জীবনে চলার সময় অনেকেরই তাঁদের জীবনসঙ্গীর সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে দেখা হয়। সমাজমাধ্যম তো রয়েছেই, তবে কখনও বন্ধুদের মাধ্যমে বা বিয়েবাড়িতে হওয়া আলাপ থেকেও প্রেম পরিণতি পায়।
কিন্তু আইএএস অফিসার সঞ্জয় খত্রী এমন এক জন মহিলাকে বিয়ে করেছেন, যিনি তাঁর কাছে এসেছিলেন একটি বিষয় নিয়ে অভিযোগ জানাতে। পরে অভিযোগকারিণীকেই মনে ধরে তাঁর। শুনে সিনেমার গল্প মনে হলেও বাস্তবেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
সঞ্জয় ২০১০ ব্যাচের আইএএস অফিসার। ২০১৭ সালে বিজয়লক্ষ্মীকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু কী করে আলাপ হয় সঞ্জয় এবং বিজয়লক্ষ্মীর?
এই যুগলের প্রেম হয় উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে। সঞ্জয় তখন গাজিপুরের জেলাশাসক। তিনি জেলাশাসক থাকাকালীন একটি ‘জন সংবাদ’ (জনসাধারণের অভিযোগ শোনার কর্মসূচি)-এর আয়োজন করা হয়। সেখানেই একটি বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পৌঁছেছিলেন বিজয়লক্ষ্মী।
বিজয়লক্ষ্মীকে দেখেই চমকে যান সঞ্জয়। কারণ, এই মহিলাকে তো তিনি আগে থেকেই চিনতেন। কত বার কথা বলার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি।
আসলে দিল্লিতে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রশিক্ষণ একসঙ্গেই নিয়েছিলেন সঞ্জয় এবং বিজয়লক্ষ্মী। তবে বিশেষ কিছু কারণে দিল্লিতে তাঁদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেনি। তার পর একেবারে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে দেখা হয়।
সঞ্জয় পশ্চিম রাজস্থানের বাড়মেরের বাসিন্দা। পরিবারের সঙ্গে পাকাপাকি ভাবে জয়পুরে যাওয়ার আগে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন।
কলা নিয়ে স্নাতক হওয়ার পর রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন সঞ্জয়। পরে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে দিল্লি চলে যান।
অন্য দিকে, বিজয়লক্ষ্মী গাজিপুরেরই বাসিন্দা। লুডার্স কনভেন্ট ইন্টার কলেজে থেকে পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর আরও পড়াশোনা করতে তিনিও দিল্লি চলে যান।
দিল্লিতে একসঙ্গেই ইউপিএসসির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন সঞ্জয় এবং বিজয়লক্ষ্মী। মুখ চেনা হলেও দু’জনের সে ভাবে কথা হয়নি কোনও দিন।
তিন বার ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়েও ব্যর্থ হয়ে বিজয়লক্ষ্মী তাঁর শহরে ফিরে আসেন। তবে সঞ্জয় ইউপিএসসি উত্তীর্ণ হন। প্রশিক্ষণ শেষ করার পরে আইএএস অফিসার হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন।
২০১৭ সালে জেলাশাসক হয়ে গাজিপুর আসেন সঞ্জয়। বিজয়লক্ষ্মী যখন তাঁর কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেন, তখন তাঁরা একে অপরকে চিনতে পারেন। তবে প্রথমেই আবেগ প্রকাশ করেননি তাঁরা।
প্রথমে বিজয়লক্ষ্মীর অভিযোগ মন দিয়ে শোনেন সঞ্জয়। সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতিও দেন। এর পর ওই অভিযোগ নিয়ে আরও বেশ কয়েক বার বৈঠক হয় তাঁদের মধ্যে। ধীরে ধীরে একে অপরের বন্ধু হয়ে ওঠেন সঞ্জয়-বিজয়লক্ষ্মী।
খুব শীঘ্রই সঞ্জয় এবং বিজয়লক্ষ্মীর বন্ধুত্ব প্রেমে পরিণত হয়। বিয়ে করার সিদ্ধান্তও নেন তাঁরা। দুই পরিবারকেও রাজি করান। ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠান করে তাঁদের চার হাত এক হয়।
শুক্রবার প্রেম দিবস। ভ্যালেন্টাইন্স ডে মানেই ভালবাসার দিন, প্রেমে পড়ার দিন, প্রিয় মানুষটির সঙ্গে সময় কাটানোর দিন। আর তার ঠিক আগেই সমাজমাধ্যমে আবার ভাইরাল হল সঞ্জয়-বিজয়লক্ষ্মীর প্রেমকাহিনি।