সহ-পরিচালক হিসাবে কেরিয়ার শুরু করলেও নব্বইয়ের দশকের শেষের দিক থেকে অভিনয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন অরশদ ওয়ারসী। সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে মুন্নাভাই-সার্কিটের জুটির রসায়ন অনবদ্য ভাবে বড়পর্দায় তুলে ধরেন তিনি। তার পর থেকেই বলিপাড়ায় রাতারাতি কৌতুকাভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অরশদ। বলিপাড়ার এক অভিনেত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন তিনি।
১৯৮৭ সালে মহেশ ভট্টের ‘কাশ’ ছবিতে সহ-পরিচালনার মাধ্যমে কেরিয়ার শুরু অরশদের। ১৯৯৩ সালে ‘রূপ কি রানি চোরো কা রাজা’ ছবির একটি গানের কোরিয়োগ্রাফি করেন তিনি। তার পর থেকেই অভিনয়যাত্রা শুরু হয় অরশদের।
১৯৯৬ সালে বড়পর্দায় অভিনয় শুরু করেন অরশদ। ২০০৩ সালে ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবিতে সার্কিটের চরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। তার পর অরশদের কেরিয়ারের ঝুলিতে ভরে যায় অসংখ্য কমেডি ঘরানার ছবি। তবে অভিনেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই বিয়ে সেরে ফেলেছিলেন তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ১৯৯১ সালে এক কলেজে নাচের প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অরশদ। সেই কলেজে গিয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল মারিয়া গোরেত্তির। প্রথম আলাপ ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্কে গড়িয়ে যায়। কয়েক বছর সম্পর্কে থাকার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
অরশদ এক সাক্ষাৎকারে জানান, কলেজে মারিয়ার নৃত্যশৈলী দেখে তাঁকে নিজের নাচের দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন অভিনেতা। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি হননি মারিয়া। তিন মাস পর এক বন্ধু মারফত আবার মারিয়ার সঙ্গে দেখা হয় অরশদের। তার পর অভিনেতার নাচের দলে যোগ দেন মারিয়া।
মারিয়া এবং অরশদের নাচের দল দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করতে যেত। মারিয়ার মনের কথা কী ভাবে জানতে পেরেছিলেন সেই প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, ‘‘আমরা দুবাইয়ে নাচের অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলাম। মারিয়াকে বার বার বিয়ের প্রস্তাব দিতাম আমি। কিন্তু ও সে কথা উড়িয়ে দিত। তাই ওর মনের কথা বার করার জন্য আমি একটা ফন্দি এঁটেছিলাম।’’
অরশদ জানান, তিনি মারিয়ার ঠান্ডা পানীয়ের গ্লাসে তাঁকে না জানিয়ে মদ মিশিয়ে দিয়েছিলেন। মদ মেশানো পানীয় খেয়ে নেশা হয়ে যায় মারিয়ার। মদের নেশায় অরশদকে মনের কথা জানিয়ে দেন মারিয়া।
বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অরশদের সঙ্গে পরিবারের আলাপ করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন মারিয়া। কিন্তু প্রথমে বিয়েতে সম্মতি দিতে চায়নি মারিয়ার পরিবার।
অরশদের দাবি, মারিয়ার পরিবারের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সদস্যেরা ছিলেন ধর্মভীরু। অরশদ মুসলিম হওয়ায় আপত্তি জানিয়েছিলেন তাঁরা। অন্য দিকে, সেই সময় অরশদের বাঁধাধরা কোনও চাকরি ছিল না। অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তখনও তিনি তেমন পরিচিতি গড়তে পারেননি। বাড়ির মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন সকলে।
অরশদ জানান, তিনি মারিয়াকে চার বার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রথম তিন বার মারিয়া অসম্মতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু চতুর্থ বার আর অরশদের প্রস্তাব ফেরাতে পারেননি মারিয়া। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান তিনি।
মারিয়ার পরিবারও অরশদের সঙ্গে মেলামেশা করে বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি ভাল মনের মানুষ। অরশদকে বিয়ে করলে মারিয়া যে আদতে সুখে থাকবেন তা উপলব্ধি করে মারিয়ার পরিবার। অবশেষে অরশদ এবং মারিয়ার বিয়েতে মত দেন সকলে।
১৯৯৯ সালে খ্রিস্টান এবং মুসলিম মতে বিয়ে সারেন অরশদ এবং মারিয়া। বিয়ের পর দুই সন্তানের জন্ম দেন মারিয়া। কিন্তু দাম্পত্যের ১৪ বছর পর তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
অরশদের মতে, নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা গড়ে তোলার কাজ নিয়ে তিনি এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, স্ত্রী-সন্তানদের সময়ই দিতে পারেননি। প্রায় এক বছর কাজ নিয়েই ছিলেন তিনি। এর প্রভাব পড়েছিল অভিনেতার সংসারে।
২০১০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘হম তুম অউর গোস্ট’। অরশদের প্রযোজনা সংস্থার তরফে এই ছবির শুটিংয়ের জন্য লন্ডন যাওয়া হয়েছিল। এই ছবির অভিনেত্রী ছিলেন দিয়া মির্জ়া। দিয়ার বিপরীতে অভিনয় করেন অরশদ।
কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে, লন্ডনে ছবির শুটিং চলাকালীন দিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন অরশদ। বলিউডের দুই তারকা বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন— সে খবরও চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। স্বামীর পরকীয়ার কথা কানে যায় মারিয়ারও। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে অশান্তিও হয়।
পরকীয়া প্রসঙ্গে অরশদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘মারিয়া খুবই বুঝদার। তবুও দিয়ার সঙ্গে পরকীয়ার কথা শুনে দুঃখ পেয়েছিল ও। পরে ও নিজেই বুঝতে পারে যে, এগুলো সবই রটনা। এই গুজবের প্রভাব আমার পরিবারে পড়ুক তা আমি একেবারেই চাইনি।’’
অন্য দিকে দিয়া প্রসঙ্গে অরশদ বলেন, ‘‘দিয়া খুব বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। আমরা খুব ভাল বন্ধু। ওকে ‘তৃতীয় ব্যক্তি’ হিসাবে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যেন আমাদের সংসার ভাঙার নেপথ্যে দিয়া রয়েছে। মারিয়া এবং দিয়া দু’জনেই সত্যি জেনে আমার উপর ভরসা রেখেছিল। তবে, একই সঙ্গে দু’জনকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছিল।’’
২০২৪ সালে ২৫তম বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্যাপন করেন অরশদ এবং মারিয়া। সেই বছর আইনি বিয়েও সারেন তাঁরা। চলতি বছরে ‘জলি এলএলবি ৩’, ‘ভগবত: চ্যাপ্টার ১— রাক্ষস’ এবং ‘মস্তি ৪’ ছবিগুলিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে অরশদকে।