যত সময় গড়াচ্ছে, ততই আরও বেশি করে ডিজিটাল পেমেন্টের দিকে ঝুঁকছে আমজনতা। বাড়ছে ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস বা ইউপিআইয়ের লেনদেন। গৃহস্থালির পণ্য কেনা থেকে শুরু করে খাবার বা ওষুধ, এমনকি বিল দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেকেই এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করছেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রেই মানুষ এখন ইউপিআই লেনদেনে নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। প্রতি দিন ইউপিআইয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়। একসঙ্গে অগণিত মানুষ ইউপিআই লেনদেন করেন।
ভারত ছাড়াও এখন বিশ্বের একাধিক দেশে চালু হয়ে গিয়েছে ইউপিআই পরিষেবা। কেন্দ্রীয় সরকারই এই সুবিধা করে দিয়েছে।
ফ্রান্স, ভুটান, নেপাল, ওমান, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, কম্বোডিয়া, জাপান -সহ আরও নানা দেশে পাওয়া যাবে ইউপিআই পরিষেবা।
ইউপিআইয়ের মাধ্যমে লেনদেন করা সহজ। সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই এই পরিষেবা পান সাধারণ মানুষ। তবুও কী ভাবে গুগ্ল পে এবং ফোনপে-র মতো সংস্থা প্রতি বছর ইউপিআইয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে?
গুগ্ল পে এবং ফোনপে গত বছর একসঙ্গে ৫,০৬৫ কোটি টাকারও বেশি আয় করেছে ইউপিআই থেকে। কোনও পণ্য বিক্রি না করেই কী ভাবে এত উপার্জন করছে সংস্থাগুলি?
গুগ্ল পে বা ফোনপে হল তৃতীয় পক্ষের ইউপিআই অ্যাপ। এদের অনন্য ব্যবসায়িক মডেলের কারণেই ইউপিআইয়ের মাধ্যমে প্রচুর টাকা আয় করে সংস্থাগুলি। দেখে নেওয়া যাক কী ভাবে তাদের ব্যবসায়িক মডেল কাজ করে।
গুগ্ল পে বা ফোনপের আয়ের একটি বড় অংশ আসে ব্যবসায়ীদের থেকে। ছোট-বড় প্রায় সব দোকানেই অ্যাপগুলির স্পিকার রাখা থাকে। গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকলেই ওই স্পিকারে যান্ত্রিক আওয়াজ ভেসে ওঠে।
নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি টাকা ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে ঢুকলেই সেখান থেকে মুনাফা কামায় অ্যাপ সংস্থাগুলি। একই সঙ্গে প্রতিটি স্পিকার ১০০ টাকার মাসিক ভাড়ায় সরবরাহ করা হয়।
এই পরিষেবা ব্যবহার করে ৩০ লক্ষেরও বেশি দোকান থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকা আয় করে সংস্থাগুলি। বার্ষিক হিসাবে এই পরিমাণ ৩৬০ কোটি টাকা।
উপার্জনের আর একটি প্রধান উৎস ‘স্ক্র্যাচ কার্ড’। টাকা লেনদেনের পর গ্রাহকদের কুপন বা ‘স্ক্র্যাচ কার্ড’ সরবরাহ করে সংস্থাগুলি। সেগুলি থেকে গ্রাহকেরা যেমন টাকা (ক্যাশব্যাক) পান, তেমনি বিভিন্ন সংস্থার পণ্যের উপর ছাড়ের কুপনও পান।
তবে সেগুলি থেকে গ্রাহকেরা উপকৃত হন বা না হন, গুগ্ল পে বা ফোনপের মতো সংস্থাগুলি প্রচুর টাকা আয় করে। কারণ গ্রাহকের দেওয়া ওই কুপনগুলি সংস্থার কাছে আসলে বিজ্ঞাপন। নিজেদের অ্যাপে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যের কুপন পৌঁছে দেওয়ার বদলে ব্র্যান্ডগুলির থেকে প্রচুর টাকা নেয় গুগ্ল পে, ফোনপে।
ব্র্যান্ডগুলি কুপনের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যায় এবং পরিবর্তে গুগ্ল পে এবং ফোনপের মতো অ্যাপ সংস্থাগুলিকে অর্থ প্রদান করে।
গুগ্ল পে এবং ফোনপের মতো অ্যাপ সংস্থাগুলি ইউপিআইয়ের নির্ভরযোগ্যতাকে একটি ‘সফটঅয়্যার-অ্যাজ়-আ-সার্ভিস (এসএএএস) স্তরে রূপান্তরিত করেছে। জিএসটি সহায়তা, ‘ইনভয়েস জেনারেশন’ এবং ছোট ব্যবসার জন্য ক্ষুদ্র ঋণ পরিষেবাও প্রদান করে সংস্থাগুলি।
ইউপিআই কেবল প্রবেশদ্বার হলেও সফ্টঅয়্যার এবং আর্থিক পরিষেবাগুলির মধ্যেই আসল ব্যবসা নিহিত থাকে। এবং তার মাধ্যমেই আয় করে গুগ্ল পে এবং ফোনপের মতো ইউপিআই অ্যাপগুলি।