India’s Strike in Pakistan

ধ্বংস জেট-হ্যাঙ্গার, রানওয়ে যেন পুকুর! উপগ্রহচিত্রে দেখা গেল মার খাওয়া পাক বায়ুসেনার চরম দুরবস্থা

ভারতের বিমানহানায় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বিশাল ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ মিলেছে একাধিক উপগ্রহচিত্রে। এ বার সেই ছবিগুলির কথা উল্লেখ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করল মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৫ ১৪:১৩
Share:
০১ ২০

ভারতের সঙ্গে চার দিনের ‘যুদ্ধে’ থরহরি কম্প পাকিস্তান! বিপুল অঙ্কের সামরিক সম্পদ নষ্ট হওয়ায় মাথা চাপড়াচ্ছে ইসলামাবাদ। ইতিমধ্যেই একাধিক উপগ্রহচিত্রে মিলেছে তার প্রমাণ। এ বার সেগুলির উল্লেখ করে এই সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করল জনপ্রিয় মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’। তবে লড়াইয়ে হেরে গিয়েও নতুন করে হুঙ্কার দিতে শোনা গিয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফকে।

০২ ২০

পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে চলা স্বল্প পরিসরের এই ‘যুদ্ধ’কে গত পাঁচ দশকে সবচেয়ে তীব্র বলে বর্ণনা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে। এতে যুদ্ধজাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের যথেচ্ছ ব্যবহার করে বিবদমান দু’পক্ষ। তবে ভারতের হামলা অনেক বেশি কার্যকর, সঠিক এবং ধ্বংসাত্মক ছিল বলে প্রতিবেদনে স্পষ্ট করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

Advertisement
০৩ ২০

‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তার পরবর্তী সময়ে চলা সংঘাতে পাক বিমানবাহিনীর মোট ১১টি ঘাঁটিকে গুঁড়িয়ে দেয় ভারতের বায়ুসেনা। নিউ ইয়র্কের টাইমসের দাবি, ‘‘এ ক্ষেত্রে প্রতীকী শক্তি প্রদর্শনের রাস্তায় হাঁটেনি নয়াদিল্লি। বরং সামরিক ছাউনিগুলিকে ধ্বংস করে যুদ্ধের শুরুতেই ইসলামাবাদের কোমর ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ভারতীয় বায়ুবীরেরা। আচমকা এত বড় ধাক্কা যে আসবে, তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা।’’

০৪ ২০

মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, পাকিস্তানের নূর খান, ভালোরী, সরগোধা এবং রহিম ইয়ার খান বায়ুসেনাঘাঁটিতে সম্ভবত সর্বাধিক জোরালো আঘাত হানে ভারতীয় বিমানবাহিনী। উপগ্রহচিত্রে সেই প্রমাণ মিলেছে। পাল্টা এ দেশের উধমপুর, ভাটিন্ডা এবং আদমপুরের বায়ুসেনাছাউনিতে হামলা চালায় ইসলামাবাদ। যদিও তাতে তেমন কোনও সুবিধা করতে পারেনি পশ্চিমের প্রতিবেশী। মাঝ-আকাশেই তাদের যাবতীয় আক্রমণ প্রতিহত করে নয়াদিল্লি।

০৫ ২০

রাওয়ালপিন্ডির পাক সেনা সদর দফতরের লাগোয়া নূর খান বায়ুসেনাঘাঁটির অন্য গুরুত্ব রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সংশ্লিষ্ট ছাউনিটির মধ্যে রয়েছে ইসলামাবাদের পরমাণু অস্ত্রভান্ডার। ভারতের বিমানহানায় নূর খানের মধ্যে থাকা একাধিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে বলে উপগ্রহচিত্র থেকে জানা গিয়েছে। ফলে পরমাণু অস্ত্রভান্ডার থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ শুরু হয়েছে বলে সমাজমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে। যদিও তা অস্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক পরমাণু নজরদারি সংস্থা।

০৬ ২০

উপগ্রহচিত্রে দক্ষিণ পাকিস্তানের বন্দর শহর করাচি সংলগ্ন ভালোরী বায়ুসেনাঘাঁটির দুরবস্থা প্রকাশ্যে এসেছে। ভারতীয় লড়াকু জেট থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে সেখানকার যুদ্ধবিমান রাখার ‘হ্যাঙ্গার’ এলাকা। অন্য দিকে, রহিম ইয়ার খান এবং সরগোধার রানওয়েতে তৈরি হয়েছে বিশাল বড় গর্ত। ফলে আপাতত সেখানে কোনও বিমান ওঠানামা করতে পারবে না।

০৭ ২০

গত ১০ মে সংশ্লিষ্ট বায়ুসেনাঘাঁটিগুলির ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে পাক বিমানবাহিনী। সেখানে বলা হয়, রহিম ইয়ার খান বিমানঘাঁটির রানওয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তাই আপাতত এই ছাউনি বন্ধ রাখা ছাড়া অন্য উপায় নেই। সরগোধা ঘাঁটিতে বিমানহানার তীব্রতা পরিমাপ করা হচ্ছে। এটিও বেশ কিছু দিনের জন্য বন্ধ রাখতে হতে পারে।

০৮ ২০

গত ১২ মে ভারতীয় বায়ুসেনাঘাঁটিগুলির উপগ্রহচিত্র প্রকাশ্যে আসে। সেখানে অবশ্য তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন দেখা যায়নি। ইসলামাবাদ অবশ্য দাবি করে, আদমপুর ছাউনিতে তীব্র আক্রমণ চালিয়ে সেখানকার এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’কে (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) উড়িয়ে দিয়েছেন তারা। যদিও উপগ্রহচিত্রে তার লেশমাত্র দেখা যায়নি।

০৯ ২০

১৩ মে আদমপুর বায়ুসেনাঘাঁটি পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিমানবাহিনীর অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ছবি তোলেন তিনি। সেখানে এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ হাতিয়ারটিকে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। ভারতীয় ফৌজ জানিয়েছে, ‘যুদ্ধ’ শুরু হওয়া ইস্তক নানা রকমের মিথ্যা তথ্য ছড়াতে থাকে ইসলামাবাদ। তার মধ্যে ‘এস-৪০০’ ছাড়াও ছিল ব্রহ্মস ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার ভুয়ো খবর।

১০ ২০

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, নিখুঁত নিশানায় হামলা চালিয়ে পাক বিমানবাহিনীর ২০ শতাংশ পরিকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। একগুচ্ছ যুদ্ধবিমান হারিয়েছে ইসলামাবাদ। তার মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ এবং চিনের তৈরি জেএফ-১৭ লড়াকু জেট। এ ছাড়া সরগোধা এবং ভোলারীর গোলাবারুদের ডিপোও উড়িয়ে দেয় নয়াদিল্লির আত্মঘাতী ড্রোন।

১১ ২০

ভোলারীতে ভারতের বিমানহানায় প্রাণ হারান পাক বায়ুসেনার স্কোয়াড্রন লিডার ওসমান ইউসুফ-সহ মোট ৫০ জন। নিহতদের মধ্যে ইউসুফ ছাড়া বায়ুসেনার চার জন অফিসার ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে পাক ফৌজের জনসংযোগ শাখার (ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন বা আইএসপিআর) মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘দু’টি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান হারিয়েছি আমরা।’’

১২ ২০

এর পাশাপাশি ড্রোন হামলায় পাক পঞ্জাব প্রদেশের লাহৌরের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’কে উড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। সেখানে চিনের তৈরি ‘এইচকিউ-৯পি’ নামের একটি হাতিয়ার মোতায়েন রেখেছিলেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা। এর জন্য নয়াদিল্লি ইজ়রায়েলের তৈরি ‘হারোপ’ ড্রোন ব্যবহার করেছে বলে বিবৃতিতে স্পষ্ট করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি।

১৩ ২০

চলতি বছরের ১০ মে সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয় ভারত এবং পাকিস্তান। এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেয় আমেরিকা। নয়াদিল্লির দাবি, ওই দিন ইসলামাবাদের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন্‌স (ডিজিএমও) ফোন করেন ভারতের ডিজিএমওকে। সেখানেই সংঘর্ষবিরতির আবেদন করেন তিনি। যদিও পাক ফৌজের পাল্টা দাবি, তাঁদের তরফে এই ধরনের কোনও আবেদন করা হয়নি।

১৪ ২০

এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে অবশ্য ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর কথায়, ‘‘পাকিস্তানের সামনে সংঘর্ষবিরতির জন্য অনুরোধ করা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না। তার প্রমাণ হল ভারতীয় সেনার প্রকাশ করা উপগ্রহচিত্র। আমাদের অভিযানে ইসলামাবাদ যে কতটা ধাক্কা খেয়েছে, তা ওই ছবিতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’

১৫ ২০

অন্য দিকে, ভারত-পাক সামরিক সংঘাতের আবহে স্বস্তির খবর শুনিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি বা আইএইএ)। ইসলামাবাদের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার থেকে কোনও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের খবর মেলেনি বলে জানিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান।

১৬ ২০

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতির পাঁচ দিনের মাথায় (পড়ুন ১৫ মে) জম্মু-কাশ্মীরে যান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ। শ্রীনগরে চিনার কোরের অফিসার ও জওয়ানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। পরে বলেন, ‘‘বিশ্বের কাছে আমার প্রশ্ন, এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং দুর্বৃত্তপরায়ণ দেশের হাতে পরমাণু অস্ত্র কি নিরাপদ?” ওই হাতিয়ারের উপরে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার নজরদারির দাবিও তোলেন তিনি।

১৭ ২০

অন্য দিকে সংঘর্ষবিরতির পর পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ বলেন, ‘‘আমরা যুদ্ধের জন্যও তৈরি, আবার শান্তির জন্যও প্রস্তুত। ভারতকে যে কোনও একটা বেছে নিতে হবে।’’ তাঁর দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে অনেক ধৈর্যশীল ছিল ইসলামাবাদ। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ম মেনে কাশ্মীর সমস্যা মেটানোর দাবি তোলেন তিনি।

১৮ ২০

চলতি বছরের ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটক-সহ মোট ২৬ জনকে নৃশংস ভাবে গুলি চালিয়ে খুন করে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ৭ মে মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (পাক অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) মোট ন’টি সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় ফৌজ। এর পরই দুই দেশের মধ্যে তীব্র হয় সংঘাত।

১৯ ২০

পহেলগাঁও হামলার পর সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তিকে স্থগিত করেছে মোদী সরকার। এই ব্যাপারে তীব্র আপত্তি রয়েছে ইসলামাবাদের। প্রধানমন্ত্রী শরিফ বলেছেন, ‘‘জল আমাদের অধিকার। ভারত সেটা বন্ধ করলে সেটা হবে ‘রেড লাইন’ অতিক্রমের শামিল।’’ পহেলগাঁও হামলা নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন তিনি।

২০ ২০

অন্য দিকে নয়াদিল্লি জানিয়ে দিয়েছে, পিওকে নিয়ে একমাত্র আলোচনা হতে পারে। তবে সেখানে কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মানবে না ভারত। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, ‘‘জল ও রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না।’’ ফলে সিন্ধু জল বণ্টনকে কেন্দ্র করে ফের দুই দেশের বাহিনী রণক্ষেত্রে মুখোমুখি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement