Indian Navy Submarine Fleets

নীলনকশা হাতে পেলেই ‘অ্যাকশন’ শুরু! চিন-পাকিস্তানের ঘুম উড়িয়ে ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ বাহিনী তৈরির দোরগোড়ায় ভারত

সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে অত্যাধুনিক ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির ডিজেল-ইলেকট্রিক চালিত ছ’টি ডুবোজাহাজ তৈরিতে কোমর বেঁধে লেগে পড়েছে ভারতীয় নৌসেনা। আগামী বছরের মধ্যে সেগুলির নীলনকশা হাতে চলে আসবে বলে স্পষ্ট করেছেন প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো ডিফেন্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা জেডি পাটিল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫৫
Share:
০১ ২০

চিন-পাকিস্তানের হুমকির কথা মাথায় রেখে ক্রমাগত শক্তি বাড়াচ্ছে ভারতীয় নৌসেনা। একের পর এক অত্যাধুনিক রণতরী ও ডুবোজাহাজ শামিল হচ্ছে বাহিনীর বহরে। এ দেশের জলযোদ্ধাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে ঘরের মাটিতে তাই ‘নিঃশব্দ ঘাতক’দের তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর নীলনকশা আগামী বছরের মধ্যেই প্রকাশ্যে চলে আসবে বলে জানা গিয়েছে।

০২ ২০

ডুবোজাহাজের সংখ্যার নিরিখে ভারতের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে চিনের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ-র নৌসেনা। আর তাই বেজিংকে চাপে ফেলতে ঘরের মাটিতে ‘নিঃশব্দ ঘাতক’দের নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেই লক্ষ্যে ‘প্রজেক্ট-৭৬’ নামের বিশেষ একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র।

Advertisement
০৩ ২০

সম্প্রতি, ‘প্রজেক্ট-৭৬’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন বেসরকারি প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো ডিফেন্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা জেডি পাটিল। তাঁর দাবি, আগামী এক বছরের মধ্যে এই প্রকল্পে তৈরি হওয়া ডুবোজাহাজগুলির নকশা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে দ্রুত গতিতে নির্মাণকাজ শুরু করার ক্ষেত্রে দূর হবে যাবতীয় বাধা।

০৪ ২০

সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিতে দু’টি পর্যায়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর ১২টি ডুবোজাহাজ হাতে পাওয়ার কথা রয়েছে। সেগুলির সব ক’টি ডিজেল-ইলেকট্রিকচালিত প্রথাগত হামলাকারী ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ হতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। দিন-রাত এক করে সমুদ্রের গভীরে থাকা জলযানগুলির নকশা তৈরি করছে নৌসেনার ‘ওয়ারশিপ ডিজ়াইন ব্যুরো’। এ ব্যাপারে ‘লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো ডিফেন্স’-এর মতো বেসরকারি সংস্থার সাহায্যও নিচ্ছে তারা।

০৫ ২০

এই প্রথম সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ডুবোজাহাজ তৈরিতে হাত লাগিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। অত্যাধুনিক ‘স্টেল্‌থ’ প্রযুক্তি এবং নতুন যুগের হাতিয়ারে সেগুলিকে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতীয় নৌসেনার। সূত্রের খবর, প্রথম ছ’টি ডুবোজাহাজের নকশা পুরোপুরি ভাবে তৈরি করেছে ‘ওয়ারশিপ ডিজ়াইন ব্যুরো’। পরের ছ’টির ক্ষেত্রে বাইরের প্রতিরক্ষা গবেষকদেরও মতামত নেওয়া হবে।

০৬ ২০

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, নকশা থেকে সেন্সর কিংবা হাতিয়ার— প্রতিটা ক্ষেত্রেই ‘প্রজেক্ট ৭৬’-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ পাবে দেশের একাধিক বেসরকারি শিল্প সংস্থা। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে ডুবোজাহাজগুলি তৈরি হয়ে গেলে তিন হাজার টনের পুরনো ‘নিঃশব্দ ঘাতক’দের সরিয়ে ফেলবে নৌসেনা। পাশাপাশি, এর মাধ্যমে ডুবোজাহাজ নির্মাণের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা অর্জন করতে চাইছে নয়াদিল্লি।

০৭ ২০

সূত্রের খবর, ২০২৮ সালের মধ্যে ‘প্রজেক্ট ৭৬’-এর প্রথম ডুবোজাহাজের নমুনা তৈরির কাজ শুরু করবে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা। ‘লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো ডিফেন্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা পাটিল অবশ্য জানিয়েছেন, ২০৩৭ সালের আগে সমুদ্রের গভীরে থাকা ডুবোযান হাতে পাবে না ভারতীয় নৌসেনা। তবে এই হার্ডল টপকাতে পারলে ডুবোজাহাজের ব্যাপারে বিদেশি নির্ভরশীলতা যে ভারত অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারবে, তা বলাই বাহুল্য।

০৮ ২০

‘প্রজেক্ট ৭৬’-এ তৈরি হওয়া ডুবোজাহাজগুলিকে অত্যাধুনিক ‘এয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রপালসান’ (এআইপি) এবং সোনার প্রযুক্তিতে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন প্রস্তুতকারীরা। পাশাপাশি, ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। শত্রুর রণতরী ধ্বংস করতে উচ্চ ক্ষমতার টর্পেডো এবং সামুদ্রিক মাইনও ব্যবহার করবে ওই সমস্ত ডুবোজাহাজ।

০৯ ২০

এর আগে ডুবোজাহাজ নির্মাণে ‘প্রজেক্ট ৭৫’ এবং ‘প্রজেক্ট ৭৫আই’ নামের দু’টি প্রকল্পে অনুমোদন দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। প্রথমটিতে ফরাসি প্রযুক্তিতে স্করপিয়ান শ্রেণির ছ’টি ডুবোজাহাজ তৈরি করে ভারত। সেগুলি সবই ছিল কালভেরি শ্রেণির ডুবোজাহাজ। অন্য দিকে ‘প্রজেক্ট ৭৫আই’-তে আরও ছ’টি ‘এয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রপালসান’ প্রযুক্তির ডুবোজাহাজ তৈরি করছে নয়াদিল্লি। এতে স্পেন এবং জার্মান সংস্থার জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

১০ ২০

সূত্রের খবর, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ডুবোজাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে ‘প্রজেক্ট ৭৫’-এর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাইছে ভারতীয় নৌসেনার ‘ওয়ারশিপ ডিজ়াইন ব্যুরো’। শুধু তা-ই নয়, সমুদ্রের গভীরে চুপিসারে লুকিয়ে থেকে হামলা চালানোর জন্য এতে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

১১ ২০

বর্তমানে ভারতের হাতে তিনটি পরমাণু শক্তিচালিত এবং আণবিক হাতিয়ার ব্যবহারে সক্ষম ডুবোজাহাজ রয়েছে। সেগুলি হল, আইএনএস অরিহান্ত, আইএনএস অরিঘাট এবং আইএনএস অরিদমন। এর মধ্যে প্রথম দু’টিকে বহরে শামিল করেছে বাহিনী। তৃতীয়টির চলছে সামুদ্রিক পরীক্ষা। খুব দ্রুত তা নৌসেনার হয়ে কাজ শুরু করবে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

১২ ২০

২০১৪ সালে ভারতীয় নৌসেনার বহরে শামিল হয় আইএনএস অরিহান্ত। বিশাখাপত্তনমের জাহাজ নির্মাণকেন্দ্রে ‘অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস ভেসেল’ প্রকল্পের আওতায় ছ’হাজার টনের বেশি ওজনের এই ডুবোজাহাজ তৈরি করে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে গত বছর বাহিনীতে শামিল হয় আইএনএস অরিঘাট। এটিও নির্মাণকারী সংস্থা বিশাখাপত্তনমের জাহাজ নির্মাণকেন্দ্র।

১৩ ২০

পরমাণু শক্তিচালিত এবং আণবিক হাতিয়ার ব্যবহারে সক্ষম ডুবোজাহাজ থেকে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে নৌসেনা। আইএনএস অরিঘাটে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। বাহিনীর বহরে শামিল হতে চলা আইএনএস অরিদমনে আবার রয়েছে একসঙ্গে আটটি ক্ষেপণাস্ত্রে হামলা করার সুবিধা। সেগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটির পাল্লা ছ’হাজার কিলোমিটারের বেশি হবে বলে জানা গিয়েছে।

১৪ ২০

বিশ্লেষকদের দাবি, ডুবোজাহাজ তৈরির অভিজ্ঞতা ভারতের রয়েছে। তবে ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির হামলাকারী পরমাণু বা ডিজেল-ইলেকট্রিকচালিত ‘নিঃশব্দ ঘাতক’দের কখনও তৈরি করেনি নয়াদিল্লি। এই ধরনের ডুবোজাহাজগুলি আকারে কিছুটা ছোট এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন হয়। অতর্কিতে আক্রমণ শানিয়ে যে কোনও নৌসেনা ঘাঁটি বা বন্দরকে উড়িয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে সংশ্লিষ্ট ডুবোযানগুলির।

১৫ ২০

ডুবোজাহাজ তৈরির পাশাপাশি শত্রুর ডুবোজাহাজ ধ্বংসের সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকেও কড়া নজর রেখেছে ভারত। চলতি বছরের ৮ জুলাই ‘ডুবোজাহাজ-ধ্বংসকারী বর্ধিত পাল্লার রকেট’ বা ইআরএএসআর-এর (এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ অ্যান্টি-সাবমেরিন রকেট) সফল পরীক্ষা নিয়ে বিবৃতি দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেখানে বলা হয়, গত ২৩ জুন থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটির চলেছে ট্রায়াল। ‘আইএনএস কাভারাত্তি’ নামের করভেট শ্রেণির রণতরী থেকে ছুড়ে ডুবোজাহাজ-ধ্বংসকারী রকেটটির শক্তি পরীক্ষা করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী।

১৬ ২০

কেন্দ্র জানিয়েছে, ইআরএএসআর-এর নকশা তৈরি করেছে সরকারি প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-র (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন) ‘আর্মামেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাব্লিশমেন্ট’ শাখা। সংশ্লিষ্ট দফতরটি রয়েছে মহারাষ্ট্রের পুণে শহরে। ডুবোজাহাজ ধ্বংসকারী হাতিয়ারটির নির্মাণে হাই এনার্জি ম্যাটেরিয়ালস রিসার্চ ল্যাবরেটরি এবং নেভাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল ল্যাবরেটরির সহযোগিতা পেয়েছে তারা।

১৭ ২০

সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ইআরএএসআর ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, ভারতীয় রণতরীতে থাকা লঞ্চার থেকে অনায়াসেই একে ছুড়তে পারবেন এ দেশের জলযোদ্ধারা। এর জন্য আলাদা করে কোনও লঞ্চার তৈরির প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয়ত, সমুদ্রের গভীরে নির্ভুল ভাবে শত্রুর ডুবোজাহাজ খুঁজে নিয়ে ধ্বংস করার দুর্দান্ত ক্ষমতা রয়েছে ডিআরডিওর এই রকেটের।

১৮ ২০

ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে, পরীক্ষার সময় ‘আইএনএস কাভারাত্তি’ করভেট থেকে বিভিন্ন পাল্লার মোট ১৭টি রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়। পাল্লার পাশাপাশি ইআরএএসআরের ফিউজ় কার্যকারিতা এবং বিস্ফোরক বহনের ক্ষমতা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন তাঁরা। প্রতিটা ক্ষেত্রেই ‘ভাল নম্বর’ পেয়ে পাশ করেছে ডিআরডিও-র এই ডুবোজাহাজ ধ্বংসকারী হাতিয়ার। তবে এর পাল্লা এবং বিস্ফোরক বহনের ক্ষমতা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনেনি সরকার ও নৌসেনা।

১৯ ২০

এ-হেন ডিআরডিওর ডুবোজাহাজ ধ্বংসকারী রকেট নির্মাণের লাইসেন্স রয়েছে হায়দরাবাদের ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড এবং নাগপুরের সোলার ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যারোস্পেস লিমিটেডের। সূত্রের খবর, খুব দ্রুত সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটি বিভিন্ন রণতরীতে শামিল করার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর। সেইমতো রকেট সরবরাহের বরাত দেবে ফৌজ। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত এলেই শুরু হবে রকেট উৎপাদনের কাজ।

২০ ২০

এ ছাড়া, গত বছর ডুবোজাহাজ থেকে হামলাকারী ড্রোন তৈরির কথা ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা। তার জন্য সাগর ডিফেন্স ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি স্টার্ট আপ সংস্থার সঙ্গে মিলিত ভাবে কাজ করছে তারা। জলের গভীরে থেকে উৎক্ষেপণকারী মানববিহীন উড়ুক্কু যান বা ইউএল-ইউএভির (আন্ডারওয়াটার লঞ্চড-আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল) প্রযুক্তি সাগর ডিফেন্সকে ডিআরডিও সরবরাহ করবে বলে জানা গিয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement