Duttapukur Blast

বাজির বাড়িতে গেরস্থালিও ছিল, ধ্বংসস্তূপে অতীতের সাক্ষী ভাতের হাঁড়ি, খাতা, বই, স্কুলের জুতো

বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। নিমেষে ধুলোয় মিশে গেল সামসুল আলির বাড়ি। একটা ভাঙা সিঁড়ি আর স্টিলের রেলিং ছাড়া আস্ত নেই কিছু। পাশে বাড়িগুলিতেও পড়ল অভিঘাত।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
দত্তপুকুর শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৩ ২১:১৯
Share:
০১ ১৯

সকাল প্রায় সাড়ে ১০টা। বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে দত্তপুকুরের মোচপোল। ঘটনার আচম্বিতে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয়রা। সম্বিৎ ফিরতেই বুঝতে পারেন, বিস্ফোরণের উৎসস্থল কোথায়? বেআইনি বাজি কারখানায় পৌঁছে দেখেন, সবটাই অতীত। ধুলোয় মিশেছে চার দেওয়াল, ছাদ। কোনও মতে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভাঙা সিঁড়ির স্টিলের রেলিংটা।

০২ ১৯

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মোচপোলের বাসিন্দা সামসুল আলির বাড়িতেই চলত বাজি তৈরির কারখানা। স্থানীয়দের অভিযোগ, বেআইনি ভাবে চলত বাজির কারবার। পুলিশ, প্রশাসনকে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। কারখানার মালিক কেরামত আলি। স্থানীয়দের দাবি, তিনি থাকতেন পাশের গ্রামে।

Advertisement
০৩ ১৯

সামসুলের ভাইপো মফিজুল ইসলাম জানিয়েছে, তাঁর কাকার বাড়ি লাগোয়া বাগানে দিনের বেলা তৈরি হত বাজি। আর দু’টি ঘরে চলতে প্যাকেজিংয়ের কাজ। সেই দুই ঘরই এখন ধুলোয় মিশেছে। মৃত্যু হয়েছে সামসুলের।

০৪ ১৯

বিস্ফোরণের ধাক্কায় সামসুলের বাড়ির একটি দেওয়ালও অবশিষ্ট নেই। ভেঙে পড়েছে ছাদ। তুবড়ে গিয়েছে স্টিলের আলমারি। তার দরজা উধাও।

০৫ ১৯

ওই ধ্বংসস্তূপের থেকেই উঁকি দিচ্ছে ফ্রিজের দরজা। বাকি অংশের হদিস মেলেনি। মফিজুল জানিয়েছেন, কাকা সামসুলের অবস্থা একেবারেই ভাল ছিল না। বাসের কন্ডাক্টর ছিলেন। দিনমজুরি করতেন। এই বাজির কারখানা ভাড়া দিয়েই চলত সংসার। কষ্ট করে কিনেছিলেন ফ্রিজ, কিছু আসবাব। কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।

০৬ ১৯

বিস্ফোরণের তীব্রতায় বেঁকে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে বাড়ির জানলা, দরজার গ্রিল। কোনওটি আবার ভেঙে টুকরো হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। যে ফ্রেমের গায়ে আটকে ছিল গ্রিলগুলি, তাদের আর চিহ্ন নেই। মাটিতে শুয়ে রয়েছে কালো কোলাপসিব‌্ল গেট।

০৭ ১৯

ইটের চাইয়ের মাঝেই উঁকি দিচ্ছে পায়াসমেত খাটের অংশ। বাকি অংশ চাপা পড়ে রয়েছে ধ্বংসস্তূপে। ছড়িয়ে রয়েছে ভাঙা প্লাস্টিকের চেয়ার, বাসনপত্র, হাড়ি, কড়া।

০৮ ১৯

এদিক ওদিক ছড়িয়ে থাকা গ্রিলের পাশেই পড়ে রয়েছে খোলা বই। বইয়ের কিছু পাতা ছিড়ে গিয়েছে। সে সব কার বই, জানা যায়নি।

০৯ ১৯

সামসুলের বাড়ির ভগ্নস্তূপের মধ্যেই জ্বল জ্বল করছে লাল, রুপোলি, সোনালি রাঙতায় মোড়া বাজি। কয়েকশো তাজা বাজি পড়ে রয়েছে ধ্বংসস্তূপে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, ওগুলো ‘আলুবোমা’, যা বেআইনি ভাবে তৈরি করা হত সামসুলের বাড়িতে। ছড়িয়ে রয়েছে বাজির প্যাকেটও।

১০ ১৯

দলা পাকানো জামাকাপড়ের মাঝেই এককালের বাজি কারখানায় পড়ে রয়েছে বাচ্চার স্কুলের জুতো। জানা গিয়েছে, আহতদের মধ্যে রয়েছে আট বছরের এক বালক। এ জুতো তার কি না, জানা যায়নি।

১১ ১৯

বিস্ফোরণের আঁচ পড়েছে সামসুলের পাশের বাড়িতেও। উড়ে গিয়েছে দেওয়াল। টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে আসবাব। একটি ঘরে শুধু দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা আলনা। তাতে এখনও ঝোলানো রয়েছে জামা-কাপড়।

১২ ১৯

ঘরের ছাদে কোনও মতে আটকে রয়েছে সিলিং ফ্যানের রড। ব্লেডগুলি উড়ে গিয়েছে বিস্ফোরণের ধাক্কায়। টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে দেওয়ালের গায়ে লাগানো রেন পাইপ।

১৩ ১৯

ওই বাড়ির বাসিন্দা এক মহিলাও গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

১৪ ১৯

এখনও হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে আট জনের। তাঁরা হলেন, ২০ বছরের রেশমা খাতুন, ১৭ বছরের মাসুমা খাতুন, ৪০ বছরের আশুরা বিবি, সারিনা বিবি, ১৪ বছরের সানাউল আলি, ৫০ বছরের শমসের আলি, ৫২ বছরের সাইদুল আলি। আহতদের মধ্যে একটি ৮ বছরের বালকও রয়েছে।

১৫ ১৯

বিস্ফোরণের পরেই আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ছ’জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। একজনের মৃত্যু হয় হাসপাতালে।

১৬ ১৯

মৃতদের মধ্যে রয়েছেন সামসুল, যাঁর বাড়িতে ছিল কারখানা। মারা গিয়েছেন কারখানার মালিক কেরামত আলির ছেলে রবিউল আলি। কলেজপড়ুয়া রবিউল বাবার কারখানায় কাজ করতেন। জাহিদ আলি নামে মুর্শিদাবাদের এক ব্যক্তি ও তাঁর ছেলেরও মৃত্যু হয়েছে।

১৭ ১৯

রবিবার বিস্ফোরণের ঘটনার পর এলাকায় গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী রথীন ঘোষ। তিনি দাবি করেছিলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার নেপথ্যে স্থানীয় এক আইএসএফ নেতা রয়েছেন। তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে লোক এনে বাজি তৈরি করাচ্ছিলেন।

১৮ ১৯

পাল্টা আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে কেরামতের নাম তোলেন নওশাদ। তিনি দাবি করেন, কেরামতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।

১৯ ১৯

ঘটনাস্থলে গিয়েছে সিআইডির বম্ব স্কোয়াড, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে। বিস্ফোরণস্থলে পৌঁছেছে ফরেনসিক দলও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement