসি শহরটির মেয়রের বাড়িতেও হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। কোনও মতে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান তিনি।

১৮ ১৯

বিশ্লেষকদের দাবি, ফরাসি অর্থনীতির বেহাল দশার নেপথ্যে আরও একটি কারণ হল অভিবাসী সমস্যা। গত কয়েক দশকে আফ্রিকাবাসীদের সংখ্যা ফ্রান্সের ভিতর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। পরবর্তীকালে এর চাপও গিয়ে পড়ে কোষাগারের উপরে। সেটা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে।

১৯ ১৯

১৭৮৯ সালে হওয়া ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম কারণ ছিল আর্থিক দুরাবস্থা। ওই সময়ে পরিস্থিতি সামলাতে পর পর চার জন অর্থমন্ত্রী নিয়োগ করেন রাজা চতুর্দশ লুই। ইতিহাসবিদদের দাবি, এঁদের মধ্যে যোগ্যতম ছিলেন জ্যাক নেকার। তিনিও ব্যয় সঙ্কোচনের কথা বলে অভিজাত সম্প্রদায়ের চক্ষুশূল হয়ে পড়েন। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি ছিল বাস্তিল দুর্গের পতন। ২৩৬ বছর পর তারই পুনরাবৃত্তি দেখবে প্যারিস? উত্তর দেবে সময়।

সব ছবি: রয়টার্স

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement