Jeffrey Epstein

বিশেষ ওষুধ, যৌনপুতুল থেকে অদ্ভুত পোশাক! বাক্‌রুদ্ধ করবে যৌন অপরাধী এপস্টিনের অনলাইনে কেনাকাটার তালিকা

মার্কিন ধনকুবের জেফ্রি এডওয়ার্ড এপস্টিনের জন্ম আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে। সালটা ছিল ১৯৫৩। মার্কিন পুলিশের দাবি, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যৌন কেলেঙ্কারিতে ফাঁসিয়ে তাঁদের ব্ল্যাকমেল করতেন এপস্টিন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৯
Share:
০১ ২৪

সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, ধনকুবের শিল্পপতি বিল গেটস থেকে শুরু করে জনপ্রিয় পপ-গায়ক মাইকেল জ্যাকসন। যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টিনের ফাইলে একের পর এক ‘হেভিওয়েটের’ নাম জড়ানোয় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে পড়ে গিয়েছে তুমুল শোরগোল।

০২ ২৪

সেই তালিকায় রয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও? বিরোধীদের অভিযোগ, যৌন কেলেঙ্কারির যাবতীয় ‘পাপ’ ধুয়ে ফেলতে তাঁর ছবি সরিয়েছে প্রশাসন। ফলে সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া রাজনীতির জল যে ঘোলা হতে শুরু করেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

Advertisement
০৩ ২৪

এর মধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রকাশ্যে এসেছে, এপস্টিনের অনলাইনে কেনা জিনিসপত্রের তালিকা। আর সেই তালিকায় চোখ বোলালে বাক্‌রুদ্ধ হতেই হবে।

০৪ ২৪

ই-কমার্স সাইট অ্যামাজ়ন থেকে পাঁচ বছরে এপস্টিন যে জিনিসপত্র কিনেছিলেন, তার মধ্যে ১,০০৬টির ইমেল-রসিদ প্রকাশ্যে এনেছে মার্কিন বিচার বিভাগ। সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই তামাম জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে শিশুদের পোশাক থেকে শুরু করে যৌনতৃপ্তি পাওয়ার যন্ত্র-সহ আরও অনেক কিছু।

০৫ ২৪

জিনিসপত্রগুলি ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ম্যানহাটন, ওয়েস্ট পাম বিচ এবং এপস্টিনের ব্যক্তিগত দ্বীপ লিটল সেন্ট জেমসে পাঠানো হয়েছিল।

০৬ ২৪

প্রকাশ্যে আসা তালিকা অনুযায়ী, ২০১৭ সালের এপ্রিলে ‘ভ্যাজিফার্ম ভ্যাজাইনাল টাইটিং পিল’ কিনেছিলেন এপস্টিন, যা মহিলাদের যৌনাঙ্গে ব্যবহার করার একটি ওষুধ। এ ছাড়়াও কামশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য ভেষজ ওষুধও অনলাইনে আনিয়েছিলেন তিনি।

০৭ ২৪

২০১৮ সালে অণ্ডকোষ মাসাজ করার জন্য একটি ‘সোনিক প্রোস্টেট মাসাজার’ অর্ডার করেছিলেন এপস্টিন। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু আদরপুতুল এবং যৌন পণ্য অর্ডার করেছিলেন তিনি।

০৮ ২৪

রসিদ অনুযায়ী, ইউনিফর্ম প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘চেরোকি’র কাছ থেকে মেয়েদের স্কুল ইউনিফর্মও কিনেছিলেন এপস্টিন। চারটি পোশাক তাঁর আপার ইস্ট সাইড টাউনহাউসে পাঠানো হয়েছিল। মহিলাদের শর্টস এবং স্কার্টও অর্ডার করা হয়েছিল।

০৯ ২৪

২০১৯ সালের জুলাই মাসে যৌন-পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার প্রায় ১০ মাস আগে, অর্থাৎ ২০১৮ সালের অগস্টে বন্দিদের মতো অভিনব একটি কালো-সাদা পোশাকও কিনেছিলেন এপস্টিন। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডেরাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর একটি পোশাকও কিনেছিলেন এই যৌন অপরাধী।

১০ ২৪

এ ছাড়াও নথি অনুযায়ী, এপস্টিন অনলাইনে ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর পোশাক, স্নান করার টুপি এবং বেশ কিছু কেতাদুরস্ত পোশাক কিনেছিলেন। রসিদে নথিভুক্ত এপস্টিনের অন্যান্য ক্রয়ের মধ্যে রয়েছে শিশুদের পোশাক, ছোট বাচ্চাদের জন্য খেলনা। সেগুলি অর্ডার করা হয়েছিল তাঁর ম্যানহাটনের বাড়িতে।

১১ ২৪

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচ বছরে নজরদারি চালানোর জন্য ভূরি ভূরি জিনিসপত্র কিনেছিলেন এপস্টিন। বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁর বিভিন্ন বাসভবনের জন্য কমপক্ষে ১৮টি দুরবিন অর্ডার করেছিলেন। এর মধ্যে কয়েকটি অত্যাধুনিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের যোগ্যও ছিল।

১২ ২৪

এ ছাড়াও যৌন অপরাধীর অনলাইন অর্ডারের তালিকায় ছিল মিষ্টি এবং বিভিন্ন মুখরোচক খাবার। বিশেষ করে কয়েক বছরে অনেক বার কফি কেক, চকোলেট বার, ক্যান্ডি এবং কুকিজ়ের মতো জিনিসপত্র অর্ডার করেছিলেন এপস্টিন।

১৩ ২৪

কিছু রসিদ অনুযায়ী, কয়েক বছরে বেশ কিছু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জিনিসপত্রও অনলাইনে কিনেছিলেন এপস্টিন। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে কিনেছিলেন একটি সিপ্যাপ মেশিন, যা শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। স্মৃতিশক্তি এবং হজমের জন্যও বেশ কিছু ওষুধ কিনেছিলেন তিনি।

১৪ ২৪

অনলাইনে বই কেনার ইতিহাসও রয়েছে যৌন অপরাধীর এপস্টিনের। এর মধ্যে তাঁর সর্বাধিক অর্ডার করা বই ছিল তাঁর উপরেই লেখা। বইটির নাম, ‘ফিলথি রিচ: দ্য জেফ্রি এপস্টিন স্টোরি’। চলচ্চিত্র নির্মাতা উডি অ্যালেনের একাধিক জীবনীও কিনেছিলেন তিনি। এ ছাড়া বেশি কিছু বই কিনেছিলেন সুইস ব্যাঙ্ক, অমরত্ব, অ্যাডলফ হিটলারকে নিয়ে।

১৫ ২৪

মার্কিন ধনকুবের জেফ্রি এডওয়ার্ড এপস্টিনের জন্ম হয় আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে। সালটা ছিল ১৯৫৩। মার্কিন পুলিশের দাবি, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যৌন কেলেঙ্কারিতে ফাঁসিয়ে তাঁদের ব্ল্যাকমেল করতেন এপস্টিন। এ ব্যাপারে অবশ্য তিনি নিজেও একই দোষে দোষী ছিলেন। ২০০৮ সালের মধ্যে অন্তত ৪০ জন মহিলা তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন। তদন্তে জানা যায়, বেশ অল্প বয়সেই তাঁরা ধনকুবেরের ইন্দ্রিয়াসক্তির শিকার হন। ১৮ বছরে পা দেওয়ার আগেই সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁদের।

১৬ ২৪

২০০৫-’০৮ সালের মধ্যে এপস্টিনের বিরুদ্ধে স্কুলপড়ুয়াদের ফুঁসলে নিয়ে গিয়ে যৌন লালসার শিকার বানানোর অভিযোগ জমা পড়ে মার্কিন পুলিশের কাছে। ফলে কিছু দিনের মধ্যেই এপস্টিনের হাতে পরে হাতকড়া। পুলিশ তাঁকে জেলে নিয়ে গিয়েছিল। যদিও বেশি দিন তাঁকে আটকে রাখা যায়নি। অভিযোগ, প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় খুব দ্রুত গারদের বাইরে চলে আসেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, এর পর আরও বেপরোয়া ভাবে যৌন কেলেঙ্কারির ব্যবসা ফেঁদে বসেন তিনি।

১৭ ২৪

মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবি, কখনও টাকার জোরে, কখনও আবার নাবালিকাদের অপরিণতমনস্কতার সুযোগ নিতেন এপস্টিন। ভয় দেখিয়ে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁদের সঙ্গে সহবাস করতেন তিনি। তাঁর সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া মেয়েদের হেভিওয়েটদের হাতে তুলে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতেন এপস্টিন। সেই তালিকায় নাম আছে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ও ল্যারি পেজ়, পপ-গায়ক মাইকেল জ্যাকসন, ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স অ্যান্ড্রু এবং হলিউড তারকা লিয়োনার্দো ডি ক্যাপ্রিও-সহ আরও অনেকের।

১৮ ২৪

এপস্টিনের এই কেলেঙ্কারি বেশি দিন চলেনি। ফের তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায় মার্কিন পুলিশ। সেখানে ২০১৯ সালে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় তাঁর। জেল কর্তৃপক্ষ এবং তদন্তকারীরা জানান, আত্মহত্যা করেছেন এপস্টিন। যদিও তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠেছিল। এপস্টিনের মৃত্যুর সময় জেলের যাবতীয় সিসিটিভি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর মৃত্যুর পর সেগুলি ফের কাজ করা শুরু করেছিল। পুলিশ অবশ্য একে কাকতালীয় বললেও ধোঁয়াশা থেকেই গিয়েছে।

১৯ ২৪

এপস্টিনের সঙ্গেই গ্রেফতার হন তাঁর প্রেমিকা গিজ়লাইন ম্যাক্সওয়েল। বর্তমানে আমেরিকার জেলে সাজাপ্রাপ্ত বন্দি হিসাবে রয়েছেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবি, কমবয়সি তরুণীদের ফাঁসানোর কাজটা প্রথমে করতেন ম্যাক্সওয়েলই। ‘ক্লাইম্যাক্স’ পর্বে আবির্ভাব হত এপস্টিনের। এ বছর প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প দ্বিতীয় বার শপথ নিতেই বিচার বিভাগে পড়ে থাকা এপস্টিন ফাইল প্রকাশ করার দাবি জোরালো হতে থাকে। ‘পোটাস’ (প্রেসিডেন্ট অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস) প্রথমে বিষয়টিতে গুরুত্ব না দিলেও পরে সংশ্লিষ্ট ফাইল জনসমক্ষে আনার ব্যাপারে আপত্তি করেননি, খবর সূত্রের।

২০ ২৪

চলতি বছরের ১৯ ডিসেম্বর এপস্টিনের সঙ্গে সম্পর্কিত ফাইলগুলির আরও কিছু অংশ প্রকাশ্যে আনে আমেরিকার বিচার বিভাগ বা ডিওজে (ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস)। সেখানে থাকা ছবিগুলি জনসমক্ষে চলে আসতেই যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে হইচই পড়ে যায়। দেখা যায়, তরুণী লাস্যময়ীদের সঙ্গে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ধনকুবের শিল্পপতি-সহ একাধিক হেভিওয়েটরা। অপ্রাপ্তবয়স্করাও যে তাঁদের লালসার শিকার হয়েছে, এপস্টাইন ফাইল প্রকাশে তা-ও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে শুরু করে।

২১ ২৪

এ-হেন পরিস্থিতিতে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালেন বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হাউস ওভারসাইট কমিটির সদস্যেরা। ২০ ডিসেম্বর এক্স হ্যান্ডলে (আগে নাম ছিল টুইটার) একটি বিস্ফোরক পোস্ট করেন তাঁরা। সেখানে বলা হয়, ‘‘এপস্টিন ফাইলের ৪৬৮ নম্বর নথিকে বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কারণ, ওটা থাকলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কুকীর্তি ফাঁস হয়ে যেত।’’ তাঁদের ওই পোস্টের পর ফুঁসে ওঠে নেটাগরিকদের একাংশ। সমাজমাধ্যমে ওঠে সমালোচনার ঝড়।

২২ ২৪

২০ তারিখ এই ইস্যুতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই গণমাধ্যমটির দাবি, হঠাৎ করে ওয়েবসাইট থেকে উধাও হয়ে যাওয়া অন্তত ১৬টি ফাইলের মধ্যে ট্রাম্পের ছবি ছিল। এর পরই সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দেন নেটাগরিকদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘কোন বিষয়টা ধামাচাপা দিতে চাইছে প্রশাসন? আমেরিকার উন্নতির জন্য স্বচ্ছতার প্রয়োজন।’’ অন্য দিকে, এ ব্যাপারে নতুন করে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে তাঁর প্রশাসনও।

২৩ ২৪

বিশেষজ্ঞদের দাবি, এপস্টিন ফাইলে ট্রাম্পের নাম জড়ানোর নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। অতীতে বহু বার প্রকাশ্যেই এপস্টিনকে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। যদিও সেই ‘বন্ধু’র জন্যই যে অপ্রাপ্তবয়স্ক মহিলারা যৌন লালসার শিকার হয়েছে, তা তিনি জানতেন না বলে স্পষ্ট করেছেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের ওই বিবৃতির পরেও কড়া প্রশ্নবাণে তাঁকে বিদ্ধ করতে ছাড়ছেন না বিরোধী ডেমোক্র্যাটেরা। এতে ট্রাম্পের অস্বস্তি যে বাড়ছে, তা বলাই বাহুল্য।

২৪ ২৪

যদিও এক্স হ্যান্ডলে করা পোস্টে ডিওজে বলেছে, ‘‘আইন মেনে সংশ্লিষ্ট নথি জনসমক্ষে আনা হয়েছে। কোনও রাজনীতিকের নাম বদল করা হয়নি। কারও নাম সংশোধনও করা হয়নি। যেহেতু এঁরা পরিস্থিতির শিকার, না কি ভুক্তভোগী, না কি অপরাধী সেটা প্রমাণ হয়নি, তাই নাম পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।’’ কিন্তু, তার পরেও ডেমোক্র্যাটেরা ট্রাম্পের ছবি সেখান থেকে সরানোর অভিযোগ করায় চড়তে শুরু করেছে রাজনীতির পারদ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement