একটি খুন। হাতে থাকা ট্যাটু। ২০ মিনিটের একটি ভিডিয়ো। সেই খুনের ঘটনাই কি প্রকাশ্যে এনে দিচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি! কী ভাবে?
খুন হওয়া যুবকের নাম শ্রীনিবাসুলু ওরফে রায়ডু। জনসেনা পার্টির নেতা বিনুথা কোটার প্রাক্তন গাড়িচালক এবং ব্যক্তিগত সহকারী তিনি। ৮ জুলাই রায়ডুর দেহ উদ্ধার হয় চেন্নাইয়ের কুম নদী থেকে।
এর পরেই শুরু হয় তদন্ত। ময়নাতদন্তে উঠে আসে, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে রায়ডুকে। খুনের আগে মারধরও করা হয়। রায়ডুর হাতে থাকা ট্যাটু দেখে তদন্তকারীদের মনে সন্দেহ জাগে।
এর পরেই তদন্ত চালিয়ে রায়ডুর প্রাক্তন নিয়োগকর্তা বিনুথা এবং তাঁর স্বামী চন্দ্রবাবু-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে চেন্নাই পুলিশ।
পুলিশের মনে হয়েছিল, বিনুথা সম্পর্কে সংবেদনশীল, ব্যক্তিগত এবং গোপন রাজনৈতিক তথ্য ফাঁস করেছিলেন রায়ডু। সে কারণেই প্রতিহিংসার বশে খুন হতে হয়েছে তাঁকে।
কিন্তু তার পরেই খেলা ঘুরে যায়। রায়ডু খুনের আগে রেকর্ড করা তাঁর একটি ভিডিয়ো সম্প্রতি পুলিশের হাতে এসেছে। আর ২০ মিনিটের সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরেই খুনের ঘটনা এখন রাজনৈতিক বিতর্কে পরিণত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিডিয়োটিতে তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) নেতা তথা অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকালাহস্তি বিধানসভার বিধায়ক বোজ্জালা সুধীর রেড্ডির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ করেছেন রায়ডু। যদিও ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।
ভিডিয়োয় রায়ডু দাবি করেছেন, বিনুথা ও তাঁর স্বামীর ব্যক্তিগত এবং আপত্তিকর ভিডিয়ো সংগ্রহ করলে অথবা দম্পতির উপর হামলা চালালে সুধীরের সহযোগীরা তাঁকে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সেই ভিডিয়োকে কেন্দ্র করেই হইচই পড়ে গিয়েছে তামিলনাড়ু জুড়ে। গভীর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জল্পনা তৈরি হয়েছে। অনেকে আবার মনে করছেন, রায়ডুর হত্যাকাণ্ড আসলে বিশাল এক ষড়যন্ত্রের অংশ।
তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই ভিডিয়োটির সত্যতা পরীক্ষা করতে তৎপর হয়েছেন। তবে টিডিপি বিধায়ক সুধীর তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘আমরা কী ভাবে জানব যে এটি কৃত্রিম মেধা দিয়ে তৈরি ভিডিয়ো নয়? এমনও হতে পারে যে, রায়ডুকে খুনের আগে এই ভিডিয়ো রেকর্ড করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল।’’
তিরুমালা মন্দির পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের সুধীর আরও বলেন, ‘‘ঈশ্বর এবং আমার সন্তানদের নামে শপথ করছি, রায়ডুর হত্যার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই আমার। ভগবানের সামনে সত্যি কথা বলতে এসেছি। ভিত্তিহীন রাজনৈতিক অভিযোগ এবং আমার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ প্রচার চালানো হচ্ছে।’’
সুধীর এ-ও ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিনুথা এবং তাঁর সহযোগীদের গ্রেফতারির কয়েক মাস পরে ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেন এত দিন সেটি প্রকাশ্যে আনা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বিধায়কের দাবি, রায়ডুর হত্যাকাণ্ডের জন্য যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে রাজি তিনি। তবে তাঁকে নিয়ে যে রাজনৈতিক ‘কাদা ছোড়াছুড়ি’ হচ্ছে তা দুঃখজনক বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি।
অন্য দিকে, শর্তসাপেক্ষে জামিন পাওয়া বিনুথাও একটি ভিডিয়ো বিবৃতি প্রকাশ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। পুরো ঘটনাটিকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের দ্বারা পরিচালিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করেছেন জনসেনার নেত্রী।
বিনুথার যুক্তি, আদালত তাঁকে জামিন দিয়েছে কারণ রায়ডুর হত্যায় তাঁর জড়িত থাকার কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদি পাওয়া যেত, তা হলে আদালত তাঁকে ছাড়ত না।
অভিনেতা তথা রাজনীতিবিদ পবন কল্যাণের পার্টি জনসেনা এবং চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল টিডিপি অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনীতিতে জোটসঙ্গী। সেই দু’দলেরই দুই নেতার একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি দলীয় নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।