India vs Pakistan Navy

চিনের হাতে গ্বদর, পাসনির প্রস্তাব আমেরিকাকে, নৌশক্তিতে পিছিয়ে থাকা পাকিস্তান কি দাবার চালে মাত দেবে দিল্লিকে?

নৌশক্তিতে ভারতের ধারেকাছে নেই পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে বালোচিস্তানের গ্বদর বন্দরটি চিনের হাতে তুলে দিয়েছে ইসলামাবাদ। এ ছাড়া পাসনিতে বন্দর নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রকে ডেকেছে তারা। পাকিস্তানের দাবার চালের পাল্টা জবাব নয়াদিল্লির বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:২২
Share:
০১ ১৮

‘অপারেশন সিঁদুর’-এ মার খেয়ে এ বার ভারতের বিরুদ্ধে অন্যরকম ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। নৌশক্তিতে নয়াদিল্লির ধারেকাছে নেই ইসলামাবাদ। আর তাই বালোচিস্তানের গ্বদর এবং পাসনি বন্দরকে দুই মহাশক্তির হাতে তুলে দিতে মরিয়ে হয়ে উঠেছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে বিপদ বাড়বে ভারতের। সে ক্ষেত্রে ভারতের পাল্টা জবাব হতে পারে বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

০২ ১৮

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, পাক ফৌজের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের জায়গা হল ভারতীয় নৌবাহিনী। নয়াদিল্লির সবুজ সঙ্কেত পেলে করাচি বন্দরকে উড়িয়ে দেওয়ার সক্ষমতা যে তাদের রয়েছে, সেটা ভালই জানেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা। সে ক্ষেত্রে ভেঙে পড়বে ইসলামাবাদের অর্থনীতি। কারণ, করাচিকে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির ‘লাইফলাইন’ বললে অত্যুক্তি করা হবে না। ওই বন্দর ঘুরেই পাকিস্তানে ঢোকে পশ্চিম এশিয়ার আরব মুলুকগুলির সরবরাহ করা অপরিশোধিত খনিজ তেল।

Advertisement
০৩ ১৮

আর ঠিক সেই কারণেই ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন করাচি বন্দর একরকম ফাঁকা করে ফেলে পাক নৌবাহিনী। গুপ্তচর কৃত্রিম উপগ্রহের পাঠানো ছবিতে তার স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। নয়াদিল্লির ফৌজের অভিযানের সময় যাবতীয় রণতরী বালোচিস্তানের ওরমারা ঘাঁটিতে সরিয়ে ফেলে ইসলামাবাদ। সংশ্লিষ্ট ছাউনির পোশাকি নাম অবশ্য ‘জিন্নাহ নেভাল বেস’। এতে ডেস্ট্রয়ার এবং ফ্রিগেট শ্রেণির যুদ্ধজাহাজগুলিকে নিয়ে যান রাওয়ালপিন্ডির নৌসেনাপতিরা। সংঘর্ষবিরতির পর বেশ কয়েক দিন পর্যন্ত সেখান থেকে রণতরী বার করার সাহস দেখাননি তাঁরা।

০৪ ১৮

জিন্নাহ নৌসেনা ঘাঁটিকে বাদ দিলে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় যুদ্ধজাহাজ নিয়ে আত্মগোপনের জন্য আরও দু’টি বন্দর ব্যবহার করেছিল ইসলামাবাদ। সেগুলি হল, বালোচিস্তানের গ্বদর এবং পাসনি। এর মধ্যে প্রথমটি ‘চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক বারান্দা’ বা সিপিইসির (চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর) অন্তর্গত। বর্তমানে এর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বেজিঙের হাতে। অন্য দিকে দীর্ঘ দিন ধরেই সংস্কারের অভাবে ভুগছে ইরান সংলগ্ন পাসনি। কৌশলগত অবস্থানের কারণে এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ফিল্ড মার্শাল মুনিরের।

০৫ ১৮

ইসলামাবাদের নৌসেনাপতিদের এ-হেন পদক্ষেপের নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। তাঁদের যুক্তি, সিপিইসির জন্য গ্বদরে চিনের বিপুল লগ্নি থাকায় সংশ্লিষ্ট বন্দরটিকে কখনওই নিশানা করবে না নয়াদিল্লি। ভারতীয় নৌবাহিনীর হামলায় কয়েক হাজার কোটির লোকসান হলে বেজিং যে ছেড়ে দেবে না, তা বলাই বাহুল্য। সে ক্ষেত্রে সংঘাত পরিস্থিতিতে দুই ফ্রন্টে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকছে, যা কখনওই চাইবেন না এ দেশের ফৌজি জেনারেলরা।

০৬ ১৮

ঠিক এই একই কারণে পাসনিকে আমেরিকার হাতে তুলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন ফিল্ড মার্শাল মুনির। ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘ফিন্যানশিয়াল টাইম্স’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সেখানে লগ্নির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আধিকারিকদের প্রস্তাব দেন পাক সেনাপ্রধানের পরামর্শদাতারা। চিন নিয়ন্ত্রিত গ্বদরের থেকে বালোচিস্তানের ওই এলাকার দূরত্ব মেরেকেটে ১৪২ কিলোমিটার। ইসলামাবাদের প্রস্তাব মেনে নিলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রপথে যে মার্কিন আধিপত্য বাড়বে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

০৭ ১৮

যুদ্ধজাহাজের পাশাপাশি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় করাচি থেকে বেশ কিছু তেলের ডিপো অন্যত্র সরিয়ে দেয় পাক নৌবাহিনী। সংশ্লিষ্ট বন্দরটি দিয়ে দৈনিক পাঁচ লক্ষ ব্যারেল ‘তরল সোনা’ আমদানি করে থাকে ইসলামাবাদ। পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির ৯৫ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পুরোপুরি ভাবে করাচির উপর নির্ভরশীল। এটি মূল্যের দিক থেকে ৬৫ শতাংশের বেশি বলে জানা গিয়েছে।

০৮ ১৮

এ বছরের জানুয়ারিতে সৈন্যশক্তির দিক থেকে কোন দেশ কতটা শক্তিশালী, সেই সংক্রান্ত একটি তালিকা প্রকাশ করে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’। মোট ১৪৫টি দেশের মধ্যে সেখানে ভারতকে চতুর্থ স্থানে রেখেছে এই রেটিং সংস্থা। গত বছরের নিরিখে নয়াদিল্লি নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারলেও অবনমন হয়েছে পাকিস্তানের। তালিকায় ১২ নম্বর স্থানে জায়গা পেয়েছে ইসলামাবাদ। এই রিপোর্টেও রাওয়ালপিন্ডির নৌ-দুর্বলতা প্রকাশ্যে চলে আসে।

০৯ ১৮

‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’ জানিয়েছে, ভারতীয় নৌসেনার রয়েছে মোট ২৯৩টি রণতরী। এর মধ্যে বিমানবাহী যুদ্ধপোতের সংখ্যা দুই। সেই তালিকায় আইএনএস বিক্রান্ত ছাড়াও নাম রয়েছে আইএনএস বিক্রমাদিত্যের। এই ধরনের আরও একটি রণতরী তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে নয়াদিল্লির। ১৩টি ডেস্ট্রয়ার, ১৪টি ফ্রিগেট এবং ১৮টি করভেট ব্যবহার করেন এ দেশের জলযোদ্ধারা।

১০ ১৮

অন্য দিকে পাক নৌবাহিনীর বহরে সব মিলিয়ে রয়েছে ১২১টি যুদ্ধজাহাজ। বর্তমানে ইসলামাবাদের কাছে নেই কোনও বিমানবাহী এবং ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির রণতরী। ন’টি ফ্রিগেট, ন’টি করভেট, ৬৯টি টহলদারি ভেসেল এবং তিনটি মাইন সুপার শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করে তারা। ডুবোজাহাজের নিরিখেও কয়েক যোজন এগিয়ে আছে নয়াদিল্লি।

১১ ১৮

ভারতীয় নৌসেনায় মোট ডুবোজাহাজের সংখ্যা ১৮। এর মধ্যে তিনটি পরমাণু শক্তিচালিত এবং পরমাণু হাতিয়ারে সজ্জিত। ইসলামাবাদের নৌবাহিনীর বহরে ডুবোজাহাজের সংখ্যা মাত্র আট। এর মধ্যে একটিও পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত নয়। ফলে সমুদ্রের গভীর থেকে আণবিক হামলা চালাতে পারবে না রাওয়ালপিন্ডির নৌসেনাপতিরা।

১২ ১৮

বর্তমানে ‘নিউক্লিয়ার ট্রায়েড’ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে স্থান পেয়েছে ভারত। অর্থাৎ, জল, স্থল এবং আকাশ— তিন জায়গা থেকে পরমাণু হামলার ক্ষমতা রয়েছে নয়াদিল্লির। এমনকি সমুদ্রের গভীরে থেকেও আইএনএস অরিহান্ত এবং আইএনএস অরিঘাটের মতো ডুবোজাহাজ থেকে আণবিক আক্রমণ চালাতে পারে ভারতের নৌসেনা। এই ক্ষমতা নয়াদিল্লির নৌবাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চিনের সমতুল্য করেছে।

১৩ ১৮

১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় এ দেশের নৌসেনা। ওই সময় করাচি বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইসলামাবাদের একাধিক যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়েছিল ভারত। এর মধ্যে ছিল ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির পিএনএস খাইবার ও পিএনএস শাহ জাহান, মাইন সুইপার পিএনএস মুহাফেজ় এবং পণ্যবাহী এমভি ভেনাস চ্যালেঞ্জার। ফলে রাতারাতি পাক নৌসেনা একরকম ধ্বংসই হয়ে যায়।

১৪ ১৮

করাচি বন্দর আক্রমণ করতে ’৭১ সালের ডিসেম্বরে ‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’ এবং ‘অপারেশন পাইথন’ নামের পর পর দু’টি অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় নৌসেনা। ওই সময় প্রতি-আক্রমণ চালাতে আমেরিকার থেকে পাওয়া পিএনএস গাজি নামের একটি ডুবোজাহাজ পাঠায় পাকিস্তান। বিশাখাপত্তনমের কাছে আইএনএস রাজপুত নামের একটি যুদ্ধজাহাজ সেটিকেও ডুবিয়ে দেয়।

১৫ ১৮

এ ছাড়া সেই সময়কার বিমানবাহী রণতরীগুলি থেকে একাধিক আক্রমণ পরিচালনা করেন ভারতীয় নৌসেনা। সেগুলি ঠেকানো ইসলামাবাদে পক্ষে সম্ভব হয়নি। শুধু তা-ই নয়, সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে উপকূলরেখা থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল আইএনএস পানভেন। এতে খুলনার দিকে ভারতীয় স্থলবাহিনীর অগ্রগতি তরান্বিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে ৯৩ হাজারের বেশি পাক সৈনিক আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তান ভেঙে জন্ম হয় নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের, নাম বাংলাদেশ।

১৬ ১৮

সূত্রের খবর, ’৭১-এর যুদ্ধের ৫৪ বছর পর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় ফের একবার করাচির দিকে বিশাল নৌবাহিনী মোতায়েন করে নয়াদিল্লি। ৪৫ হাজার টনের বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত ছাড়াও সেখানে ছিল একাধিক ডেস্ট্রয়ার এবং ফ্রিগেট শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ। এ ছাড়াও ওই সময় আরবসাগরে পরমাণু শক্তিচালিত এবং আণবিক অস্ত্রে সজ্জিত আইএনএস অরিহান্ত এবং আইএনএস আরিঘাটের মতো ডুবোজাহাজ নামিয়েছিল দিল্লি।

১৭ ১৮

‘সিঁদুর’-এর অভিযান শুরু হওয়ার মুখে করাচি বন্দরের কাছে পৌঁছে বিমানবাহী রণতরীটির সঙ্গে থাকা আইএনএস সুরাট একাধিক যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়। ডেস্ট্রয়ার জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র। সংঘর্ষ অন্য দিকে মোড় নিলে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের থেকে করাচি আক্রমণের সবুজ সঙ্কেত পেত বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

১৮ ১৮

প্রায় হাজার কিলোমিটারের বেশি লম্বা উপকূলরেখা থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানের নৌসেনা ঘাঁটির সংখ্যা মাত্র পাঁচ। অতীতে বহু বার নৌশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সংঘাত পরিস্থিতিতে সেগুলিকে ব্যবহার করতে দেয়নি নয়াদিল্লি। স্বাধীনতার পর থেকেই গুজরাতের কচ্ছ এলাকার স্যর ক্রিক খাঁড়ির উপর নজর রয়েছে ইসলামাবাদের। সম্প্রতি এই নিয়ে হুঁশিয়ারি দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ঠিক তার কয়েক দিনের মাথাতেই নৌসেনাপতিদের সঙ্গে মোদীর দীপাবলি পালনকে তাই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement