Bank Robbery

কোহলিদের জন্য পিছিয়ে যায় পরিকল্পনা, ব্যর্থ হয় জাফরান, হলুদের ‘টোটকা’ও! দেশের অন্যতম বড় ব্যাঙ্ক ডাকাতির কিনারা কী ভাবে?

গত ২৫ মে বিজয়পুরা জেলার মানাগুলি শহরে অবস্থিত কানাড়া ব্যাঙ্কে ডাকাতির অভিযোগ ওঠে। হিসাব করে দেখা যায়, মোট ৫৮.৯৭ কেজি সোনার অলঙ্কার চুরি গিয়েছে ব্যাঙ্ক থেকে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৫ ১২:৩৯
Share:
০১ ২০

ব্যাঙ্ক থেকে চুরি গিয়েছিল ৫৩ কোটি টাকার গয়না। কর্নাটক পুলিশ শুক্রবার ঘোষণা করেছে, দেশের অন্যতম বড় সেই ব্যাঙ্ক ডাকাতির কিনারা করে ফেলেছে তারা। গ্রেফতার করা হয়েছে তিন জনকে, যাঁদের মধ্যে এক জন খোদ সেই ব্যাঙ্কেরই প্রাক্তন ম্যানেজার। সম্প্রতি অন্য শাখায় বদলি হয়েছিলেন তিনি।

০২ ২০

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানাড়া ব্যাঙ্কের ৪১ বছর বয়সি ওই ম্যানেজারের নাম বিজয়কুমার মিরিয়ালা। দুই সঙ্গী চন্দ্রশেখর নেরেলা এবং সুনীল নরসিমহালু মোকাকে সঙ্গে নিয়ে কর্নাটকের মানাগুলি শহরের শাখা থেকে ৫৩ কোটি টাকার গয়না চুরি করেছিলেন।

Advertisement
০৩ ২০

খবর, গ্রেফতারির পর জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন ডাকাতির কথা স্বীকার করেছেন বিজয়কুমার। আর অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছ থেকে সেই নেপথ্যকাহিনি শুনে কার্যত অবাক হয়ে গিয়েছেন পুলিশকর্তারা।

০৪ ২০

গত ২৫ মে বিজয়পুরা জেলার মানাগুলি শহরে অবস্থিত কানাড়া ব্যাঙ্কে ডাকাতির অভিযোগ ওঠে। হিসাব করে দেখা যায়, মোট ৫৮.৯৭ কেজি সোনার অলঙ্কার চুরি গিয়েছে ব্যাঙ্ক থেকে।

০৫ ২০

বিজয়পুরা জেলার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুলিশ সুপার লক্ষ্মণ নিম্বার্গি জানিয়েছেন, অভিযুক্তেরা তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘তদন্তের মোড় ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো বেশ কয়েকটি পরিস্থিতি তৈরি করা সত্ত্বেও অভিযুক্তেরা ধরা পড়েছেন।’’

০৬ ২০

কানাড়া ব্যাঙ্কের মানাগুলি শহর শাখায় ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত বিজয়কুমারকে ৯ মে বিজয়পুরা জেলার রোনিহাল শাখায় বদলি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বদলির পরই পুরনো শাখায় চুরির পরিকল্পনা করেন তিনি।

০৭ ২০

বিজয়পুরা জেলার অন্য এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, তদন্ত শুরু হওয়ার পরেই তদন্তকারীদের মনে হয়েছিল যে, গোটা ঘটনার সঙ্গে ব্যাঙ্কেরই কোনও কর্মী জড়িত রয়েছেন।

০৮ ২০

ওই পুলিশকর্তা বলেন, “আমরা জানতে পেরেছিলাম যে এক শাখা থেকে অন্য শাখায় বদলি হওয়ার আগে মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ সাঙ্গোপাঙ্গদের হাতে ব্যাঙ্কের চাবি তুলে দিয়েছিলেন বিজয়কুমার। এর পর ব্যাঙ্কের নকল চাবি তৈরি করে ডাকাতির প্রস্তুতি নিতে থাকেন তাঁরা। ডাকাতির সময় নিয়েও সাবধানি হয়ে প়ড়েন।’’

০৯ ২০

তিনি আরও বলেন, ‘‘পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিজয়কুমার তাঁর বদলি পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন, যাতে তাঁকে সন্দেহ না করা হয় তার জন্যই ওই ব্যবস্থা।’’

১০ ২০

পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতির আগে প্রায় এক মাস ধরে ব্যাঙ্কের চারপাশ এবং সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় কোন কোন জায়গা পড়ছে তা ভাল করে ঘুরে দেখেন অভিযুক্তেরা। অন্য রাজ্যে কী ভাবে ব্যাঙ্ক ডাকাতি হচ্ছে তা-ও ‘কেস স্টাডি’ হিসাবে চর্চা করতে শুরু করেন।

১১ ২০

জানা গিয়েছে, ডাকাতির পর পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অভিযুক্তেরা ব্যাঙ্কের ভিতরে জাফরান, হলুদ এবং ব্লোটর্চ রেখে এসেছিলেন। তাঁরা মনে করেছিলেন ওই সব জিনিসপত্র দেখে পুলিশ ধরে নেবে যে, ডাকাতেরা তামিলনাড়ু বা কেরল থেকে এসেছিলেন। কারণ, কখনও কখনও কুসংস্কারবশত অনেক ডাকাত ওই সব জিনিস ডাকাতির জায়গায় ফেলে আসে।

১২ ২০

পুলিশের মতে, বিজয়কুমারের নেতৃত্বে ওই ডাকাতদল প্রাথমিক ভাবে ঠিক করে যে ২৩ মে ডাকাতি করা হবে। অনেক ভেবে নাকি সেই দিন ঠিক করা হয়েছিল। কারণ, ওই দিন চলতি বছরের আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ম্যাচ ছিল।

১৩ ২০

বিজয়কুমারের মনে হয়েছিল, বেঙ্গালুরু সেই ম্যাচ জিতে যাবে। উদ্‌যাপন শুরু হবে সারা রাজ্য জুড়ে। ফলে কারও নজর তাঁদের দিকে থাকবে না। বিরাট কোহলিদের নিয়ে মাতামাতির মাঝে অনায়াসে ডাকাতি করে নজরের আড়ালে চলে যাবেন তাঁরা।

১৪ ২০

কিন্তু তাঁদের আশা পূরণ হয়নি। আরসিবি সেই ম্যাচ হেরে যায়। ফলে উদ্‌যাপনও হয়নি। তাই সমস্ত প্রস্তুতি থাকলেও অভিযান এক দিনের জন্য স্থগিত করেন তাঁরা। তেমনটাই জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। ঠিক করেন ২৩ মে-র বদলে ডাকাতি হবে ২৫ মে।

১৫ ২০

অবশেষে ২৫ মে ডাকাতি করতে যান বিজয়কুমারের সঙ্গীরা। পুলিশ জানিয়েছে, সিনেমা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ডাকাতির পর অভিযুক্তেরা তাঁদের গাড়ি একটি ট্রাকে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। পুলিশ যাতে গাড়ির চাকার দাগ খুঁজে না পায়, তার জন্যই নাকি ওই বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।

১৬ ২০

ডাকাতির আগে অভিযুক্তেরা ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে পালান বলে অভিযোগ। একই সঙ্গে সরিয়ে ফেলা হয় ব্যাঙ্কের নেটওয়ার্ক ভিডিয়ো রেকর্ডার (যেখানে সব ভিডিয়ো রেকর্ড থাকে)। কেটে দেওয়া হয় রাস্তার ধারের আলোর তারও।

১৭ ২০

পরদিন ব্যাঙ্কের কর্মীরা কাজে এসে পুলিশে খবর দেন। শুরু হয় ডাকাতির তদন্ত। অভিযুক্তদের ধরার জন্য আটটি দল গঠন করা হয়েছিল। ডাকাতির কয়েক ঘণ্টা আগে এবং পরে একটি গাড়ির চলাচল দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। তদন্তকারীরা দেখেন, গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন বিজয়কুমারের নামে নিবন্ধিত।

১৮ ২০

খোঁজ চালিয়ে বিজয়কুমারকে গ্রেফতার করা হয়। কড়া পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের কথা স্বীকার করেন তিনি। তাঁর অন্য দুই সঙ্গীকেও গ্রেফতার করে কর্নাটক পুলিশ।

১৯ ২০

এর পরে অপরাধে ব্যবহৃত দু’টি গাড়ি এবং ১০.৫ কেজি সোনার গয়না উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া সেই গয়নার আনুমানিক মূল্য ১০.৭৫ কোটি টাকা। বাকি গয়না গলিয়ে সোনার বার তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

২০ ২০

পুলিশ জানিয়েছে, চুরি করা জিনিসপত্র নিয়ে সহজে যাতায়াত করার জন্য সোনার গয়নাগুলি গলানো হয়েছিল। পুলিশের সন্দেহ, ডাকাতির ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত ছিলেন। তাই তদন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement