Resignations under Modi Government

প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়ের কায়দায় হঠাৎ ইস্তফা! মোদী সরকারের আমলে দায়িত্ব ছেড়েছেন বাঘা বাঘা কর্তাব্যক্তি

‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’-এর মতো দিন কয়েক আগে হঠাৎ করেই উপরাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দেন জগদীপ ধনখড়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে তাঁর কায়দায় চাকরি ছেড়েছেন একাধিক বাঘা বাঘা আধিকারিক। কিন্তু কেন?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৫ ১৩:১০
Share:
০১ ২০

শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে দিন কয়েক আগে উপরাষ্ট্রপতি পদে আচমকা ইস্তফা দেন জগদীপ ধনখড়। নতুন কাউকে স্থলাভিষিক্ত করতে ভোটের তোড়জোড় শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে ধনখড়ই প্রথম নন। ১১ বছরের বেশি সময় ধরে চলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে মেয়াদ শেষের আগে পদত্যাগ করেছেন একগুচ্ছ শীর্ষ আধিকারিক।

০২ ২০

সেই তালিকায় প্রথমেই আসবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা আরবিআইয়ের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজনের নাম। ২০১৩ সালে ইউপিএ-২ সরকারের শেষ লগ্নে তাঁকে ওই পদে বসান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ঠিক তার পরের বছরই প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন মোদী। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে রাজনকে দ্বিতীয় বারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের দায়িত্ব গ্রহণ করতে বলে সরকার। কিন্তু, সবিনয়ে তা ফিরিয়ে দেন তিনি।

Advertisement
০৩ ২০

আরবিআই গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার বা আইএমএফের মুখ্য অর্থনীতিবিদ (চিফ ইকোনমিস্ট) হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল রাজনের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন তিনি। মোদী ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষকতার কাজ নিয়ে ফের শিকাগোতেই ফিরে যান তিনি।

০৪ ২০

২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী আর্থিক সঙ্কটের ভবিষ্যদ্বাণী আগেই করেছিলেন রাজন। ফলে দুনিয়ায় অর্থনৈতিক বিপর্যয় শুরু হলে রাতারাতি খবরের শিরোনামে চলে আসেন তিনি। আরবিআই গভর্নর থাকাকালীন প্রকাশ্যে নানা ইস্যুতে মন্তব্য করতেন রাজন, যা একেবারেই ভাল চোখে দেখেনি সরকার। ফলে বার বার কড়া সমালোচনার মুখ পড়তে হচ্ছিল তাঁকে।

০৫ ২০

কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর থাকাকালীন এক বার ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে একটি মন্তব্য করেন রাজন। সঙ্গে সঙ্গেই তার সমালোচনা করেন তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ওই ইস্যুতে রঘুরামের উপরে খড়্গহস্ত হন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও। তাঁর কার্যকালের মেয়াদের মধ্যেই নোট বাতিলের পরিকল্পনা করে কেন্দ্র। মোদী সরকারের ওই নীতির প্রবল বিরোধী ছিলেন রাজন।

০৬ ২০

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ৫০০ এবং হাজার টাকা নোট বাতিলের ঘোষণা করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদী। রাজন পদত্যাগ করার দু’মাসের মাথায় ওই প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। ওই সময় এর বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন রঘুরাম, যা একেবারেই গায়ে মাখেনি কেন্দ্র। শুধু তা-ই নয়, পরবর্তী কয়েক মাস ধরে নোট বাতিল প্রক্রিয়াটি চালিয়েও গিয়েছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক।

০৭ ২০

রাজন-উত্তর আরবিআই গভর্নরের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আফ্রিকার কেনিয়ায় জন্ম হওয়া উর্জিত পটেল। কিন্তু মাত্র দু’বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড বৈঠকের মুখে আচমকা ইস্তফা দেন তিনি। ‘ব্যক্তিগত কারণ’-এ পদ ছাড়ছেন বলে মোদী সরকারকে জানিয়ে দেন উর্জিত। প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই ইস্তফা দেওয়া বিষয়টি নিয়ে দানা বাঁধে বিতর্ক।

০৮ ২০

কেন্দ্রের নোট বাতিলের যাবতীয় ঝড়ঝাপটা অবশ্য দক্ষ হাতে সামলে দেন পটেল। কিন্তু সূত্রের খবর, রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের রিজ়ার্ভ তহবিলে থাকা ৪,৮৭৩ কোটি ডলারের কিছু অংশ আলাদা করতে চেয়েছিল মোদী সরকার। ভারতীয় মুদ্রায় টাকার অঙ্কটা প্রায় ৩.৬ লক্ষ কোটি। এতে রাজি হননি উর্জিত। বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকায় একটা সময়ে পদত্যাগ করেন তিনি।

০৯ ২০

আরবিআই আইনের সাত নম্বর ধারা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের রিজ়ার্ভে থাকা অর্থ খরচের অনুমতি রয়েছে। যদিও আগে কখনওই সংশ্লিষ্ট আইনের ধারাটি ব্যবহার করেনি কেন্দ্র। বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, নোট বাতিলের লোকসান ঢাকতে তিন লক্ষ কোটি টাকা তুলে নেয় মোদী সরকার, যা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি তৎকালীন গভর্নর উর্জিত পটেল।

