India-UK Free Trade Agreement

সস্তা হচ্ছে স্কচ-চকলেট, বিলেতের বাজার কাঁপাবে চিংড়ি! ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্যচুক্তিতে কার লাভ, কার ক্ষতি?

ব্রিটেনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি হওয়ায় একগুচ্ছ পণ্যে শুল্কছাড় দেবে ভারত। ফলে ঘরোয়া বাজারে সস্তা হতে চলেছে বিলিতি মদ থেকে শুরু করে চকোলেট। অন্য দিকে, এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, পেশাদার থেকে মৎস্যজীবীরা এই চুক্তির ফলে লাভবান হবেন বলে আশাবাদী বাণিজ্য মন্ত্রক।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৫ ১৫:০৬
Share:
০১ ১৮

ব্রিটেনের সঙ্গে ‘মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি’ বা এফটিএ (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) সেরে ফেলেছে ভারত। সেই প্রক্রিয়া শেষ হতে না হতেই এ দেশে ব্যবসা শুরুর ঘোষণা করে ২৬টি ইংরেজ সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সমঝোতায় কতটা লাভবান হবে নয়াদিল্লি? কোন কোন জিনিসের কমবে দাম? তালিকা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে মেতেছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা। এ ক্ষেত্রে মুনাফার পাল্লা দু’পক্ষের তুল্যমূল্য থাকবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

০২ ১৮

বিশ্লেষকদের দাবি, ব্রিটেনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তিতে সবচেয়ে লাভবান হতে চলেছে এ দেশের চিকিৎসাক্ষেত্র। এখানকার হাসপাতাল, গবেষণাগার বা ডাক্তারেরা কম খরচে বিলেত থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে পারবেন। এ ছাড়া মহাকাশ গবেষণায় প্রয়োজনীয় বেশ কিছু যন্ত্রাংশও সেখান থেকে ন্যূনতম মূল্যে আমদানি করতে পারবে নয়াদিল্লি।

Advertisement
০৩ ১৮

বর্তমানে ব্রিটিশ পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক নিয়ে থাকে কেন্দ্র। এফটিএ কার্যকর হলে সেটা নেমে আসবে তিন শতাংশে। এর ফলে ভারতের বাজারে সস্তা হবে বিলেতের নরম পানীয়, প্রসাধনী, চকোলেট, বিস্কুট, ভেড়ার মাংস, স্যামন মাছ এবং গাড়ি। বৈদ্যুতিন গাড়ি বা ইভির (ইলেকট্রিক ভেহিকল) ক্ষেত্রে ১১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি।

০৪ ১৮

সংবাদসংস্থা ‘প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া’ বা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এফটিএ-র জন্য লাভবান হবে ব্রিটেনের মদ প্রস্তুত শিল্প। স্কচ ও হুইস্কির মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলিকে এ দেশের বাজারে ঢালাও বিক্রি করার সুযোগ পাবে তারা। বর্তমানে ব্রিটিশ হুইস্কির উপরে আমদানি শুল্ক রয়েছে ১৫০ শতাংশ। মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির জন্য সেটা কমে প্রথমে ৭৫ শতাংশ এবং আগামী ১০ বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশে নেমে আসবে। অর্থাৎ, ঘরোয়া বাজারে ব্রিটিশ মদের দাম যে অনেকটাই কমতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।

০৫ ১৮

ভারতে ব্রিটেন থেকে আমদানি করা হুইস্কির ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে অন্যতম হল সিভাস রিগাল এবং দ্য গ্লেনলিভেট। এ ছাড়া ডিয়াজিওর ছাতার তলায় থাকা স্কচ ব্র্যান্ডের মধ্যে জনি ওয়াকার, সিঙ্গলটন এবং টালিসকার এ দেশের বাজারে বিক্রি করে থাকে ইংরেজ মদ প্রস্তুতকারী সংস্থা। মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির জেরে একধাক্কায় এগুলির দাম অনেকটা কমে যাবে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

০৬ ১৮

মদ ছাড়া রাসায়নিক এবং বস্ত্র রফতানি ক্ষেত্রে রয়েছে শুল্কছাড়ের সম্ভাবনা। এতে ২০ শতাংশ কর ধাপে ধাপে কমিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনতে পারে ব্রিটেন। প্রাথমিক ভাবে সামুদ্রিক পণ্যের ক্ষেত্রে আট শতাংশ, রাসায়নিকের উপরে আট শতাংশ এবং বস্ত্র ও পোশাকের উপরে ১২ শতাংশ শুল্ক ধার্য করতে চাইছে আটলান্টিকের দ্বীপরাষ্ট্রের সরকার।

০৭ ১৮

দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির ফলে ব্রিটেনের বাজারে ভারতের বেশ কিছু কৃষিজাত এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য কোনও শুল্ক লাগবে না। নতুন চুক্তি অনুসারে, হলুদ, গোলমরিচ, এলাচের মতো কৃষিপণ্য এবং আমের শাঁস, আচার, ডালের মতো প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যগুলি ব্রিটিশ বাজারে বিনা শুল্কে প্রবেশ করতে পারবে।

০৮ ১৮

পাশাপাশি, ভারতীয় মৎস্যজীবীরা এই চুক্তির ফলে উপকৃত হবেন বলে জানা গিয়েছে। এ দেশের চিংড়ি, টুনা মাছ-সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য বিনা শুল্কে ব্রিটেনের বাজারে পাঠাতে পারবেন তাঁরা। চুক্তির ফলে ভারত থেকে রফতানি হওয়া প্রায় ৯৯ শতাংশ পণ্যই ব্রিটেনের বাজারে বিনা শুল্কে প্রবেশ করতে পারবে।

০৯ ১৮

পণ্য বাদ দিলে এই বাণিজ্যচুক্তির জেরে ভারতীয়দের ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে থাকা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানকার ফ্রিল্যান্সার এবং বিভিন্ন সংস্থা মিলিয়ে মোট ৩৬টি ক্ষেত্রকে এ দেশের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করছে ইংরেজ সরকার। এর মধ্যে ৩৫টি ক্ষেত্রে ভারতীয় পেশাদারেরা সে দেশ থেকে বিনা বাধায় দু’বছরের জন্য কাজ করতে পারবেন। ব্রিটেনে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কোনও দফতর না থাকলেও এই সুবিধা পাবেন তাঁরা।

১০ ১৮

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এর জেরে সরাসরি ভাবে ৬০ হাজারের বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদার উপকৃত হবেন। ব্রিটেনে থেকে দিব্যি নিজের সংস্থার হয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন তাঁরা। ফলে আগামী দিনে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস বা টিসিএস, ইনফোসিস, টেক মাহিন্দ্রা, এইচসিএল টেকনোলজিস এবং উইপ্রোর তথ্যপ্রযুক্তি প্রকৌশলীদের ভারত থেকে বিলেতে যাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

১১ ১৮

মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় পেশাদারদের তিন বছরের জন্য ব্রিটেনের যাবতীয় সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত খরচ থেকে অব্যাহতি মিলবে। এর ফলে রাঁধুনি, যোগশিক্ষক, সঙ্গীতজ্ঞ এবং অন্য চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত থেকে এই পেশাদারদের ইংলিশ চ্যানেলের পারের দেশটিতে যাওয়ার সংখ্যা নেহাত কম নয়।

১২ ১৮

উল্টো দিকে সংশ্লিষ্ট চুক্তির ফলে ভারতীয় শুল্কে বড় রকমের ছাড় পাবে ব্রিটেন। আগামী ১০ বছরে ৮৫ শতাংশ ব্যবসা সেখানকার সংস্থাগুলি প্রায় বিনা শুল্কে করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, এ দেশের সরকারি ক্ষেত্রে লগ্নির সুযোগ মিলবে তাদের। তবে সে ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত রয়েছে।

১৩ ১৮

এফটিএ অনুযায়ী, ২০০ কোটি টাকার অ-সংবেদনশীল সরকারি প্রকল্পে দরপত্র জমা করতে পারবে যে কোনও ব্রিটিশ সংস্থা। বিশ্লেষকদের দাবি, এর ফলে প্রতি বছর ভারতে ৪০ হাজার সরকারি প্রকল্পে অংশগ্রহণের অধিকার পাবে দ্বীপরাষ্ট্রের একাধিক কোম্পানি। সেখান থেকে ৪.০৯ লক্ষ কোটি টাকার বরাত পেতে পারে তারা।

১৪ ১৮

বাণিজ্যচুক্তির ফলে সরাসরি ২,২০০-র বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করা যাবে বলে আশাবাদী ব্রিটিশ সরকার। সেখানকার কর্মীদের বছরে ২২০ কোটি পাউন্ড পর্যন্ত বাড়তে পারে মজুরি। এ ছাড়া সস্তা দামে পোশাক, জুতো এবং খাদ্যপণ্য কেনার সুযোগ পাবেন তাঁরা।

১৫ ১৮

চলতি বছরের ২৪ জুলাই ব্রিটেনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত করে ভারত। নয়াদিল্লির তরফে এতে সই করেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। উল্টো দিকে ছিলেন ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ড। পরে এই নিয়ে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বিবৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার।

১৬ ১৮

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, বার্ষিক ৩,৪০০ কোটি ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের চুক্তিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসে ব্রিটেন। তার পর এটাই কোনও দেশের সঙ্গে তাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক চুক্তি বলে জানা গিয়েছে। দীর্ঘ আলোচনার পরে গত ৬ মে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা শেষ করেছিল দুই দেশ।

১৭ ১৮

এফটিএ-র জেরে ২০৩০ সালের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে আশাবাদী আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তবে স্থানীয়দের স্বার্থের কথা ভেবে আপেল, চিজ়, দুগ্ধজাত পণ্য চুক্তির আওতায় আনেনি ভারত। এগুলি আমদানির ক্ষেত্রে কোনও করছাড় পাবে না ব্রিটেন।

১৮ ১৮

যৌথ বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের পাশে দাঁড়িয়ে মোদী বলেন, ‘‘আজ আমাদের (ভারত এবং ব্রিটেনের) সম্পর্কের এক ঐতিহাসিক দিন। বেশ কয়েক বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর, আজ দুই দেশ একটি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর করেছে।”

সব ছবি: রয়টার্স ও সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement