বলি অভিনেতার তুতো বোন। অথচ দাদার সঙ্গে কখনও অভিনয় করেননি। কেরিয়ারের প্রথম ছবি শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চনের মতো জনপ্রিয় তারকাদের সঙ্গে। সেই ছবি বক্স অফিসে হিটও হয়েছিল। অথচ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নায়িকা যেন বলিপাড়া থেকে ‘উধাও’ হয়ে গেলেন। অভিনয়ের জন্য পরিচিতি না পেলেও ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম-বিবাহ-বিচ্ছেদ-পরকীয়া নিয়ে অধিকাংশ সময় প্রচারে থেকেছেন বলি অভিনেত্রী কিম মিশেল শর্মা।
১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে মহারাষ্ট্রে অহমেদনগর জন্ম কিমের। মহারাষ্ট্রের একটি বোর্ডিং স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন কিম। সেখানে অধিকাংশ ছাত্রী বিদেশি ছিলেন। তাঁদের সঙ্গেই শৈশব কাটিয়েছিলেন কিম। পরে দশম শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করার পর আবার অহমেদনগর চলে গিয়েছিলেন কিম।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, দ্বাদশ শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করেননি কিম। অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়বেন তা নিয়েও নিশ্চিত ছিলেন না। এক বার দিল্লি ঘুরতে গিয়ে হঠাৎ একটি নামকরা সংস্থার বিজ্ঞাপনের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন কিম। সেই অডিশনে পাশ করে গিয়েছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপনী প্রচারে অভিনয় করে মডেলিং যাত্রা শুরু কিমের। তার পর ২০০০ সালে ‘মোহব্বতেঁ’ ছবিতে অভিনয় করে নজর কাড়েন কিম। কানাঘুষো শোনা যায়, সেই ফিল্মের সেট থেকেই সহ-অভিনেতা যুগল হংসরাজের সঙ্গে প্রেম তাঁর। যদিও সে প্রেম ছিল ক্ষণস্থায়ী।
বলি অভিনেতা অর্জুন রামপালের তুতো বোন কিম। তবে চলচ্চিত্রজগতে তাঁর কেরিয়ারের প্রদীপ জ্বলে ওঠার আগেই নিবে গিয়েছিল। অভিনয়ের চেয়ে বরং সম্পর্কের জন্যই বার বার প্রচারে এসেছিলেন কিম।
বলিপাড়ার গুঞ্জন, অভিনয়ে হাতেখড়ি হওয়ার পর যুধিষ্ঠির নামে এক ভিডিয়ো জকির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন কিম। তিন বছর সম্পর্কে ছিলেন তাঁরা। তার পর ২০০৩ সালে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল দু’জনের।
ভিডিয়ো জকির সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানার পর কিমের জীবনে এসেছিলেন জনপ্রিয় ক্রিকেটার। সেই ক্রিকেট তারকার সঙ্গে সর্বত্র দেখা যেত নায়িকাকে। কানাঘুষো শোনা যায়, ২০০৩ সাল থেকে যুবরাজ সিংহের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন কিম। যখন তাঁদের নিয়ে গুঞ্জন চরমে ওঠে, তখনই নাকি সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়।
যুবরাজের সঙ্গে নাকি টানা চার বছর সম্পর্কে ছিলেন কিম। শোনা যায়, যুবরাজ কিমকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেছিলেন। মতের অমিল হওয়ার কারণেই দু’জনের সম্পর্কে দাঁড়ি পড়ে যায়। পরে ২০১৯ সালে একটি পার্টিতে সস্ত্রীক যুবরাজের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা গিয়েছিল কিমকে।
যুবরাজের সঙ্গে বিচ্ছেদের এক বছর পর আবার প্রেমের জোয়ারে ভেসেছিলেন কিম। স্পেনের বিখ্যাত গায়ক কার্লোস মারিনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন কিম। শোনা যায় যে, ২০০৮ সালে তাঁদের বাগ্দান পর্বও সারা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সম্পর্কও ছিল স্বল্পকালীন। দু’বছর পর সেই সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল।
বার বার ব্যর্থ সম্পর্কের পরেও প্রেম থেকে ভরসা ওঠেনি কিমের। ২০১০ সালে কেনিয়ার ব্যবসায়ী আলি পুনজানির সঙ্গে চার হাত এক হয়েছিল কিমের। কিমের প্রথম বিয়ে হলেও তা ছিল আলির দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম বিয়ে থেকে আলির তিন সন্তান ছিল। বিয়ের পর অভিনয় ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে কেনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন কিম।
কেনিয়ায় হোটেলের ব্যবসা ছিল আলির। স্বামীর সঙ্গে সেই ব্যবসা সামলানোর কাজেই নেমে পড়েছিলেন কিম। কয়েক বছর পর নায়িকার সংসারে ফাটল ধরে। শোনা যায় যে, অন্য মহিলার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন আলি। কিমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হয়ে পড়েছিল।
২০১৬ সালে আলির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল কিমের। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, পুনজানির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছিলেন কিম। প্রায় কপর্দকশূন্য অবস্থায় কেনিয়া ছেড়ে মুম্বই ফিরে এসেছিলেন তিনি।
বিবাহবিচ্ছেদের পর প্রাক্তন স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর রোষানলে পড়েছিলেন কিম। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। শখের রেঞ্জ রোভার নিয়ে একটি হোটেলে যাচ্ছিলেন নায়িকা। সেখান থেকেই নায়িকার গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।
রাজস্থানের ব্যবসায়ী দিলীপকুমার পারওয়ানি ছিলেন কিমের প্রাক্তন স্বামী আলির খুব কাছের বন্ধু। তিনি নাকি জানতেন যে, কিম বেআইনি পথে রেঞ্জ রোভার কিনেছিলেন। তাই পুলিশকে খবর দিয়ে সেই গাড়ি বাজেয়াপ্ত করিয়েছিলেন। পরে সেই হোটেল থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে বাড়ি ফিরেছিলেন কিম।
২০১৮ সালে কিমের বিরুদ্ধে তাঁর পরিচারিকা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পরিচারিকার অভিযোগ ছিল, তাঁর সঙ্গে বেশির ভাগ সময় খারাপ ব্যবহার করতেন কিম। এক বার তিনি ভুল করে সাদা পোশাকের সঙ্গে রঙিন পোশাক মিশিয়ে কেচে ফেলেছিলেন বলে নাকি তাঁকে বাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে বার করে দিয়েছিলেন নায়িকা।
পরিচারিকার অভিযোগ, কিম তাঁকে বেতন দিতেন না। কখনও কখনও মারধরও করতেন। এই অভিযোগগুলি অবশ্য অস্বীকার করেছিলেন নায়িকা। তাঁর দাবি, তিনি কোনও দিনও তাঁর পরিচারিকার গায়ে হাত তোলেননি। তাঁর পরিচারিকা কাপড় কাচার সময় ৭০ হাজার টাকা মূল্যের পোশাক নষ্ট করে ফেলেছিলেন। তাই রেগে গিয়ে পরিচারিকাকে কাজ ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন তিনি। প্রতি মাসের ৭ তারিখে পরিচারিকাকে বেতন দিতেন কিম। কাজ ছাড়িয়ে দেওয়ার সময় কিম নাকি জানিয়েছিলেন যে, আগামী মাসের ৭ তারিখের মধ্যে তিনি বেতন পাঠিয়ে দেবেন।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায় যে, অর্জুন খন্না নামে এক পোশাকশিল্পীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন কিম। তাঁরা নাকি একত্রবাসও করতেন। কিমের জন্য অর্জুনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী শেফালির সাংসারিক অশান্তি চরমে উঠেছিল। পরে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে এনেছিলেন কিম। ২০১৮ সালে তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল।
২০১৬ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘সনম তেরি কসম’ নামে রোম্যান্টিক ঘরানার একটি হিন্দি ছবি। নবাগতা অভিনেতা হিসাবে নজর কাড়েন হর্ষবর্ধন রাণে। বলিপাড়ার জনশ্রুতি, হর্ষবর্ধনকে ডেট করতেন কিম।
গোড়ার দিকে নিজেদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করলেও পরে প্রকাশ্যে তাতে সিলমোহর দিয়েছিলেন হর্ষবর্ধন। কিমের সঙ্গে টানা দু’বছর প্রেম করেছিলেন বলি নায়ক। তার পর সেই সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল তাঁদের।
বিচ্ছেদের পর কিমকে নিয়ে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করলেও তাঁদের সম্পর্ক কেন ভেঙেছিল সে প্রসঙ্গে দুই তারকাই মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। পরে অবশ্য এক সাক্ষাৎকারে নায়ক মজার ছলে বলেছিলেন, ‘‘আমার মনে হয় জিনগত কোনও সমস্যা রয়েছে। ‘রং দে বসন্তি’ ছবিতে একটি সংলাপ ছিল— ‘আজ়াদি মেরি দুলহন হ্যায়’ (বাংলায় যার অর্থ, ‘স্বাধীনতাই আমার জীবনসঙ্গিনী’)। আমি এখন বলতে পারি, সিনেমাই আমার জীবনসঙ্গিনী।’’
হর্ষবর্ধনের সঙ্গে বিচ্ছেদের কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতীয় টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজের সঙ্গে প্রেমের খবর ছড়িয়ে পড়েছিল কিমের। সমাজমাধ্যমে যুগলের একাধিক ছবি ছড়িয়ে যাওয়ার পর একে অপরের সঙ্গে ছবি দিয়ে নিজেরাই সম্পর্কের কথা খোলসা করেছিলেন তাঁরা।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লিয়েন্ডারের সঙ্গে সম্পর্কে সিলমোহর দিয়েছিলেন কিম। এমনকি, সম্পর্কে আসার পর দুর্গাপুজোর সময় কিমকে নিয়ে কলকাতাতেও এসেছিলেন লিয়েন্ডার। শ্রীভূমির ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলেন তাঁরা। বড়দিনের মরসুমে পার্ক স্ট্রিটেও ঘুরতে গিয়েছিলেন যুগল।
কলকাতায় আসার পর সইসাবুদ করে নাকি বিয়েটাও সেরে ফেলেছিলেন লিয়েন্ডার এবং কিম। পরে অবশ্য জানা গিয়েছিল যে, গোটাটাই রটনা। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই সম্পর্কে ভাঙনের গুঞ্জন শোনা যেতে থাকে।
সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে লিয়েন্ডারের সঙ্গে নাকি মতবিরোধ হয়েছিল কিমের। দুই পক্ষের মধ্যে কোনও এক পক্ষ নাকি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে চাইছিলেন না। সেই সমস্যা থেকেই শেষ পর্যন্ত তাঁদের সম্পর্কে চিড় ধরে। ২০২৩ সালে প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে তোলা সমস্ত ছবি সমাজমাধ্যমের পাতা থেকে মুছে ফেলেছিলেন কিম।
বর্তমানে অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন কিম। ২০১১ সালে ‘লুট’ নামের হিন্দি ছবিতে শেষ দেখা গিয়েছিল কিমকে। তবে সমাজমাধ্যমে সক্রিয় রয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ছ’লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।