১০ ২০

সূত্রের খবর, সুদের হার সংক্রান্ত নীতি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে পটেলের দূরত্ব বাড়ছিল। সাবেক অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে এক বার খোলাখুলি ভাবে প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট বন্ড বিলির পক্ষপাতী ছিলেন উর্জিত। পাশাপাশি, এতে ‘নো ইয়োর কাস্টমার’ বা কেওয়াইসি রাখার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন তিনি। যদিও এর কোনওটাই মানেনি মোদী সরকার।

১১ ২০

উর্জিতের পদত্যাগের বেশ কয়েক বছর পর নির্বাচনী বন্ড বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। তাঁর ইস্তফা লগ্নিকারীদের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। ফলে স্টকের সূচক হু-হু করে নেমে যায়। পটেলের পদত্যাগ নিয়ে মুখ খোলেন তাঁর পূর্বসূরি রঘুরাম রাজনও। একে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, নির্বাচনী বন্ডের প্রবল বিরোধী ছিলেন রাজনও।

১২ ২০

২০১৯ সালে আরবিআইয়ের ডেপুটি গভর্নর পদ থেকে ইস্তফা দেন বিরল আচার্য। ঠিক তার আগের বছর (পড়ুন ২০১৮ সাল) একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা নিয়ে জোরালো সওয়াল করেন তিনি। বলেন, ‘‘এই অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে ভয়ঙ্কর আর্থিক বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা বাড়বে।’’ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকের কয়েক সপ্তাহ আগে ইস্তফাপত্র জমা দেন তিনি।

১৩ ২০

উর্জিতের মতো বিরলও ব্যক্তিগত কারণের ‘অজুহাত’ দেখিয়ে আরবিআইয়ের ডেপুটি গভর্নরের পদ ছাড়েন। সূত্রের খবর, কেন্দ্রের পাশাপাশি তৎকালীন গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য ওই সময় তুঙ্গে উঠেছিল। রাজস্ব ঘাটতি এবং মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে দু’জনে দু’রকম পন্থা অবলম্বন করতে চাইছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

১৪ ২০

এই তালিকায় চার নম্বরে রয়েছে সাবেক মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা বা সিইএ (চিফ ইকোনমিক অ্যাডভাইসার) অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের নাম। ২০১৪ সালের অক্টোবরে ওই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। আমেরিকার ‘পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্স’-এর সিনিয়র ফেলো ছিলেন সুব্রহ্মণ্যম। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে কাজ করছিলেন তিনি।

১৫ ২০

২০১৮ সালে একটি ভিডিয়ো কনফারেন্সে জেটলিকে পদত্যাগের কথা জানিয়ে দেন অরবিন্দ। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর নাতির জন্ম হয়। তাঁকে দেখতে আমেরিকা চলে যাচ্ছেন বলে জানান সুব্রহ্মণ্যম। তাঁর ইস্তফার সময় মারাত্মক অসুস্থ ছিলেন জেটলি।

১৬ ২০

এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণের প্রবল সমর্থক ছিলেন অরবিন্দ। এই নিয়ে ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ’ বা আরএসএস অনুমোদিত ‘স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ’ এবং বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর তোপের মুখে পড়েন তিনি। শুধু তা-ই নয়, তাঁর ওয়াশিংটনের সম্পত্তি নিয়েও এক বার বিস্ফোরক মন্তব্য করেন স্বামী। বিষয়টি মেটাতে জেটলিকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।

১৭ ২০

২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার কয়েক দিন আগে হঠাৎই ইস্তফা দেন নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল। ২০২২ থেকে ওই পদে ছিলেন তিনি। ১৯৮৫ ব্যাচের পঞ্জাব ক্যাডারের আইএএস অফিসার গোয়েলের পদত্যাগের কারণ আজও অজানা। তবে চাকরি না ছাড়লে তাঁর মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার সম্ভাবনা ছিল উজ্জ্বল।

১৮ ২০

কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরেই ভোটের মুখে ইস্তফা দেন তিনি। তাঁকে পদত্যাগ করতে একরকম বাধ্যই করা হয়েছিল। চাকরি ছাড়ার পর অবশ্য প্রকাশ্যে এই নিয়ে কিছুই বলেননি গোয়েল।

১৯ ২০

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রচারে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ তুলে খবরের শিরোনামে আসেন নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা। কিন্তু নির্বাচনের ঠিক পরের বছরই (পড়ুন ২০২০) পদত্যাগ করেন তিনি।

২০ ২০

লাভাসা পদত্যাগ করার পর তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে আয়কর দফতর। পেগাসাস স্পাইঅয়্যার মামলাতেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। ১৯৮০ ব্যাচের হরিয়ানা ক্যাডারের আইএএস অফিসার ছিলেন তিনি।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement