আপনি ভাবছেন ক্রেডিট কার্ড নেবেন, অথচ সাহস হয়ে উঠছে না। ভাবছেন, ঋণের বোঝা না জাঁকিয়ে বসে! তা হলে এ বার সেই সাহস জোগান মণীশ ধমেজার থেকে।
মণীশ একটা নয়, দুটো নয়, একসঙ্গে ১৬৩৮টি সক্রিয় ক্রেডিট কার্ডের মালিক। যে কারণে বিশ্বরেকর্ডে নামও যুক্ত হয়েছে তাঁর।
) কী ভাবে এত ক্রেডিট কার্ড সামলাতে পারেন তা জানার আগে দেখে নেওয়া যাক মণীশ কী করেন! কী এমন জাদুমন্ত্র রয়েছে মণীশের কাছে, যেটা বিশ্বের আর একটি মানুষের কাছেও নেই!
হায়দরাবাদে থাকেন মণীশ। সেখানেরই এক বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত তিনি। চিফ হোলসেল ব্যাঙ্কিং অফিসার পদে কাজ করেন।
প্রথমে কানপুরের ছত্রপতি শাহুজি মহারাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অফ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে পড়াশোনা। এর পর মাস্টার অফ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে ভর্তি হন লখনউয়ের ইন্টিগ্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেই শেষ নয়, এমসিএ (মাস্টার অফ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন) পাশের পর ইগনু থেকে সোশ্যাল ওয়ার্ক নিয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন মণীশ।
এখনও চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করছেন। ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজ়নেস থেকে এক্জ়িকিউটিভ ফেলো প্রোগ্রাম ইন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ছেন। সুতরাং পড়াশোনার প্রতি যে মণীশের বিশেষ ঝোঁক রয়েছে তা শিক্ষাগত জীবনপঞ্জি দেখে বোঝাই যায়।
মণীশের একটাই নেশা। অর্থনৈতিক যোগ-বিয়োগ ঘেঁটে দেখা। ক্রেডিট কার্ডও সামলান সেই যোগ-বিয়োগ করেই। যে কারণে ১৬৩৮টি ক্রেডিট কার্ডের হিসাব যেন ঠোঁটস্থ মণীশের। কোন খাতে কত খরচ করছেন সব হিসাব রাখেন তিনি।
‘সক্রিয় ক্রেডিট কার্ডের বৃহত্তম সংগ্রহ’-এর জন্য ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’-এ নাম উঠেছে মণীশের। সেখানকার তথ্য অনুযায়ী মণীশ বলেছেন, ‘‘আমার জীবন ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়। ক্রেডিট কার্ড আমার কাছে ভালবাসা।’’
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে অনেক ধরনের ‘অফার’ পাওয়া যায় তা কমবেশি সকলের জানা রয়েছে। সে সব অফার মণীশের বেশ পছন্দের। তিনি জানিয়েছেন, বিনামূল্যে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ, অনেক কম টাকায় খাবার খাওয়ার সুযোগ, বিনামূল্যে সিনেমার টিকিট-সহ আরও বিভিন্ন ধরনের ক্রেডিট কার্ড অফার তিনি বেশ উপভোগ করেন।
২০০৫ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার শুরু করেন। প্রথম ব্যবহার থেকেই বেশ মজাদার অনুভূতি হয় তাঁর। ক্রেডিট কার্ডের নানান ‘অফার’ উপভোগ করতে শুরু করেন। এই ভাবে প্রথমে একটা, তার পর দুটো, সেখান থেকে ১০টা, এই করে করে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি ক্রেডিট কার্ড জমিয়ে ফেলেছেন মণীশ।
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ভারত সরকারের তরফে নোটবন্দি ঘোষণা করা হয়েছিল। রাতারাতি বাতিল হয়ে গিয়েছিল ৫০০ এবং হাজার টাকার নোট। সে সময় এটিএম এবং ব্যাঙ্কের বাইরে ছিল বিশাল লাইন।
নোটবন্দির সময় মানুষের নাজেহাল অবস্থার উদাহরণ দিয়ে মণীশ বলেছিলেন, ‘‘নোটবন্দির সময় আমি দেখেছি মানুষকে কতটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে আমার কোনও অসুবিধাই হয়নি। আমি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডিজিটাল খরচ করেছিলাম শুধু।’’
১৬৩৮টি ক্রেডিট কার্ড নিয়ে মণীশ করেনটা কী! ব্যবসাও করেন না তিনি, তা হলে কোথায় খরচ হয় এতগুলি ক্রেডিট কার্ড?
জানিয়ে রাখা ভাল, মণীশ এতগুলি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলেও তাঁর কিন্তু বাজারে কোনও ঋণ নেই। সব ক’টা কার্ডের বিল জমা দেন একদম সময় মেনে। তাঁর জন্য যদিও প্রচুর পড়াশোনাও করেন।
মণীশ একটা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন ঘুরতে যাওয়ার জন্য। অন্য আর একটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার হয় জামাকাপড় কিনতে। গাড়ির তেল ভরান অন্য আর একটি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। এই ভাবেই দেড় হাজারের বেশি ক্রেডিট কার্ড নানা রকম খাতে ব্যবহার করেন মণীশ।
একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিটি কার্ডের ‘বিলিং সাইকেল’, শর্তসাপেক্ষ নিয়মাবলি খুব ভাল করে খতিয়ে দেখেন তিনি। তার পরই সেই ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করেন। নিজের ক্রেডিট স্কোর বজায় রাখতেও বেশ সতর্ক থাকেন।
মণীশ এখন বিশ্ববাসীর কাছে ‘ক্রেডিট কার্ড কিং’। তিনি প্রমাণ করেছেন, সঠিক উপায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে তা কখনওই ঋণের বোঝা হয়ে ওঠে না। সতর্কতা, সঠিক কৌশল ব্যবহার করেও ক্রেডিট কার্ডকে নির্ভর করে দিন কাটানো যে সম্ভব তা মণীশকে দেখে শেখা যায়।