শুক্রবারই চার হাত এক হতে চলেছে শিল্পপতি এবং আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির কনিষ্ঠ পুত্র জিৎ আদানি ও দিভা জৈমিন শাহের। দিভা বিখ্যাত হিরে ব্যবসায়ী জৈমিন শাহের মেয়ে। বিয়ে উপলক্ষে আদানি পরিবারে খুশির হাওয়া। অনেক দিন পর বিয়ের সানাই বাজতে চলেছে অহমদাবাদের আদানি হাউসে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজস্থানের উদয়পুরে প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল জিৎ এবং দিভার। দু’দিন ধরে চলেছিল সেই অনুষ্ঠান। তার আগের বছরের মার্চ মাসে ঘরোয়া অনুষ্ঠানেই আংটিবদল করেছিলেন দিভা আর জিৎ। সেই অনুষ্ঠানে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং বন্ধুবান্ধবেরাই অতিথি তালিকায় ঠাঁই করে নেন। জাঁকজমকের তেমন কোনও ছোঁয়া ছিল না সেই সব অনুষ্ঠানে।
দেশের অন্যতম ধনকুবের ও শিল্পোদ্যোগীর ছেলের বিয়ের আয়োজন কেমন হতে চলেছে? অম্বানীদের মতোই আদানির কনিষ্ঠ পুত্রের বিয়ের আসরও গুজরাতেই বসতে চলেছে। তবে জামনগরে নয়, অহমদাবাদে। সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন সূত্র বলছে, আদানিদের অহমদাবাদের বসতবাড়িতেই বসবে বিয়ের আসর। বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তৈরি সেই বাড়ি। বাইরে রয়েছে গাছপালায় ঘেরা বিস্তৃত বাগান। সব মিলিয়ে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার একর জায়গা। ঐতিহ্যবাহী জৈন ও গুজরাতি রীতিনীতি মেনে সম্পন্ন হবে বিয়ের অনুষ্ঠান।
আদানি পরিবারে ‘ছোট রাজপুত্রে’র বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। বিয়ের অতিথিদের তালিকা অম্বানী-পুত্রদের বিয়ের মতো তারকাখচিত হবে কি না, সে নিয়ে বিপুল চর্চা চলে নানা মাধ্যমেই। জিৎ এবং দিভার বিয়ে উপলক্ষে ভোজের আয়োজন কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, হলি গায়িকা টেলর সুইফ্টকে পুত্রের বিয়েতে শিল্পী হিসাবে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন গৌতম। জিতের বিয়ে উপলক্ষে মঞ্চে গানও গাইতে পারেন টেলর। আদানি-পুত্রের বিয়ের নিমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় থাকতে পারেন সেলেনা গোমেজ়, সিডনি সুইনি, কেন্ডেল জেনার এবং কাইলি জেনারের মতো তারকারা।
বিয়েতে খাওয়াদাওয়ার এলাহি আয়োজনও থাকবে বলে একাংশের দাবি। মেনুতে থাকবে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পদের সমাহার। ৫৮টি দেশ থেকে রন্ধনশিল্পীরা আসতে পারেন আদানির কনিষ্ঠ পুত্রের বিয়েতে।
সমস্ত জল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছেন পাত্রের বাবা স্বয়ং। দিন কয়েক আগে মহাকুম্ভে সপরিবারে পুণ্যস্নান করতে এসে শিল্পপতি গৌতম আদানি জানিয়েছিলেন, তাঁর পুত্র জিতের বিয়ে ঠিক হয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি। তাঁদের বেড়ে ওঠা ও মূল্যবোধ সাধারণ মানুষের মতোই। তাই বিয়েও হবে খুবই সাধারণ সাদামাঠা ভাবে পরিবারের রীতি ও ঐতিহ্য মেনে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি বসেছিল প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠান। জিৎ ও দিভার বিয়ের আগের দিনের সেই অনুষ্ঠানে ভাঙড়ার আসর জমেছিল আদানি-শাহ পরিবারে। আসর মাতিয়ে রাখেন বিখ্যাত গায়ক দালের মেহেন্দির ছেলে গুরদীপ মেহেন্দি। সেই অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজেছিলেন হবু বর ও কনে। তাঁদের গানের তালে মাততে দেখা গিয়েছিল বলে দাবি।
প্রাক্-বিবাহের আসর বসার আগের দিন নিজের এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেন গৌতম। সেখানে তিনি এই বিবাহ উপলক্ষে একটি ঘোষণা করেন। ছেলের বিয়ের আনন্দঘন মুহূর্তে একটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন। প্রতি বছর ৫০০ জন প্রতিবন্ধী মহিলাকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা করবে আদানি গোষ্ঠী। জিৎ এ দিন ২১ জন নববিবাহিত প্রতিবন্ধী মহিলা এবং তাঁদের স্বামীদের সঙ্গেও দেখা করে এই প্রকল্পটি শুরু করেন।
বিয়েতে অতিথির সংখ্যা তিনশোর বেশি হবে না বলে আশা করা হয়েছে। তবে, এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক সংখ্যা ঘোষণা করা হয়নি। বিবাহের প্রস্তুতি দেখতে অনুষ্ঠানস্থল ঘুরে দেখেন জিৎ ও দিভা। সেই ছবি প্রকাশিত হয়েছে সমাজমাধ্যমে। সেই ছবিতে দিভাকে হালকা গোলাপি হলুদের মিশেলে জমকালো সুতোর কাজ করা লেহঙ্গার মতো পোশাকে দেখা দিয়েছে। গলায় ছিল জমকালো ও ভারী একটি নেকলেস। পাশে হালকা সবুজ কুর্তায় হাজির ছিলেন জিৎ।
বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকছে দেশীয় শিল্পীদের শিল্প প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও। সেই স্টলগুলি ঘুরে সে দিন দেখেন জিৎ ও দিভা।
বিয়ে উপলক্ষে অনুষ্ঠানবাড়িতে নজরকাড়া রঙ্গোলি আঁকা থাকবে বলেও শোনা যাচ্ছে। সেই রঙ্গোলি নাকি আকারে এতই বড় হবে যে, তা আঁকার জন্যই হাজার হাজার শিল্পীর প্রয়োজন হবে। শোনা যাচ্ছে, প্রায় ২০ থেকে ৫০ হাজার শিল্পী সেই রঙ্গোলি আঁকবেন।
সূত্রের খবর, বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিদের উপহার হিসাবে তুলে দেওয়া হবে হাতে বোনা পৈথানি শাড়ি । দিনরাত পরিশ্রম করে এটি তৈরি করেছেন ৪০০ জন কারিগর। নাসিকের জগদীশ জি পৈথানির শাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা এগুলি সরবরাহ করবে।
বিবাহের আসর সেজে উঠবে গুজরাটের মুন্দ্রার নীতাবেন মাটির তৈরি দেয়ালচিত্র দিয়ে। জোধপুরের বিখ্যাত বিবাজি চুড়িওয়ালার ঐতিহ্যবাহী চুড়িও মিলবে বিয়েতে। থাকছে প্রতিবন্ধী পরিবারের হাতে আঁকা চশমাও। বিয়ের অনুষ্ঠানস্থলের সৌন্দর্য এবং নান্দনিকতা বৃদ্ধি করতে দেশীয় শিল্পের সাহায্য নিয়েছে আদানি পরিবার।
জিৎ এবং আদানি পরিবারের নববধূর দিভার জন্য উপহার হিসাবে তৈরি হচ্ছে বিশেষ শাল। সেই শালের নকশার মূল দায়িত্বে থাকছেন খ্যাতনামী পোশাকশিল্পী মণীশ মলহোত্র। ফ্যামিলি অফ ডিজ়এবেল্ড নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে এই বিশেষ উপহারটি তৈরি করছেন মণীশ।
বিবাহের অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত কাচের জিনিসপত্র, প্লেট এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রে শিল্পের ছোঁয়া থাকবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিবন্ধী সদস্যদের। প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে, এমন অনেকগুলি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কারণ, জিৎ নিজে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত।
আদানি গোষ্ঠীর প্রধান গৌতমের কনিষ্ঠ পুত্র জিতের বয়স ২৭। তিনি আদানি গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ সংস্থা আদানি এয়ারপোর্টের অধিকর্তা। পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন জিৎ। পড়াশোনা শেষ করে ২০১৯ সালে গৌতম আদানির সংস্থায় যোগ দিয়েছেন।
জিতের হবু স্ত্রী দিভাও নাকি কম যান না। দিভার বাবার হিরের ব্যবসা রয়েছে। তাঁর সংস্থার নাম সি দীনেশ অ্যান্ড কো-প্রাইভেট লিমিটেড। মূলত মুম্বই এবং সুরাতেই ব্যবসা করে দিভার বাবা জৈমিনের সংস্থা। সহযোগী চিনু দোশীর সঙ্গে এই সংস্থা তৈরি করেছিলেন তিনি।
যদিও আদানি পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। সংবাদমাধ্যমেও তাঁদের খুব একটা দেখা যায় না। আদানি পরিবারের সব আচার-অনুষ্ঠান হয় লোকচক্ষুর অন্তরালে। বাণিজ্যের দুনিয়ায় জৈমিন বড় নাম হলেও তাঁর পরিবারও অন্তরালে থাকতেই পছন্দ করে।