Japan mega earthquake

‘টাইম বোমা’র উপর বসে এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র, ‘মহাকম্প’-এর আশঙ্কা! সুনামিতে উঠতে পারে ৯৮ ফুটের ঢেউ, লক্ষ লক্ষ প্রাণহানির শঙ্কা

ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে সুনামির আশঙ্কাও জারি করেছে প্রশাসন। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) সুনামির সতর্কতা জারি করে জানিয়েছিল, সমুদ্রের ঢেউ তিন মিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। হোক্কাইডো, আওমোরি এবং ইওয়াতে সুনামি সতর্কতার কথা শুনিয়েছিল জেএমএ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:১৫
Share:
০১ ১৭

এক সপ্তাহে দু’বার জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল জাপান। সোমবার ও শুক্রবার। জাপানের উত্তর-পূর্ব অংশে ৭.৬ ও ৬.৭ মাত্রার শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হওয়ার পরই সিঁদুরে মেঘ দেখতে পাচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্রের প্রশাসন। হোক্কাইডোর ঠিক দক্ষিণে আওমোরির পূর্ব উপকূলে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার পর বড় ধরনের ভূমিকম্পের সতর্কতা জারি করেছিল জাপান।

০২ ১৭

ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে সুনামির আশঙ্কাও জারি করেছে প্রশাসন। জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) সুনামির সতর্কতা জারি করে জানিয়েছিল, সমুদ্রের ঢেউ তিন মিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। হোক্কাইডো, আওমোরি এবং ইওয়াতে সুনামি সতর্কতার কথা শুনিয়েছিল জেএমএ। পরে সেই সতর্কতা প্রত্যাহার করে নেয় জাপান সরকার।

Advertisement
০৩ ১৭

বিপদ এড়াতে বাসিন্দাদের আপাতত উপকূলীয় এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত মাসে আইওয়েট প্রদেশ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে প্রশান্ত মহাসাগরে সুনামি লক্ষ করা যায়। ভূমিকম্পপ্রবণ দেশটিতে ২০১১ সালের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দগদগে ক্ষত মুছে এলেও অতীত থেকে শিক্ষা নিতে চায় নিশীথ সূর্যের দেশটি।

০৪ ১৭

২০১১ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল জাপান এবং সংলগ্ন এলাকা। মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ১৮-২০ হাজার জনের। ফুকুশিমায় পারমাণবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছিল। সেই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা স্মরণে রেখে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিল টোকিয়ো।

০৫ ১৭

জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে আট মাত্রারও বেশি জোরালো ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। ফুঁসে উঠতে পারে সমু্দ্র। সুনামির প্রভাবে ৯৮ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছোতে পারে জলোচ্ছ্বাস। প্রায় ২ লক্ষ মানুষের প্রাণসংশয়ের আশঙ্কার আভাস দিয়েছে জাপান সরকার। ১৯ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে দেশটিকে।

০৬ ১৭

আক্ষরিক অর্থেই শিয়রে শমন। উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে, জরুরি সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে। সমস্ত কাজকর্ম স্থগিত রেখে দেরি না করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি সেরে রাখতে বলা হয়েছে জাপানিদের।

০৭ ১৭

শুক্রবার সকাল ১১টা ৪৪ মিনিট (জাপানের স্থানীয় সময় অনুসারে)-এ জাপানের উত্তর-পূর্বাংশে কম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পে ৩৪ জনের আহত হওয়ার খবর রয়েছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সে দেশের আওমরি প্রদেশের (প্রিফেকচার) পূর্ব উপকূল, মাটির ২০ কিলোমিটার গভীরে। জায়গাটি জাপানের প্রধান দ্বীপ হনসুর উত্তরে অবস্থিত।

০৮ ১৭

তার আগে সোমবার গভীর রাতে জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল জাপান। জাপানের উত্তর-পূর্বাংশ প্রদেশ (প্রিফেকচার) আইওয়েটের বিস্তীর্ণ এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৬। স্থানীয় সময় অনুযায়ী সোমবার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ আইওয়েট প্রদেশ বরাবর প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলে কম্পনটি হয়।

০৯ ১৭

এই ভূমিকম্পের জেরে কোথায়, কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী হোক্কাইডো, আওমরি, আইওয়েট, মিয়াগিতে সুনামির জেরে সমুদ্রের জলের উচ্চতা ১ মিটার হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছিল উপকূলবাসীদের।

১০ ১৭

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন জনগণের উদ্দেশে যে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে তা সুনামির কোনও পূর্বাভাস নয়। তাঁরা এ-ও আশ্বস্ত করেছেন যে ৮ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা মাত্র ১ শতাংশ। সরকারের আশা, সতর্ক থাকার পরামর্শটি ভূমিকম্পের একটি সতর্কীকরণ হিসাবে কাজ করবে।

১১ ১৭

জেএমএ জানিয়েছে যে সোমবারের ভূমিকম্প হোক্কাইডো-সানরিকু উপকূলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। জাপানের নীচে অবস্থান করা প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটি দু’টি খাত বা ট্রেঞ্চ তৈরি করেছে। জাপান এবং চিশিমা ট্রেঞ্চ। ২০১১ সালের বিধ্বংসী সুনামি ও ভূমিকম্পের জন্য জাপান ট্রেঞ্চই দায়ী। এই খাত আসলে দু’টি টেকটনিক পাতের সংযোগস্থল।

১২ ১৭

জাপান যে পাতের উপর রয়েছে, ক্রমে তার নীচে প্রবেশ করছে ফিলিপাইন সাগর টেকটনিক পাত। এই দুই পাত নড়াচড়া করলে তাদের সংঘর্ষের ফলে বিশাল শক্তি উদ্গত হবে। তার জেরে হতে পারে ‘মহাকম্প’। কম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৮ ছাড়ালে তাকে ‘মহাকম্প’ বলা হয়।

১৩ ১৭

২০১১ সালে জাপানের বিধ্বংসী ভূমিকম্পের মাত্রাও ছিল ৯.১। সুনামিতে ১৩০ ফুট পর্যন্ত উঠেছিল ঢেউ। জলে ভেসেছিল ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রের একাংশ। ফলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। মনে করা হয়, ওই ঘটনা ছিল বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্যোগ।

১৪ ১৭

বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন কোনও ভূমিকম্প হয়, সুনামির শক্তি প্রতিসম ভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে না। চ্যুতি কোনও সরলরেখায় ঘটে না। ফলে বাইরের দিকে তার গতিও সর্বত্র একই থাকে না। ভূমিকম্পের উৎসের আনুমানিক আকার এবং অবস্থানের উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক ভাবে সতর্কতাগুলি জারি করা হয়ে থাকে।

১৫ ১৭

২০২৪ সালে গোড়াতেই ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প এবং সুনামির জেরে কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল জাপান। মৃদু এবং মাঝারি মাত্রার কম্পনে ১৫৫ বার কেঁপে উঠেছিল জাপান। সে বারও ভূমিকম্পের পরেই জাপানের বেশ কয়েকটি উপকূল এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি হয়।

১৬ ১৭

সরকারের আশঙ্কা, ভূমিকম্প হলে উত্তর জাপানের প্রদেশ বা প্রিফেকচার হোক্কাইডো থেকে টোকিয়োর পশ্চিমের চিবা জেলা পর্যন্ত জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল জুড়ে বড় আকারের সুনামিও আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরাও এ বিষয়ে সহমত হয়েছেন।

১৭ ১৭

২০১২-১৩ সালে এই সম্ভাব্য ‘মহাকম্প’ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল জাপানের সরকার। তখন সম্ভাব্য মৃত্যুসংখ্যা ছিল অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞেরা তখন আশঙ্কা করেছিলেন যে, জাপানে ‘মহাকম্প’ হলে তাতে প্রাণ হারাতে পারেন তিন লক্ষ ২৩ হাজার জন। বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জাপান সরকার মনে করছে, সেই মৃত্যুর সংখ্যা আরও কমাতে তারা সমর্থ হবে। প্রযুক্তি এবং আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা করেই একমাত্র এটা সম্ভব।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement