কেটে গিয়েছে ২৫ বছর। দু’যুগ অতিক্রান্ত হলেও, এখনও ফিকে হয়নি এই রিয়্যালিটি শোয়ের জনপ্রিয়তা। জনপ্রিয়তায় আজও টেক্কা দেবে তাবড় অনুষ্ঠানকে। ১৬তম সিজ়নে পা দিয়েছে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’। ২৫ বছর ধরে চলা এই অনুষ্ঠানে বেশির ভাগ সময়ে সঞ্চালকের আসনে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন।
তাঁর সেই চিরপরিচিত ব্যারিটোন গলায় ‘দেবীয়োঁ অউর সজ্জনোঁ’ শোনার জন্য আজও ততটাই উন্মাদনা রয়ে গিয়েছে। ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র প্রায় সমার্থক শব্দ হিসাবে উচ্চারিত হয় অমিতাভ বচ্চনের নাম।
১৬ সিজ়নের মধ্যে ১৫ সিজ়নে সঞ্চালকের আসনে থেকেছেন অমিতাভ। কেবল ‘কেবিসি’র তৃতীয় সিজ়নের সঞ্চালক ছিলেন শাহরুখ খান।
নামের সঙ্গে কোটি টাকার সম্পর্ক থাকলেও বর্তমানে টাকার অঙ্ক অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। ২০০০ সালে শুরু হওয়া প্রথম পর্বে সর্বাধিক পুরস্কারের পরিমাণ ছিল ১ কোটি টাকা। প্রতি বছরই বেড়েছে টাকার পরিমাণ।
এই অনুষ্ঠানের প্রথম কোটিপতি হয়েছিলেন হর্ষবর্ধন নওয়াথে। ২৭ বছর বয়সি হর্ষবর্ধনের কোটি টাকা জেতার আনন্দে মেতে উঠেছিল গোটা দেশ। এক কোটি টাকা জিতে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন তরুণ এই প্রতিযোগী।
সম্প্রতি ‘কেবিসি’র ২৫ বছর উপলক্ষে অনুষ্ঠানের সম্প্রচারক চ্যানেলের পক্ষ থেকে একটি ভিডিয়ো তৈরি করা হয়েছে। সেই ভিডিয়োয় প্রত্যাবর্তন করেছেন প্রথম বিজয়ী হর্ষবর্ধন। ২৫ বছর আগের স্মৃতিতে ডুব দিয়ে তিনি তুলে এনেছেন নানা অভিজ্ঞতা। সেই স্মৃতিচারণা দর্শকের সামনে প্রকাশ করেছেন ভিডিয়োর মাধ্যমে।
পরনে কালো রঙের স্যুট, চশমা। মাথার চুলে ধরেছে ধূসর ছোপ। ভিডিয়োয় হর্ষবর্ধনকে দেখে কিছুটা অবাক দর্শকরাও। ২৫ বছর আগের সেই টগবগে যুবক আজ ৫২ প্রৌঢ়। একটি নামী সংস্থার সিইও তিনি।
গত বছরের ডিসেম্বরে হর্ষবর্ধন জেএসডব্লিউ গ্রুপের সামাজিক উন্নয়ন শাখা, জেএসডব্লিউ ফাউন্ডেশনের সিইও নির্বাচিত হন। ভারত জুড়ে সংস্থার বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগের তত্ত্বাবধান ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রয়েছে হর্ষবর্ধনের। এর আগে তিনি ২০২৩ সালের মে মাস থেকে জেএসডব্লিউ ফাউন্ডেশনের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) পদের দায়িত্ব সামলেছেন।
এর আগেও তিনি ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের বিভিন্ন সংস্থার সামাজিক উন্নয়ন শাখার পরিচালকের দায়িত্ব সামলেছেন। ওয়েলস্পন গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, এক সময় মাহিন্দ্রার গোষ্ঠীতেও চাকরি করেছিলেন তিনি।
কেবিসির প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সময়ে তিনি সিভিল সার্ভিসের পাঠ নিচ্ছিলেন। যখন কেবিসি সম্প্রচারিত হয় তখন তিনি দিল্লিতে আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। জনপ্রিয় শো জয় তাঁকে রাতারাতি তারকার খ্যাতি এনে দেয়। হর্ষবর্ধনের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে।
বর্তমানে হর্ষবর্ধন মুম্বইয়ের বাসিন্দা। স্ত্রী ও দুই পুত্রকে নিয়ে সুখী পরিবার। তাঁর স্ত্রী সারিকা ইনস্টাগ্রামে বেশ সক্রিয়। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, কোটিপতি হওয়ার পর তিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর পড়াশোনা সমাপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন।
এর আগে একটি সাক্ষাৎকারে হর্ষবর্ধনে জানিয়েছিলেন, কোটি টাকার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পর তাঁর প্রতি শোয়ের সঞ্চালক অমিতাভ বচ্চনের একটি বিশেষ ব্যবহার লক্ষ করার পরেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তিনিই হতে চলেছেন কেবিসির প্রথম কোটিপতি।
পর্দায় বিজ্ঞাপন চলার ফাঁকে ব্যক্তিগত রূপটান শিল্পীকে ডেকে অমিতাভ নির্দেশ দিয়েছিলেন হর্ষবর্ধনকে তিনি যেন একটু মেকআপ করিয়ে দেন। অর্থাৎ, টিভির পর্দায় তাঁকে যেন দেখতে আরও ভাল লাগে। এই কথা শুনেই হর্ষবর্ধন বুঝে গিয়েছিলেন, সাজিয়ে-গুছিয়ে তাঁকে ক্যমেরার সামনে নিয়ে আসার কারণ।
২৫ বছর পরে কেবিসির সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে উচ্ছ্বাস গোপন করেননি প্রথম কোটিপতি। তিনি জানান, এই ফিরে আসা দেশে ফেরার অনুভূতি জাগিয়েছে। ২৫ বছর এক দীর্ঘ সময়। কেবিসি তাঁকে বহু স্বীকৃতি দিয়েছে। অর্থ, প্রশংসা এবং মানুষের কাছ থেকে অকুণ্ঠ ভালবাসার পাত্র হয়েছেন এই প্রতিযোগিতার দৌলতেই, জানিয়েছেন হর্ষবর্ধন।