শখের জন্য মডেলিং করতেন। অভিনয়কে পেশা হিসাবে বেছে নেবেন তা কোনও দিন কল্পনাও করতে পারেননি হৃষিতা ভট্ট। কিন্তু ভাগ্যের স্রোত তাঁর জীবন অন্য দিকে বয়ে নিয়ে যায়। হৃতিক রোশন, অভিষেক বচ্চন থেকে শুরু করে টলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেতা জিতের সঙ্গেও অভিনয় করেছেন হৃষিতা। কিন্তু হঠাৎ করেই বড় পর্দা থেকে ‘উধাও’ হয়ে যান তিনি।
১৯৮১ সালের মে মাসে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম হৃষিতার। বাবা-মায়ের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। মাত্র সাত বছর বয়স থেকে কত্থকের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছিলেন হৃষিতা। কম বয়সে ক্যারাটে শেখাও শুরু করেছিলেন তিনি।
মুম্বইয়ের একটি স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল হৃষিতাকে। স্কুলে পড়াকালীন বাস্কেটবলের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন তিনি। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেই মডেলিং করতে শুরু করেছিলেন হৃষিতা।
উচ্চশিক্ষার জন্য মুম্বই ছেড়ে লন্ডনে চলে গিয়েছিলেন হৃষিতা। স্নাতক হওয়ার পর আবার দেশে ফিরে এসেছিলেন। শখের জন্য মডেলিং করতে শুরু করেছিলেন হৃষিতা। সেই সময় একাধিক বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেখান থেকেই মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি।
১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় ‘আঁখো মে তেরা হি চেহারা’ গানটি। এই গানে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল বলি অভিনেতা শাহিদ কপূরকে। তখন মাত্র ১৭ বছর বয়স শাহিদের। গানের এই ভিডিয়োটি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। শাহিদের সঙ্গে এই গানের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন হৃষিতা। তার পর দু’জনের কাছেই বলিপাড়া থেকে প্রস্তাব আসতে শুরু করে।
২০০১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘অশোকা’ নামের ইতিহাসনির্ভর হিন্দি ছবি। এই ছবিতে শাহরুখ খান এবং করিনা কপূর খানের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন হৃষিতা। ছবিতে শাহরুখের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কেরিয়ারের প্রথম ছবিতে শাহরুখের সঙ্গে অভিনয়। তবুও হৃষিতার কেরিয়ারে তা বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি।
বক্স অফিসে ‘অশোকা’ ছবিটি তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। তার পর ‘দিল ভিল প্যার ভ্যার’, ‘শরারত’, ‘হাসিল’, ‘অব তক ছপ্পন’, ‘অনকহি’, ‘জিজ্ঞাসা’, ‘পেজ থ্রি’, ‘হে বেবি’র মতো বহু হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন হৃষিতা। কিন্তু আখেরে লাভ হয়নি তাঁর। বলিপাড়ায় পরিচিতি তৈরি করতে পারছিলেন না তিনি।
হিন্দি ভাষার ছবির পাশাপাশি তাই বাংলা, মরাঠি, উর্দু, কন্নড়, তেলুগু ভাষার ছবিতেও অভিনয় করা শুরু করেছিলেন হৃষিতা। ২০০৭ সালে ‘বিধাতার লেখা’ ছবিতে বাঙালি অভিনেতা জিতের সঙ্গেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও ইন্ডাস্ট্রিতেই স্থির হতে পারেননি হৃষিতা।
২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শকল পে মত যা’ নামের হিন্দি ছবির প্রযোজনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন হৃষিতা। বলিপাড়ার নামী অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করলেও অভিনয়জগতে জনপ্রিয় হতে পারেননি তিনি।
এখনও পর্যন্ত ২৫-এর কাছাকাছি ছবিতে অভিনয় করেছেন হৃষিতা। আপাতত বড় পর্দা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন তিনি। ২০২২ সালের পর আর বড় পর্দায় দেখা যায়নি তাঁকে।
বড় পর্দা ছেড়ে ওটিটির পর্দায়ও কেরিয়ার গড়ার চেষ্টা করেছিলেন হৃষিতা। ২০২০ সালে ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া ক্রাইম ঘরানার ওয়েব সিরিজ় ‘লালবাজার’-এ অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার পর ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও দেখা পাওয়া যায়নি হৃষিতার।
বর্তমানে সংসার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন হৃষিতা। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে বিয়ে করেছেন তিনি। তাঁর স্বামীর নাম আনন্দ তিওয়ারি। অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত নন আনন্দ।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, রাষ্ট্রপুঞ্জের শীর্ষস্থানীয় কর্মী আনন্দ। নয়াদিল্লিতে ঘনিষ্ঠবৃত্তের উপস্থিতিতে হৃষিতার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন তিনি।
গোয়ার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হৃষিতা। ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০২২ সালে সেই চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজক কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
বড় পর্দা থেকে দূরে সরে গেলেও সমাজমাধ্যমে হৃষিতার অনুরাগীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় অভিনেত্রীর অনুগামীর সংখ্যা ১০ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।