Indus Water Issue

ভারতের হাতে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, এক চালে দীর্ণ পাকিস্তানে আরও সঙ্কট ডেকে আনতে পারে নয়াদিল্লি!

ভারতের হাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বরাবরই এক ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ মজুত ছিল। মানবিকতা এবং শান্তিরক্ষার খাতিরে কখনও দিল্লি তা প্রয়োগ করেনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩ ০৯:২০
Share:
০১ ২২

অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকছে পাকিস্তান। ভারতের এই পড়শি দেশটিকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ)। তার পর থেকেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।

০২ ২২

প্রবল অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পাকিস্তান কার্যত দেউলিয়া। টাকার অভাবে এ বছর হজের কোটা তুলে নিতে হয়েছে ইসলামাবাদকে। অর্থাৎ, পাকিস্তান এ বছর হজে কাউকে সরকারি ভাবে পাঠাতে পারেনি।

Advertisement
০৩ ২২

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশছোঁয়া। আটা, ময়দা বা সাধারণ দুধের প্যাকেট নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে দেখা গিয়েছে পাকিস্তানের অভুক্ত জনতাকে।

০৪ ২২

পাকিস্তানের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। এই সার্বিক সঙ্কটের পরিস্থিতিতে চিনের কাছে হাত পেতেছে ইসলামাবাদ। সম্প্রতি চিনের থেকে তারা প্রায় ৮১৯২ কোটি টাকা ঋণ হিসাবে নিয়েছে।

০৫ ২২

পাকিস্তানে এই অর্থনৈতিক সঙ্কটের আবহে তার ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ পড়শি ভারত এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করেনি। অথচ, পাকিস্তানকে বিপদে ফেলার জন্য এক ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ আছে ভারতের হাতে।

০৬ ২২

কী সেই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’? তার নাম জল। সিন্ধু নদ এবং তার শাখানদীগুলির জল নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বোঝাপড়া, বিতর্ক অনেক দিনের। এই জলবণ্টনের চুক্তিই আগামী দিনে দুই দেশের মধ্যে আরও বড় বিতর্ক ডেকে আনতে পারে।

০৭ ২২

সিন্ধু এবং তার শাখানদীগুলির জল কোন দেশে কেমন ভাবে বণ্টিত হবে, তা নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত হয় ‘সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি’।

০৮ ২২

তিব্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে সিন্ধু নদ কাশ্মীরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে। পাকিস্তানের মধ্য ভাগ দিয়ে সোজা দক্ষিণ দিকে নেমে গিয়েছে নদীটি। করাচির কাছে এই নদী আরব সাগরে মিশেছে।

০৯ ২২

অবিভক্ত ভারতে সিন্ধুর জল নিয়ে কোনও জটিলতা ছিল না। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার সময় সিন্ধু নদের জলের উপর ভারত এবং পাকিস্তানের দাবিদাওয়া, অধিকার জন্মায়। কোন দেশ এই জলের সুবিধা পাবে, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা এবং বিতর্ক হয়েছিল সে সময়।

১০ ২২

ব্রিটিশ আমলে দেশভাগের পর তৈরি হওয়া সীমানা অনুযায়ী সিন্ধু নদের উপরে তৈরি গুরুত্বপূর্ণ খাল, বাঁধগুলি ভারতের হাতে চলে আসে। ভারতের পঞ্জাবে জল নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় ‘হাতিয়ার’ রয়েছে।

১১ ২২

সিন্ধু চুক্তি অনুসারে, সিন্ধু উপত্যকার পূর্ব প্রান্তের নদীগুলির (রবি, বিয়াস, শতদ্রু) উপর ভারতের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই নদীগুলিতে চাইলেই ভারত বাঁধ তৈরি করতে পারে। এই নদীর জল ব্যবহারে ভারতকে বাধা দেওয়ার কেউ নেই।

১২ ২২

আবার, সিন্ধু উপত্যকার পশ্চিম প্রান্তের নদী অর্থাৎ, সিন্ধু, ঝিলম এবং চন্দ্রভাগার উপর পাকিস্তানের স্বাধীনতা রয়েছে। এই নদীগুলি থেকে ভারত অনুমতি সাপেক্ষে জল ব্যবহার করতে পারে।

১৩ ২২

১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে সিন্ধু উপত্যকার নদীগুলির ৮০ শতাংশ জল পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। ভারতের হাতে রয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ ব্যবহারযোগ্য জল।

১৪ ২২

সিন্ধু এবং তার শাখানদীগুলির জলের বণ্টন ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, চুক্তির সব শর্ত মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য ইন্দাস কমিশন তৈরি করা হয়েছিল। অতীতে এই ইস্যুতে একাধিক বার উত্তপ্ত হয়েছে দুই দেশের বাতাবরণ।

১৫ ২২

অভিযোগ, পাকিস্তান যে কোনও অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য এই সিন্ধুর জলবণ্টন প্রক্রিয়াকে দায়ী করে থাকে। অর্থাৎ, সে দেশে বন্যা হলে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জল ছাড়ার অভিযোগ তোলে। আবার খরা হলে পাকিস্তানের অভিযোগ, ভারত পর্যাপ্ত জল ছাড়েনি।

১৬ ২২

আসলে সিন্ধু চুক্তির মাধ্যমে ভারত যে ২০ শতাংশ জল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে, সেই বন্দোবস্ত পাকিস্তানের পছন্দ নয়। তারা চায়, ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাক ওই এলাকার কেবল ১৩ শতাংশ জল।

১৭ ২২

আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী, এই ধরনের নদীর জল বণ্টনের ক্ষেত্রে সাধারণত ভূপ্রকৃতিগত ভাবে যে দেশ অধিক উচ্চতায় থাকে, জলের উপর নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতেই থাকে। সেই হিসাব বলছে এ ক্ষেত্রে, ভারতের হাতেই সিন্ধু উপত্যকার জলের নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা।

১৮ ২২

কিন্তু ভারত জল আটকালে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ যে সঙ্কটের মুখোমুখি হবেন, তা কাম্য নয়। তাই মানবিকতার খাতিরে এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য ভারত সিন্ধুর জল প্রসঙ্গে বরাবর সমঝোতা করে এসেছে।

১৯ ২২

অনেকে বলেন, ভারত এই জল সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও চরম পদক্ষেপ করলে পাকিস্তানের ‘বন্ধু’ চিনও ভারতের সঙ্গে একই আচরণ করতে পারে। অর্থাৎ, চিনও আন্তর্জাতিক নদীর জল আটকে দিয়ে ভারতকে সমস্যায় ফেলতে পারে।

২০ ২২

তবে ভারতের পঞ্জাব প্রদেশে জলসঙ্কট দিন দিন বিশেষজ্ঞদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পঞ্জাবের ভূগর্ভস্থ জল ফুরিয়ে আসছে। অদূর ভবিষ্যতে পঞ্জাব মরুভূমির গ্রাসে চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা। সিন্ধুর জল ব্যবহার তাই ভারতের স্বার্থেই গুরুত্বপূর্ণ।

২১ ২২

ভারতে জল সমস্যা সমাধানের জন্য দিল্লি থেকে পাকিস্তানে একটি নোটিস পাঠানো হয়েছে। নোটিসের জবাব না মিললে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে ভারত। দেশের কৃষকদের তাতে উপকার হবে।

২২ ২২

ভারতের সমস্যার সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে ‘সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি’ নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের হাতে এই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ বরাবরই মজুত ছিল। তবে মানবিকতার কারণেই ভারত তা কখনও প্রয়োগ করেনি।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement