Fixed Deposit

মোটা অঙ্কের একটি স্থায়ী আমানত, না ছোট অঙ্কের অনেক লগ্নি, কিসে বেশি লাভ? বিনিয়োগের গোপন সূত্রই বা কী?

অনেক সময়েই মানুষ বুঝে উঠতে পারেন না, তাঁর জন্য কোনটা সঠিক। না জেনে অনেকেই ভুল প্রকল্প বেছে নিয়ে সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করে ফেলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:১৩
Share:
০১ ১৯

যত দিন যাচ্ছে, কমছে টাকার মূল্য। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। আমানতে সুদ কমেছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও কমতে পারে।

০২ ১৯

ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতিকে পরাস্ত করতে কেবল সঞ্চয়ই যথেষ্ট নয়। হাতে পুঁজি থাকলেই চোখ-কান বুজে লগ্নি করে ফেললে তা লাভের বদলে লোকসানে পর্যবসিত হতে পারে।

Advertisement
০৩ ১৯

সঞ্চয় কোথায় করবেন সেই বিষয়টাও মাথায় রাখা জরুরি। সারা জীবনের সঞ্চয় কোথায় রাখছেন তা নির্ধারণ করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। লগ্নির বাজারে প্রকল্প রয়েছে নানা ধরনের। এক একটি প্রকল্পের বিকল্পও একাধিক।

০৪ ১৯

ফলে অনেক সময়েই মানুষ বুঝে উঠতে পারেন না, তাঁর জন্য কোনটা সঠিক। না জেনেই ভুল প্রকল্পে সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করে ফেলেন। পরিকল্পনামাফিক সঞ্চয় তহবিল তৈরি করতে হবে নিজের মতো করে। বেতন যতই কম হোক, প্রথম থেকে নিয়মিত সঞ্চয় শুরুর অভ্যাস তৈরি করা জরুরি। বেসরকারির পাশাপাশি সরকারি সঞ্চয় প্রকল্পের সাহায্য নিয়ে সম্পদ বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে।

০৫ ১৯

পুঁজি বা সম্পদ বৃদ্ধির জন্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিত প্রকল্প, না কি অল্প ঝুঁকি থাকলেও চলবে? নিয়মিত আয় না কি বৃদ্ধি? ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ্য ও ইচ্ছা কতটা? এই সব প্রশ্নের উত্তর পেলে প্রকল্প বাছাই শুরু করা যায়।

০৬ ১৯

বাজারে এখন লগ্নি প্রকল্পের ছড়াছড়ি। সুরক্ষিত সরকারি প্রকল্প, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের জমা প্রকল্প, আস্থা রাখা যায় এমন বেসরকারি প্রকল্প, সম্ভাব্য উচ্চ আয় এবং সঙ্গে মাঝারি থেকে অতিরিক্ত ঝুঁকির প্রকল্প। এত প্রকল্পের ভিড়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে যান অনেকেই।

০৭ ১৯

বাজারের ট্রেন্ড বলছে, একটু বেশি লাভের আশায় মানুষ ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের প্রথাগত সঞ্চয়ের থেকে মুখ ঘুরিয়ে শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ডের দিকে ঝুঁকছেন। ধীরে ধীরে স্থায়ী আমানতে সুদের হার তলানিতে চলে যাওয়ায় বেশির ভাগই গ্রাহকই স্থায়ী আমানতে ততটা ভরসা রাখতে চাইছেন না।

০৮ ১৯

যাঁরা সুরক্ষার সঙ্গে কোনও মতেই আপস করতে চান না, আয় কম হলেও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত প্রকল্প পছন্দ করেন, তাঁরাই ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজ়িটের (এফডি) উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করে থাকেন। নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা খুঁজছেন এমন বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে বিশ্বস্ত পছন্দগুলির মধ্যে একটি হল স্থায়ী আমানত।

০৯ ১৯

ফিক্সড ডিপোজ়িট থেকে সর্বাধিক রিটার্ন পেতে কেবল বিনিয়োগ করাই যথেষ্ট নয়। সঠিক মেয়াদ এবং কৌশল নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাঙ্কের আমানত প্রকল্পের সবচেয়ে সুবিধা হল, ব্যাঙ্কে গেলেই চটজলদি আমানত বিনিয়োগ করে দেওয়া হয়। স্থায়ী আমানতের মতো অনেক প্রকল্প প্রয়োজনমতো ভাঙিয়েও নেওয়া যায়।

১০ ১৯

স্থায়ী আমানত বা এফডিতে (ফিক্সড ডিপোজ়িট) লগ্নি করলে বছরে সুনির্দিষ্ট হারে সুদ দিয়ে থাকে ব্যাঙ্ক বা ডাকঘর। তবুও বিনিয়োগ করার সময় সঞ্চয়কারীদের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করে। বিনিয়োগকারীদের মনের মধ্যে একটি সাধারণ দ্বন্দ্ব চলে। সমস্ত অর্থ একটি এফডিতে বিনিয়োগ করবেন না কি একাধিক এফডিতে ভাগ করবেন।

১১ ১৯

উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার কাছে ৭ লক্ষ টাকা থাকে, তা হলে সেই ৭ লক্ষ টাকা একটি স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করা উচিত, না কি ১ লক্ষ টাকার সাতটি আমানতে ভাগ করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত?

১২ ১৯

আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁরা বিনিয়োগের জটিলতায় জড়াতে চান না তাঁরা চাইলে সমস্ত অর্থ একটি মাত্র ফিক্সড ডিপোজ়িটে বিনিয়োগ করে নিতেই পারেন। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, যদি সুদের হার একই থাকে, তা হলে সুদ-সহ চূড়ান্ত মেয়াদপূর্তির পরিমাণ উভয় ক্ষেত্রে একই থাকবে।

১৩ ১৯

একটি তহবিলে তাঁরাই বিনিয়োগ করতে পারেন যাঁরা নির্ঝঞ্ঝাট বিনিয়োগ কৌশলে বিশ্বাস করেন। অর্থাৎ, তাঁরা সুনিশ্চিত যে দীর্ঘ মেয়াদে তাঁকে বিনিয়োগ ভাঙাতে ব্যাঙ্কে দৌড়োতে হবে না। কেবল একটি জমার রসিদ, একটি মেয়াদপূর্তির তারিখ নিয়েই নিশ্চিন্তে থাকতে চান যাঁরা, তাঁদের পক্ষে একক তহবিলের আমানত বেছে নেওয়াই ভাল।

১৪ ১৯

একটি বড় অঙ্কের ফিক্সড ডিপোজ়িটের ক্ষেত্রে সমস্যা তখনই দেখা দেয় যখন জরুরি ভিত্তিতে অর্থের প্রয়োজন হয়। যদি কারও ৫০,০০০ টাকার প্রয়োজন হয়, তা হলে আমানত থেকে কেবল সেই অংশটি তুলে ফেলা সম্ভব হয় না। মোটা অঙ্কের এফডির পুরোটাই ভেঙে ফেলতে হয়। মেয়াদপূর্তির আগে টাকা তুলে ফেলার ফলে গোটা আমানতটির উপরই জরিমানা বসায় ব্যাঙ্ক বা ডাকঘর। এর ফলে সামগ্রিক রিটার্নও কমে যায়।

১৫ ১৯

একটি আমানতে সমস্ত টাকা জমা রাখা নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। ভারতে আইন অনুসারে ৫ লক্ষ টাকা জমার ক্ষেত্রে বিমার সুরক্ষা কার্যকরী। তার থেকে বেশি পরিমাণ টাকা রাখলে ৫ লক্ষের বাড়তি আমানতের উপর ব্যাঙ্কের কোনও দায় নেই। অর্থাৎ, কোনও কারণে ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে ৫ লক্ষের উপরে বিমার টাকা পাবেন আমানতকারীরা।

১৬ ১৯

বিশেষজ্ঞেরা তাই প্রায়শই বিনিয়োগকে একাধিক এফডিতে ভাগ করাকেই শ্রেয় বলে মনে করেন। তাতে সঞ্চিত অর্থের উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকে বলে মত তাঁদের। একটি এফডি ভাঙার পরিবর্তে, ছোট ছোট এফডি থাকলে প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তোলা যায়। বড় এফডি ভাঙার চেয়ে বেশি তা সুবিধাজনক এবং এতে কম সুদ কাটা যায়।

১৭ ১৯

যদি বড় অঙ্কের এফডি করাতে চান, তা হলে একটি সার্টিফিকেট না কিনে লগ্নিকে ছোট ছোট অঙ্কের অনেকগুলি লগ্নিতে ভেঙে দিন। যেমন, যদি ১০ লক্ষ টাকা রাখেন, তবে ২ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫টি সার্টিফিকেট নিন। পরে যদি ২ কিংবা ৪ লক্ষ টাকা তোলার প্রয়োজন হয়, তা হলে পুরো জমা না ভেঙে একটি অথবা দু’টি সার্টিফিকেট ভাঙান। সে ক্ষেত্রে পুরো টাকার উপর আপনাকে মাসুল গুনতে হবে না। আবার অবশিষ্ট লগ্নির উপর পূর্বনির্ধারিত হারেই সুদ পেতে থাকবেন।

১৮ ১৯

একটি ব্যাঙ্কে সমস্ত লগ্নি না করে দু’টি ব্যাঙ্কে তা ভাগ করে নিলে সুবিধা বেশি। তাতে সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ডিআইসিজিসি বিমা সীমার আওতায় আসবে। ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাবে। সঞ্চয়ের নিরাপত্তা বাড়বে। পরিবর্তিত সুদের হারের ক্ষেত্রেও একাধিক ফিক্সড ডিপোজ়িটের সুবিধা বেশি। ধরা যাক কেউ ৭ শতাংশ সুদের হারে একটি এফডি জমা করলেন। পরের বছর সুদের হার যদি ৮ শতাংশে বৃদ্ধি পায়, তা হলে স্বল্পমেয়াদি একটি এফডি ভাঙিয়ে পুনরায় বিনিয়োগ করতে পারেন।

১৯ ১৯

তবে সমস্ত লগ্নি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে রাখলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই সঞ্চয়ের একাংশ অবশ্যই সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা কোনও লিকুইড ফান্ডে রেখে দেওয়া উচিত, যাতে প্রয়োজনের মুহূর্তে তা তোলা যায়। লগ্নির এই ভারসাম্য জীবনে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement