নেটপ্রভাবী থেকে ‘বিগ বস্’-এর বিজয়ী। রবিবার সেই এলভিস যাদবের বাড়িতে চলে গুলি। তার পর থেকেই চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন এলভিস। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ কোটি কোটি টাকা। তবুও নাকি জি২০ সম্মেলনের জন্য সাজানো ফুলদানি চুরি করেছিলেন তিনি।
১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হরিয়ানের গুরুগ্রামে জন্ম এলভিসের। সেখানকার স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে দিল্লি চলে যান তিনি। বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক হন এলভিস।
সমাজমাধ্যমে নানা রকম বিনোদনমূলক ভিডিয়ো বানিয়ে উপার্জন করা যায় তা জানতে পেরে উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়েন এলভিস। রোজগারের জন্য সেই পেশা বেছে নেন তিনি।
২০১৬ সালে ইউটিউবে নিজের চ্যানেল খোলেন এলভিস। ধীরে ধীরে সেই ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে পরিচিতি বাড়তে থাকে তাঁর। ২০১৯ সালে আরও একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন তিনি।
সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে উঠলে ২০২৩ সালে আরও একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন এলভিস। সমাজমাধ্যম প্রভাবী এলভিসের পোশাকের দু’টি ব্র্যান্ডও রয়েছে।
একটি অসরকারি সংগঠনও (এনজিও) চালান এলভিস। দুঃস্থ শিশুদের শিক্ষা এবং অন্নসংস্থান করে এই সংস্থা। ২০২২ সাল থেকে একাধিক মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করা শুরু করেন তিনি।
এলভিস শুধুমাত্র সমাজমাধ্যমের ঘেরাটোপেই নিজেকে বন্দি রাখতে চাননি। ২০২৩ সালে জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস্ ওটিটি ২’-এ প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন তিনি।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ২০২৪ সাল পর্যন্ত এলভিসের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫০০০০০০০০ টাকা (৫০ কোটি টাকা)। তাঁর জীবনও বিলাসিতায় মোড়া।
গুরুগ্রামে প্রাসাদোপম বাড়ি রয়েছে এলভিসের। সেই বহুতলের বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকা। ১৬ খানা শোবার ঘর রয়েছে সেখানে। প্রতিটি বেডরুমের সাজসজ্জাও ভিন্ন।
এলভিসের বাড়িতে রান্নাঘর থেকে শুরু করে শৌচালয়ের অন্দরসজ্জাও নজরকাড়া, যা যে কোনও বিলাসবহুল হোটেলকেও তাক লাগিয়ে দিতে সক্ষম।
এলভিসের গ্যারাজেও রয়েছে বহু দামি গাড়ি। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে পোর্শে ৭১৮ বক্সস্টার, মার্সিডিজ বেঞ্জ জি-ওয়াগন, টয়োটা ফর্চুনার লেজেন্ডার, হুন্ডাই ভার্না এবং সুজ়ুকি ওয়াগনআরের মতো গাড়ি।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে এলভিসের বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তোলেন তাঁর বাবা-মা। তাঁদের দাবি, এলভিসের জীবন পুরোটাই মেকি। তিনি নাকি সমস্তটাই সমাজমাধ্যমে বিখ্যাত হওয়ার জন্য করেন। এলভিস নিজেকে যে ভাবে উপস্থাপন করেন, ব্যক্তিগত স্তরে তিনি একেবারেই তেমন নন।
কানাঘুষো শোনা যায়, দুবাইয়ে একটি ডুপ্লে কিনে রেখেছেন এলভিস। সেই ডুপ্লের বাজারমূল্য ভারতীয় মুদ্রায় ৮ কোটি টাকার কাছাকাছি।
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে এলভিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, তিনি নাকি সাপের বিষের চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত। উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় একটি রেভ পার্টিতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। দাবি, সেই রেভ পার্টির আয়োজক ছিলেন এলভিস।
অভিযোগ, বিদেশি মহিলাদের নিয়ে অবৈধ ভাবে এই রেভ পার্টির আয়োজন করেছিলেন এলভিস। শুধু তাই-ই নয়, এই পার্টিতে মাদক হিসাবে সাপের বিষ ব্যবহার করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ।
তল্লাশি অভিযানের সময় পার্টি থেকে উদ্ধার হয়েছিল ন’টি বিষধর সাপ। তার মধ্যে ছিল পাঁচটি গোখরো, দু’টি দু’মুখো সাপ, একটি লাল সাপ এবং একটি অজগর। অভিযোগ, সঙ্গীদের নিয়ে নয়ডা এবং এনসিআরের খামারবাড়িতে জ্যান্ত সাপ এবং সাপের বিষ নিয়ে ভিডিয়ো শুট করতেন এলভিস।
খামারবাড়িতে নাকি বেআইনি ভাবে রেভ পার্টির আয়োজনও করতেন এলভিস। শুধু তাই-ই নয়, ওই পার্টিতে বিদেশি মহিলাদের ডেকে এনে মাদক হিসাবে সাপের বিষ পান করাতেন তিনি। গত বছর মার্চ মাসে গ্রেফতারও হতে হয়েছিল তাঁকে। যদিও জামিনে মুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
২০২৩ সালের মার্চ মাসে এলভিসের বিরুদ্ধে উঠেছিল ফুলদানি চুরির অভিযোগ। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ফুলগাছের টব দিয়ে গুরুগ্রাম সাজানো হয়েছিল। সেই টব চুরির ঘটনাতেও এলভিসের নাম জড়ায়। হরিয়ানা পুলিশ এই ঘটনায় মনমোহন যাদব নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল।
বিভিন্ন সূত্র থেকে দাবি করা হয়, যে গাড়ি করে মনমোহন ফুলের টব চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই গাড়িটি ব্যবহার করেছিলেন এলভিস। যদিও সেই অভিযোগ নস্যাৎ করেছিলেন এলভিস। তিনি পাল্টা দাবি করেছিলেন, এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই।
২০২৪ সালের মে মাসে বেআইনি অর্থ লেনদেন ও পাচারে নাম জড়িয়েছিল এলভিসের। এমনকি, জনপ্রিয় মডেল প্রিন্স নারুলার সঙ্গেও বচসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। সমাজমাধ্যমের পাতায় কটুবাক্য বর্ষণ করে একে অপরকে আঘাতও করেন তাঁরা।
রবিবার ভোর ৫টা নাগাদ তিন বাইক-আরোহী এলভিসের বাড়িতে গুলি ছুড়ে পালায় বলে দাবি পুলিশের। এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে ‘ভাউ গ্যাং’।
২০২০ সাল থেকে সক্রিয় এই সংগঠনের দাবি, ‘বেটিং অ্যাপ’-এর প্রচার করেন এলভিস। এই জন্যই তাঁকে শিক্ষা দিতে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে তাঁর বাড়ির সামনে। হামলাকারীদের ধরতে চিরুনিতল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।